লেখক:- সৈয়দ সুমন::: ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়তাম তখন পরীক্ষার খাতায় “শ্রমের মর্যাদা” নামক একটা রচনা লিখতে হতো।সেই সাথে লিখতাম “পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি” নামক ভাবসম্প্রসারণ।তখন এই দুটো জিনিসেরই কোন মর্মার্থ বুঝতাম না।মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় বমি করে ছেড়ে দেয়াই ছিল অাসল কাজ।যার সাথে ছিলনা জীবনের বাস্তব কোন অভিজ্ঞতা।
তবে দেশ ছেড়ে যখন বিদেশে অাসলাম তখন জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম…শ্রম কি?শ্রম কাহাকে বলে?শ্রমের মর্যাদা কি?সেই সাথে অারো টের পেলাম……কিভাবে পরিশ্রম করে শ্রমের প্রতি মর্যাদাশীল হয়ে একটি দেশ ও একটি জাতি তার উন্নতির স্বর্ণ শিখরে অারোহণ করতে পারে।
পৃথিবীর সকল উন্নত দেশ-ই প্রায় একই রকম।এখানে যার যার নিজের কাজ তার নিজেরই করে নিতে হয়।কেউ কারো কাজ করে দেয় না।এখানে কে কি কাজ করছে সেটা বড় কথা নয়।এখানে কাজটাই সবচাইতে বড় ও মূখ্য বিষয়।
এখানকার প্রতিটি মানুষ তার কাজের প্রতি অসম্ভব শ্রদ্ধাশীল।কোন কাজকেই কেউ ছোট করে দেখে না।এসব উন্নত দেশে অনেক উচ্চ শিক্ষিত অনেক বিত্তশালী মানুষকেও অনেক ছুট কাজ করতে দেখা যায়।যাদের দৃষ্টিতে পৃথিবীতে ছোট-বড় বলে কোন কাজ নেই।যাদের কাছে সব কাজ-ই নিজের,সব কাজ-ই সমান এবং সব কাজ-ই সম্মানজনক।
কিন্তুু বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় এখনো মানুষের মধ্যে সে ধরনের মানসিকতা গড়ে উঠেনি।পাছে লোকে কিছু বলে এই ভয়ে অনেকেই অনেক কাজ করেন না।এখানে অন্য মানুষকে দিয়ে করানো হয় নিজের কাজ।যেখানে কাজটা বড় বিষয় নয়।কোন লেবেলের মানুষ কোন কাজ করছে….সেটাই বড় বিষয়।তাই কোন অফিসের বস যদি এসে সকাল বেলা তার অফিস পরিষ্কার করেন,তবে এতে তার ইজ্জত চলে যাবে।ঘরের ঘরনি যদি কাপড় কাঁচেন,নিজের ঘর ঝাড়ু দেন তাতেও তার ইজ্জত চলে যাবে।এগুলো ছোট কাজ।এসব ছোট কাজ করার জন্য অামাদের দেশে মাসিক বেতনে রাখা হয় অালাদা লোক।কারো কারো ভাষায় যারা ছোট লোক বা কাজের লোক বলে পরিচিত।যেখানে কাজটা বা শ্রমের মর্যাদাটা মুখ্য বিষয় নয়।কে কোন কাজ করলে কার ইজ্জত কতটুকু নেবে যাবে বা চলে যাবে,সেটাই মুখ্য বিষয়।
যে কারণে যতটুকু অামাদের এগিয়ে যাবার কথা ছিল,ঠিক ততটুকু অামরা এগিয়ে যেতে পারিনি।এগিয়ে যেতে পারেনি অামাদের সমাজ।এগিয়ে যেতে পারেনি অামাদের অনেক পরিবার।
তাই সত্যি সত্যিই যদি অামাদের দেশের মানুষ কোন কাজকে ছোট বড় না ভেবে প্রত্যকেই প্রত্যেকের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতো,মানসিকতা বদলাতো,তাহলে হয়তো পৃথিবীর উন্নত দেশ গুলোর মতো অামাদের দেশটাও অারো অনেক অনেক বেশী উন্নত হতো।
অারো অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেত পারতো অামাদের সোনার বাংলাদেশ।
# লেখক:- সৈয়দ সুমন।লেস্টার,যুক্তরাজ্য।