শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই নেতার মধ্যে বিরোধের খবর নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সেই শাস্তির কথা বলেছেন শামীম।
নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের এই সদস্যের দাবি, আইভীর সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই, দলেও কোনো বিভেদ নেই; আইভী তার ‘ছোট বোন’। আর ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে।
“তবে শাস্তি আমি আইভীকে একটা দেব। শাস্তিটা হবে ২২ তারিখের পরে। জয়লাভ করার পর নেত্রীর কাছে যাব, আপনাদেরও বাইরে রাখব। চিন্তা কইরেন না। আমি আইসক্রিম খেতে খুব পছন্দ করি। ওকে ফাইন করব। এবং বলব আমাকে প্রচুর পরিমাণ আইসক্রিম খাওয়াও। বিকজ আই লাভ আইসক্রিম। আমাকে ওকে আইসক্রিম খাওয়াতে হবে।”
শামীম ও আইভীর এই দ্বন্দ্ব পারিবারিক উত্তরাধিকার। ওসমানদের বিরোধী শিবির থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আইভীর বাবা আলী আহমেদ চুনকা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে চলে যান। তখন প্রবাস থেকে ফিরে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন আইভী। ২০০৯ সালে শামীম দেশে ফেরার পর দুজনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়।
২০১১ সালের নির্বাচনে দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে আইভী এই শামীমকে হারিয়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হন। এরপর বিভিন্ন ঘটনায় তাদের বিরোধী চরমে ওঠে।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আইভীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়ার বিরুদ্ধেও শামীম সোচ্চার ছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর। এ কারণে নভেম্বরের শেষ দিকে গণভবনের এক বৈঠকে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে কঠোরভাবে সতর্ক করেন বলে একাধিক জ্যেষ্ঠ নেতা সে সময় নিশ্চিত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে শামীম ওসমান বলেন, আইভীর প্রতি ‘রাগ, কষ্ট, দুঃখ যা ছিল’- শাহজালালের মাজারে গিয়ে নামাজ পড়ার পর সেসব ‘ধুয়ে মুছে গেছে’।“কথা বলছে… কথা বলছে। ও একলা বলছে? আমি কি বলি নাই? ও কি আমাকে একলা কথা বলে কষ্ট দিয়েছে? আমার কথাতেও সে কষ্ট পেয়েছে। যদি ও একটুখানি ভুল করে, আমি বেশি ভুল করেছি। কারণ আমি ওর বড় ভাই। আমি ওর বড় ভাই। আর রাজনীতি করতে গেলে মন অনেক বড় করতে হয়।
“আইভীর প্রতি আমার কোনো রাগ, দুঃখ কিচ্ছু নাই। বিকজ শি ইজ মাই ইয়ংগার সিস্টার। তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, আমার শেখ হাসিনা, আমার নেত্রী, আমার আদর্শ, আমার মা যে নির্দেশ দিয়েছেন, এর বাইরে কোনো চিন্তার অবকাশ আমার ছিল না, আজও নাই, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবে না।”
তারা ‘ভাইবোন’ ছিলেন এবং এখনও আছেন দাবি করে শামীম বলেন, “এক পরিবারে তিনটা ভাই থাকলে দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয়। আর শেখ হাসিনার পরিবার তো ছোট্ট পরিবার না। দুই কোটি কর্মীর পরিবার হচ্ছে শেখ হাসিনার পরিবার। এখানে তো ঝগড়াঝাটি, খারাপ কথা বলা, রাগ করা, অভিমান করা হতেই পারে। তবে সেটা ওই ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য আমরা বৃহত্তর স্বার্থ ত্যাগ করব না। তাই আমি আশা করি, আমরা সব কিছু ওভারকাম করে নৌকা অবশ্যই জয়লাভ করবে।”
আইভীর জন্য শাড়িসংবাদ সম্মেলনে শামীম বলেন, এমপি হওয়ায় নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তিনি নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে তার দলের প্রার্থী আইভীর পক্ষে প্রচারে নামতে পারছে না। তবে ‘ভাই হিসেবে’ সাহস দেওয়ার জন্য একটি কৌশল তিনি বের করেছেন।
“আমি চিন্তা করলাম, নারায়ণগঞ্জে একটি প্রসিদ্ধ দোকান আছে, এটার নাম হচ্ছে বিশ্ব রঙ। এই রঙের যারা আছে, তাদেরকে আমি অনুরোধ করেছি, যে আমাকে দুইটা শাড়ি এমনভাবে বানিয়ে দাও, যাতে শাড়ি দুইটার মধ্যে নৌকা থাকে। এই একটা শাড়ি, আরেকটা শাড়ি আমার বোন আইভীর জন্য।
“এই নৌকা মার্কা শাড়ি দুটো পরে আমার আইভী যখন বিভিন্ন এলাকায় যাবে, তখন সে বুঝবে যে- ‘আমার ভাই আমার সাথে না থাকলেও আমার ভাইয়ের দোয়া আমার সাথে আছে’।”
এমপি হওয়ায় আচরণবিধির কারণে তিনি আইভির পক্ষে সরাসরি ভোটও চাইতে পারেন না।
সে বিষয়টি উল্লেখ করে শামীম বলেন, “কিন্তু দোয়া তো আমি চাইতেই পারি। আশা করি আপনারা সবাই দোয়া করবেন, যাতে সঠিক প্রার্থী পাস করে।”