আদালত বললে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে দেশে ফেরানোর দাবি জোরালো হচ্ছে।
হাসিনা দেশ ছাড়ার পর এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে, যার অধিকাংশই হত্যা মামলা।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে সম্প্রতি রয়টার্স টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেহেতু অনেক মামলা রয়েছে, সেহেতু বাংলাদেশ তাকে হস্তান্তরের অনুরোধ করতে পারে। তবে সেটি হলে ভারতের জন্য বিব্রতকর হবে।
সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি বলেছি যে, যদি লিগ্যাল প্রসেস থেকে প্রশ্ন আসে তাহলে আমরা তো ফেরত চাইতেই পারি। যদি আইন আদালত আমাদের বলে তাকে ফেরত আনার জন্য, তখন সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।”
শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতেই হবে এমন কোনো বিষয় আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভারত ফেরত দেবে কিনা সেটা তাদের বিষয়। চুক্তি আছে আমাদের, চাইলে দিতে পারার কথা। এখানে লিগ্যাল প্রসেস থাকে। আমি জানি না সেটা কীভাবে হবে। যদি লিগ্যাল সিস্টেম চায় তাকে ফেরত আনতে হবে, তাহলে অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব।”
প্রথমে শেখ হাসিনা ভারতে সংক্ষিপ্ত সময় অবস্থান করে তৃতীয় কোনো দেশে যাবেন বলে জানা যায়। যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশে তার রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন নাকচ করা হয়েছে বলেও খবর আসে।
তবে এখনো তার অন্য কোনো দেশে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায়, কীভাবে আছেন, তা নিয়ে ভারতও আর মুখ খোলেনি। এরই মধ্যে শেখ হাসিনার কূটনৈতিক পাসপোর্টও বাতিল হয়েছে।
ভারতে শেখ হাসিনা কীভাবে অবস্থান করছেন, এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা বরং ভারতীয়দের জিজ্ঞেস করুন। লাল পাসপোর্ট অটোম্যাটিকালি বাতিল হয়েছে। এটা ভারতীয়দের জিজ্ঞেস করুন, কী স্ট্যাটাসে তিনি সেখানে আছেন।”
হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় কিছু প্রকল্পের কাজ থেমে যাওয়া এবং ভারতীয় কর্মীদের দেশে চলে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এখানে তো আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একটু সমস্যা ছিল, সেটা অস্বীকার করে লাভ নেই। সেটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পেরেছি। এখন আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
“এমন হতে পারে যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন তারা হয়ত পুরোপুরি নিরাপদ বোধ করছেন না।
কিন্তু সবকিছু নরমাল হলে তারা নিরাপত্তা বোধ করবেন এবং তারাও আসবেন। কারণ চলমান প্রকল্পগুলো তো আমাদের শেষ করতে হবে।”
সরকার পতনের আগে-পরে দেশে ভারতবিরোধী এক ধরনের মনোভাব তৈরি হয়েছে, ফলে ভারতীয় যারা বাংলাদেশে কাজ করেন তারা আতঙ্কের মধ্যে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এক ধরনের ভীতির মধ্যে আছেন সেটি বলি, আতঙ্ক না বলি। সেই ভীতি থেকে আশা করি তারা বেরিয়ে আসতে পারবেন।”
ভারতের সঙ্গে সর্বশেষ সই হওয়া সমঝোতা স্মারকগুলোর ভষ্যিৎ সম্পর্কে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “এমওইউ চূড়ান্ত চুক্তি না। কাজেই এখানে আমাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়েছে কিনা সেটি তো আমরা দেখতেই পারি। সেই অনুযায়ী স্বার্থ রক্ষা করে যা করা দরকার, আমরা করব।”
রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো সমঝোতা হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মিয়ানমারে তো অভ্যন্তরীন সেটেলমেন্টই হচ্ছে না, সেখানে আমরা এখনই কেন প্রত্যাশা করব?”