“সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই আমরা থাকব। বেশিও না কমও না,” বলেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদলে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে আসা অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতির মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে; নাটকীয়তার আরেক দিনে আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে সরে যেতে হয়েছে প্রধান বিচারপতিকে, পদ ছেড়েছেন উপাচার্যসহ আরও অনেকে।
সদ্য দায়িত্ব নেওয়া মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের যে জনদাবি উঠেছে, দায়িত্ব নেওয়ার তিন দিনের মাথায় সেটি এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও এসেছে উপদেষ্টাদের কাছ থেকে।
একই সঙ্গে দেশের সর্বোচ্চ বিচারালায়ে নাটকীয় এক দিনে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান; সরে যেতে হয়েছে আরও পাঁচ বিচারপতিকে। এদিন সরকারের বিভিন্ন দফতরে পদত্যাগ আর পরিবর্তনের হিড়িক পড়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আল্টিমেটামের মধ্য তাদের চাওয়া অনুযায়ী দিন শেষে নতুন বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সৈয়দ রেফাত আহমেদকে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠ এই বিচারপতি দেশের পঞ্চবিংশতিতম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন; যিনি ওবায়দুল হাসানের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন রোববার তার শপথ পড়াবেন বলে খবরে এসেছে।
আগের দিন গভর্নর এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের ধারা অব্যাহত ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও।
এমন পালাবদলের মধ্যে পরিবর্তন ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তর্বর্তী নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কারের সুফল দেশের মানুষ পাবে।
কোটা সংস্কারকে ঘিরে আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা রংপুরে নিহত আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে ইউনূস বলেন, “আবু সাঈদ চমকে দিয়েছে বিশ্বকে। তার গুলি খাওয়ার যে ছবি মানুষ দেখলো, এরপর মানুষকে আর থামানো যায়নি। তোমরা দ্বিতীয় বিজয় এনে দিয়েছো। দেশের মানুষ এ বিজয়ের সুফল ভোগ করবে।”
শনিবার দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট রুমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন তিনি।
ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যে যাত্রা শুরু হয়েছে, তার সামনে আছে বন্ধুর পথ। প্রত্যাশার চাপ আর কঠিন বাস্তবতার মধ্যে মেলবন্ধন কীভাবে হবে, সেই প্রশ্নও আছে।
তবে বিজয়ের সুফল পেতে কতদিন দায়িত্বে থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট না করলেও এদিন সচিবালয়ে সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, “আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতাকে সুখকর না। আমি বলতে চাই, সব প্রতিষ্ঠানই সংস্কার করা হবে।”
“সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা এবং নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষা মধ্যে সমন্বয় করে যতদিন থাকা দরকার ততদিনই আমরা থাকব। বেশিও না কমও না।”
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, “আপনাদের দুইটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা থাকবে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন। আবার এদেশের সাধারণ মানুষের যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, সেখান থেকে প্রত্যাশা থাকবে এই সরকার যেন জরুরি কিছু সংস্কার করে যায়।”
নির্বাচন কমিশনেও সংস্কারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা তো আপনারা জানেন। এখানে যদি ‘থরো ওভারহলিং’ না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে তারা তো আবার এই প্রতিষ্ঠানকে সেইভাবে ব্যবহার করবে।”
সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা যে দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধেও কঠোর হওয়ার বার্তা দিচ্ছেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
শনিবার মতিঝিলের শিল্পভবনে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “জনগণের এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, এত মানুষের রক্তের উপর দিয়ে আমরা দায়িত্ব এসেছি। এখানে দুর্নীতির ব্যাপারে আমাদের কঠোর হওয়া ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই। অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে থেকে আমরা ছাত্র-জনতার ম্যান্ডেট পূরণে সাধ্যমত চেষ্টা করব।”
পদত্যাগ আর পরিবর্তনের হিড়িক
ক্ষমতার পালাবদলের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার তৃতীয় দিনে যেসব পদে পদত্যাগ বা পরিবর্তনের ঘোষণা এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ।
বিচারালয়ের শীর্ষ পদ থেকে সরে যাওয়ার দাবি প্রবল হওয়ার পর শনিবার পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এক সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত তার বিচার অঙ্গনের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল।
প্রধান বিচারপতির পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারক পদত্যাগ করেন। আন্দোলনের মুখে দুপুরে তারা পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানান।
পরে রাতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম ও বিচারপতি কাশেফা হোসেনের পদত্যাগের প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়।
আদালত ঘিরে নাটকীয় এক দিন
শনিবার সকাল থেকে দেশের উচ্চ আদালতকে ঘিরে দিনভর নাটকীয় ঘটনার সংবাদ আসতে থাকে।
প্রধান বিচারপতি সকালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের নিয়ে ফুলকোর্ট সভা আহ্বান করলেও আন্দোলনকারীরা ঘেরাওয়ের ডাক দেওয়ার পর তা স্থগিত করা হয়।
তাদের দাবি মানা না হলে প্রধান বিচারপতির বাসভবন ঘেরাওয়েরও হুঁশিয়ারি দেন কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঘিরে গড়ে ওঠা এ প্ল্যাটফর্মের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
শিক্ষার্থীদের জমায়েতের পর এক সময় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেছেন বলে ফেইসবুকে এক ভিডিও বার্তায় খবর দেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও বিচার উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের প্রধান বিচারপতি কিছুক্ষণ আগে পদত্যাগ করেছেন। উনার পদত্যাগপত্র ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছেছে।
“এটা উপযুক্ত প্রসেসিংয়ের জন্য আমরা কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেব। এবং আমি আশা করব যে এটা খুব দ্রুত, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”
২০২৪ সেপ্টেম্বরে দেশের চতুর্বিংশতিতম প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে আসা ওবায়দুল হাসানের ২০২৬ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত বিচার অঙ্গনের নেতৃত্বে থাকার কথা ছিল।
বেলা দেড়টার দিকে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেলে ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা হাই কোর্ট এলাকা ছেড়ে চলে যান।
ছাত্র-জনতার তুমুল গণ আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কারের যে দাবি উঠেছে, তার ধাক্কায় মেয়াদপূর্তির দেড় বছর আগেই প্রধান বিচারপতিকে সরে যেতে হল।
ঘটনাবহুল এ দিনের পর রাতে আপিল বিভাগের আরও পাঁচ বিচারপতি পদত্যাগ করেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের খবরের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি মো.আশফাকুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি করার খবর আসে। তখন সেটি প্রত্যাখ্যান করে স্লোগান দিতে থাকেন আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরে শিক্ষা চত্বরে বিক্ষোভ করতে থাকা আন্দোলনকারীরা।
প্রথমে শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদকে প্রধান বিচারপতি ঘোষণার দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। পরে সময় বেঁধে দেওয়া হয় রোববার সকাল ৯টা।
সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করেছেন। আমরা জেনেছি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে মো. আশফাকুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, গত পনের বছর তিনি হাসিনাকে সার্ভ করেছেন। তাই আমরা এই নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করছি।”
সরে গেলেন ঢাবি উপাচার্য
পটপরিবর্তনের মধ্যে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
গত ১৫ অক্টোবর অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান। ৪ নভেম্বর তিনি দায়িত্ব বুঝে নেন।
এছাড়া, ঢাবির রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার আগাম অবসরের (আর্লি রিটায়ারমেন্ট) আবেদন করেছেন বলে জানান মাকসুদ কামাল।
এর আগে বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমানসহ ১৩ জন সহকারী প্রক্টর পদত্যাগ করেন।
এদিন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মো. হারুন-উর-রশীদ আসকারীও পদত্যাগ করেছেন; যিনি ২২ দিন আগে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
‘উদ্ভূত পরিস্থিতি ও ব্যক্তিগত কারণে’ শনিবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
রশীদ আসকারী গত ১৮ জুলাই বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আলোচিত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদও এদিন পদত্যাগ করেন।
শনিবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে।
ফরিদ উদ্দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ২১ অগাস্ট। তবে মেয়াদ শেষের এক বছর ১১ দিন আগেই পদত্যাগ করলেন তিনি।
২০১৭ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শাবিপ্রবির ভিসি হিসেবে নিয়োগ পান।
এদিন পরিবর্তন করা হয় বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও। আগের চেয়ারম্যান এয়ার কমডোর সাদিকুর রহমান চৌধুরীকে সরানোর পর দায়িত্ব পান এয়ারভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
ক্রীড়া থেকে শিল্প সবখানেই সংস্কারের আহবান
দেশজুড়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও সংস্কারের যে ডাক শোনা যাচ্ছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড- বিসিবিরও নামও রয়েছে।
কোচ ও বিশ্লেষক নাজমুল আবেদীন শনিবার মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বাইরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সংস্কারের জোর দাবি জানিয়ে বলেন, “আমি যেহেতু খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি, আমার মনে হয় না, বিসিবি খুব সুশৃঙ্খল একটা সংগঠন। বাইরে থেকে অনেকেই হয়তো চাকচিক্য দেখে মনে করে, বিসিবি দারুণ একটা সংগঠন।
“এদের যে সুযোগ ছিল, সেটার সর্বোচ্চ ব্যবহার মোটেও হয়নি। সেটা অনেকগুলো কারণেই হয়নি। অনেকের ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণেই হয়নি। তাই আমার মনে হয় এখানে পরিবর্তন আনা দরকার।”
এখানে কাজের যে ধরন, ভেতরে-ভেতরে বিশৃঙ্খল কাজ হয়। সেটা পরিবর্তন আনা দরকার, বলেন তিনি।
সংস্কারের দাবি উঠেছে শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনেও। ভাস্কর্য, শিল্পস্থাপনার ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি সংস্কারের দাবি নিয়ে ‘গণহত্যা ও নিপীড়ন বিরোধী শিল্পী সমাজ’র ব্যানারে শনিবার শাহবাগে সমাবেশ করেছেন সংগীত শিল্পী, আলোকচিত্রী, লেখক ও কবিরা।
জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, পারফরমেন্স শিল্পী, গবেষক, স্থপতি ও শিল্পসংগঠকরাও অংশ নেন।
সংস্কারের অংশ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ভবিষ্যতে রাজনীতির সঙ্গে এই মেডিকেল কলেজের কোনো শিক্ষার্থীর কোনো সংশ্লিষ্টতার খোঁজ মিললে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
শনিবার মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে উপাধ্যক্ষ ডা. দেবেশ চন্দ্র তালুকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষা নেওয়ায় আমি মিটিংয়ে ছিলাম না। তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। প্রিন্সিপাল স্যার জানিয়েছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত।”
‘খুব কঠিন সময়’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সময়টা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের আরেক উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
পুলিশ উধাও হয়ে যাওয়ার পর নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করাকেই অগ্রাধিকারের তালিকায় প্রথমে রেখেছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “একটা ‘ক্রান্তিলগ্নে’ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে; খুব কঠিন সময়। এখন আমাদের তাৎক্ষণিক সম্পৃক্তি হল আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। এটা যদি ঠিক না করতে পারি তাহলে অন্যগুলো থেমে যাবে।
“আমরা চাচ্ছি অর্থনীতির গতি যাতে আস্তে আস্তে সচল করতে পারি। সবাইকে উজ্জীবিত করতে পারি।”
শাহবাগে সনাতন ধর্মালম্বীদের অবস্থান
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার দিনই দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ সদস্যদের অনেকে হতাহত হন। সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, আওয়ামী লীগ অফিস, দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে ভাঙচুর ও বেশুমার অগ্নিসংযোগের খবর আসছে।
হিন্দুদের উপর ‘হামলার’ প্রতিবাদে ফের উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজধানীর শাহবাগ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ঢাকার শাহবাগ অবরোধ করে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মত বিক্ষোভ করেছে সনাতন ধর্মালম্বীরা।
এদিন বিকাল ৩টার পর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধরা। আগের দিন শুক্রবারও প্রায় চার ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়ে এদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে প্রবাসীদের সংগঠন ‘ইউনাইটেড হিন্দুজ অব ইউএসএ’।
শুক্রবার বিকালে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের কাছে হ্যামার্সজোল্ট পার্কে এ সমাবেশ করেন তারা।
হিন্দু নিপীড়ন বন্ধে সমাবেশ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ও সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন আয়োজকরা।
সেই সঙ্গে একই দাবিতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর দাবি, সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে শপথ নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান নেতাকর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান।
এর আগে শুক্রবারও একই দাবিতে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভের মধ্যে সেখানে উত্তেজিত লোকজন সেনাবাহিনীর গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় নয়জন সেনাসদস্য এবং সংবাদকর্মীসহ স্থানীয় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দুজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে শনিবার বিকাল ৪টার দিকে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হাজার হাজার সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
শনিবার রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, গোপীনাথপুরে বিক্ষোভকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে সেনা টহল দলের ওপর হামলা করে।
মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে দুটি টহল দল ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর ইট- পাটকেল ছুঁড়ে মারে এবং দেশীয় তৈরি অস্ত্র দিয়ে টহল দলের সদস্যদের আঘাত করে। এতে তিনজন অফিসার, একজন জুনিয়র কমিশন অফিসার ও পাঁচ সেনাসদস্য আহত হন।
আহত সেনা সদস্যরা আশঙ্কামুক্ত ও চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় এবং দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে বলে বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সেনা টহল দল চার রাউন্ড অ্যামোনিশন ফায়ার করে।
রিস্থিতির তীব্রতা পরিলক্ষিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
সেনাবাহিনী এসে মহাসড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরে যেতে বলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিক্ষুব্ধ জনতা। তারা সেনাবাহিনীর ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন।
সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম