Menu |||

প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা, এই নিঃসঙ্গ প্রবাসীরাই একাকিত্ব জীবন নিয়ে দেশ আর স্বজনদের মাঝেই নিজকে লুকিয়ে রাখে

 

আল আমিন রানা ( লেখক কবি ও সাংবাদিক )

বলছিলাম প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের কথা । একজন প্রবাসী কী সত্যিই নিঃসঙ্গ? প্রবাসীরা নিঃসঙ্গ নয় এমনটি বলা যাবে না । তবে এই নিঃসঙ্গ জীবনেও রয়েছে বৈচিত্রতা । প্রবাসী জীবনের এই বৈচিত্রতা কেটে যায় একেক ভঙ্গিমায়,একেক রঙে । সেটা কখনো আনন্দের। কখনো অতি স্বাধীনতায় হারিয়ে ফেলে জীবনের ছন্দ ও সুর । এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই খোদ প্রবাসীদের মধ্যেই । একজন প্রবাসীর মানসিক অস্থিরতা,তার আবেগ, তার কষ্ট-ভালবাসা, ও নিরব কান্না এসব কিছুই দেশ ও স্বজনদের নিয়ে । হোকনা তা মা ও মাটির সান্নিধ্য থেকে অনেক দুরে । দেশে বাস করে দেশকে উপেক্ষা করা যায় । কিন্তু প্রবাসে এলে দেশকে নতুন ভাবে ভাবতে শিখায়,দেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যায় । একজন প্রবাসী শুধু পরবাসী নয়, মননে, চিন্তায়, চেতনায় স্বদেশবাসীও বটে । দেশকে নিয়ে প্রবাসীদের অন্তহীন অন্তর্জালা কতটা যে গভীর ও বেদনাময় তা ভুক্তভোগী প্রবাসীরাই জানে । তবে অদৃশ্য এই অনুভূতির জায়গাটুকু প্রেরিত হাজার কোটি ডলার রেমিটেন্সের হিসাব দিয়ে অঙ্ক কষলে বের হবেনা যে! দূর থেকে দেশকে ভালোলাগা ও ভালবাসার
এই হৃদয়স্পর্শী আবেগটুকু যে কতটা ‘ননস্টপ’ তা কাউকে বোঝানো যাবে কি? যাবে না । কারণ, প্রবাসীদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে দেশের মানুষগুলো সুস্থ ও শান্তিতে থাকার উপর । প্রবাসীরা তো পরবাসী । তবু মন আর হৃদয়টা যে কখনই ‘পরবাসী’ হতে চায় না । ভালো লাগা, না লাগার পুরো আবেগটাই যেন জড়িয়ে থাকে দেশের জন্যে, দেশের স্বজনদের জন্যে ।’ প্রবাসী’ মানে বৃক্ষের শিকড় রেখে উপড়ে ফেলা এক গুচ্ছ ডালপালা, যে সর্বক্ষণ শিকড়ের সন্দ্বানে হাতছানি দিয়ে ডাকে । অন্তত ব্যক্তি প্রবাসী হিসাবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমার কাছে তা-ই মনে হয় । নিঃসঙ্গতা কি? নিঃসঙ্গতা মানে তো কারো অনুপস্থিতি ভীষণভাবে অনুভব করা । কাউকে গভীরভাবে মিস করা।আর একাকিত্ব? একাকিত্ব হলো ওই নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে নিজের মাঝে নিজকে সতেজ রাখা । ভালো রাখতে সচেষ্ট থাকা। শত কষ্টেও অন্যত্র নিজেকে ‘খাপ’ খাইয়ে নেয়া । নিঃসঙ্গতা যদি হয় কাউকে মিস করা,নিঃসঙ্গতা যদি হয় প্রিয়জনদের অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করা, তাহলে তো প্রবাসীরা নিঃসঙ্গই বটে। এত নিঃসঙ্গতার মাঝেও প্রভাতে দোয়েল পাখির শীষে প্রবাসীদের ঘুম ভাঙ্গে । ঘু ঘু পাখিগুলোর রমরমা ডাকা-ডাকি মনকে উতলা করে। কী এক অদ্ভূত নষ্টালজিয়ায় আক্রন্ত হলেও ওই দৃশ্যমান পাখিগুলোকে কেন এত অচেনা মনে হয়? আচ্ছা, সীমান্ত পেরিয়ে গেলেও কী ওই ঘন নীল আকাশের রঙ কখনো ভিন্ন হয়? হয়না । তবু কেন মনে হয় ওই চিরচেনা আকাশটা এত অচেনা? এই সবই তো নিঃসঙ্গতা । প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা । এই নিঃসঙ্গ প্রবাসীরাই একাকিত্ব জীবন নিয়ে দেশ আর স্বজনদের মাঝেই নিজকে লুকিয়ে রাখে।প্রবাসীরা দেশ ও স্বজনদের নিয়েই স্বপ্ন দেখে । কখনো আড়ালে । কখনো প্রকাশ্যে। ওই স্বপ্নগুলো কেবলই সাদাকালো নয় । রঙবে রঙেরও হয় । অনেকেরই ধারণা প্রবাসে থাকা মানে না ‘বিদেশী’ না ‘বাঙালী’ হয়ে বেঁচে থাকা । প্রবাস মানে কী একগুয়েমি জীবন? প্রবাসী মানে কী সাংস্কৃতিক আত্নপরিচয় ভুলে যাওয়া? নাকি এই একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ জীবনেও প্রবাসীরা আকড়ে ধরে থাকে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি? একটি সময় হয়তো ছিল প্রবাস মানে না ‘বাঙালি’ না ‘বিদেশী’ হয়ে বেঁচে থাকা । কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই । ওই ধারণার পুরোটাই পাল্টে গেছে । কুয়েত প্রবাসীরা নিজকে ষোলআনা বাঙালীয়ানায় দেখতে না পেলেও বাঙালি জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও সাফল্য এখন অনেক ব্যপ্তি লাভ করছে। পিঠা উত্সব,একুশে ফেব্রুয়ারী পালন, বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন, বৈশাখী মেলার জমকালো আয়োজনসহ হরেকরকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রবাসী-অভিবাসী বাঙালীরা জাগিয়ে রাখছে নিজ দেশের শিল্প সংস্কৃতি এই প্রবাসেও । কুয়েতে এখন বাঙালিদের নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র । উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে ‘না বাঙালি’ হয়ে বেঁচে থাকার ওই সংকুচিত ধারণাটি । এই তো, এখন থেকে দেড় যুগ আগেও কোনো বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল ইউরোপ কিনবা আমেরিকার ভূখন্ডে বসে দেখার কল্পনা ছিল কাল্পনিক বিলাসিতা । আর এখান? শুধু ইউরোপ তথা কুয়েতে বসেই প্রবাসীরা দেখছে অর্ধ ডজনেরও বেশি বাংলা টিভি চ্যানেল । যেগুলো প্রতিনিয়ত চব্বিশ ঘন্টাই প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাঙালিয়ানার স্বাদ । শুধু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই নয় পুরো কুয়েত জুড়ে অর্ধশতেরও বেশি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ভাষায় । প্রবাসী বাংলাদেশিদের বহুদিনের স্বপ্ন কুয়েতে একটি বাংলাদেশি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে অনেক চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন মহল। নানা সমস্যার পরিত্রান ঘটিয়ে অবশেষে একটি বাংলা স্কুলের শুভ সূচনা হলো কুয়েতের বুকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই স্কুলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি (অব.) এই স্কুলের মোড়ক উন্মোচন করেন। আবদুল্লাহ আল মোবারক (গর্ব জিলিব) ব্লক-৯, রোড-১৪, ৩৭নং বিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কুয়েতস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নাম করণ করা হয় মর্ণিং গ্লোরি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্রাথমিক পর্যায়ে এর শিক্ষা কার্যক্রম প্লে গ্রুপ, এল কেজি, ইউ কেজি এবং প্রথম শ্রেনী পর্যন্ত। স্কুলটিতে বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস (ইংরেজী মাধ্যম) অনুযায়ী শিক্ষা লাভের সুযোগ থাকবে।- আরো রয়েছে একটি রেডিও বেতার বাংলা । এক সময় যা ছিল কল্পনিক বিলাসিতা তা এখন হয়ে উঠছে নিত্য দিনের সঙ্গী । কুয়েতে এখন বেশকিছু প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনও গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে মননশীল সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে । অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত ও নৃত্যের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে প্রবাসীদের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে । এই সব কিছুই ‘না বাঙালি’ হয়ে বেঁচে থাকার দৃঢ় অনুপ্রেরণা, সেই সাথে বাংলাদেশী অধ্যুশিত কুয়েতে কিছুসংখ্য্যক কলম সৈনিক আছেন, যারাা পরাধীনতার দুর্ভেধ্য প্রচীরে বন্দি থেকে ও আবহমান বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্বিশালী করতে নানন্দিক দৃষ্টান্ত রাখছেন,প্রবাসীদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটা অনেকেরই । কারো কারো রয়েছে বিশেষ কৌতুহল।অন্তত যারা প্রবাসী নয়।কৌতুহলটা তাদেরই বেশি যাদের স্বজনরা প্রবাসী।আমজনতার আগ্রহ যে নেই তা নয়।তা ক্ষেত্র বিশেষে।তাদেরও কৌতুহল হয়,যখন কোনো প্রবাসী হয়ে উঠে আমরা বাঙালি প্রবাসীরা কেমন আছি? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে কিভাবে কাটছে আমাদের জীবন? দেশের অস্থিতিশীল ঘুমোট রাজনৈতিক পরিবেশের বাইরে থেকে আমরা কী খুব ভালো আছি? দেশ ও স্বজনদের দুরে রেখে আমাদের প্রবাস জীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটছে? নাকি সোনার হরিনের পিছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমারও ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। এই প্রশ্নগুলো করার পিছনে অন্য কোনো অযাচিত উদ্দেশ্য নেই । সুখ, দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতিগুলো বলবার প্রয়াস মাত্র।কারণ,কারো কাছে যাপিত জীবন বড্ড বেশি অহংকারী । কারো কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ । হোকনা সে প্রবাসী কিনবা অন্য কেউ? কুয়েতে প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকেই আজকের এই লেখা,বহুমাত্রিক বাধ-বিঘœতার মধ্যে স্বদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঠিকা নিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে দেশের উজ্জল ভবিষ্যৎ অন্বেষায়।

(চলবে) লেখক:কুয়েত প্রবাসী

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির বনভোজন ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

» সুদানে বর তার বন্ধুদের চাবুক মারার সংস্কৃতি

» অসুস্থ প্রবাসী, হাসপাতালে ১বছর ছয়  মাস,সেবকের ভূমিকায় সাংবাদিক মহসিন

»

» যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

» কাতার পুলিশ কলেজের সপ্তম স্নাতক প্রদানে আমির শেখ তামিম

» বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের “বিজ্ঞপ্তি”

» কাতারে প্রীতি ফুটবল টুনামেন্ট এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

» পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারদের কারা কোন পোশাক পেলেন?

» “কুয়েতে শীতের ৫ মাস” তাবু ঘরের গল্প

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা, এই নিঃসঙ্গ প্রবাসীরাই একাকিত্ব জীবন নিয়ে দেশ আর স্বজনদের মাঝেই নিজকে লুকিয়ে রাখে

 

আল আমিন রানা ( লেখক কবি ও সাংবাদিক )

বলছিলাম প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা আর একাকিত্বের কথা । একজন প্রবাসী কী সত্যিই নিঃসঙ্গ? প্রবাসীরা নিঃসঙ্গ নয় এমনটি বলা যাবে না । তবে এই নিঃসঙ্গ জীবনেও রয়েছে বৈচিত্রতা । প্রবাসী জীবনের এই বৈচিত্রতা কেটে যায় একেক ভঙ্গিমায়,একেক রঙে । সেটা কখনো আনন্দের। কখনো অতি স্বাধীনতায় হারিয়ে ফেলে জীবনের ছন্দ ও সুর । এ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই খোদ প্রবাসীদের মধ্যেই । একজন প্রবাসীর মানসিক অস্থিরতা,তার আবেগ, তার কষ্ট-ভালবাসা, ও নিরব কান্না এসব কিছুই দেশ ও স্বজনদের নিয়ে । হোকনা তা মা ও মাটির সান্নিধ্য থেকে অনেক দুরে । দেশে বাস করে দেশকে উপেক্ষা করা যায় । কিন্তু প্রবাসে এলে দেশকে নতুন ভাবে ভাবতে শিখায়,দেশ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিও পাল্টে যায় । একজন প্রবাসী শুধু পরবাসী নয়, মননে, চিন্তায়, চেতনায় স্বদেশবাসীও বটে । দেশকে নিয়ে প্রবাসীদের অন্তহীন অন্তর্জালা কতটা যে গভীর ও বেদনাময় তা ভুক্তভোগী প্রবাসীরাই জানে । তবে অদৃশ্য এই অনুভূতির জায়গাটুকু প্রেরিত হাজার কোটি ডলার রেমিটেন্সের হিসাব দিয়ে অঙ্ক কষলে বের হবেনা যে! দূর থেকে দেশকে ভালোলাগা ও ভালবাসার
এই হৃদয়স্পর্শী আবেগটুকু যে কতটা ‘ননস্টপ’ তা কাউকে বোঝানো যাবে কি? যাবে না । কারণ, প্রবাসীদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে দেশের মানুষগুলো সুস্থ ও শান্তিতে থাকার উপর । প্রবাসীরা তো পরবাসী । তবু মন আর হৃদয়টা যে কখনই ‘পরবাসী’ হতে চায় না । ভালো লাগা, না লাগার পুরো আবেগটাই যেন জড়িয়ে থাকে দেশের জন্যে, দেশের স্বজনদের জন্যে ।’ প্রবাসী’ মানে বৃক্ষের শিকড় রেখে উপড়ে ফেলা এক গুচ্ছ ডালপালা, যে সর্বক্ষণ শিকড়ের সন্দ্বানে হাতছানি দিয়ে ডাকে । অন্তত ব্যক্তি প্রবাসী হিসাবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমার কাছে তা-ই মনে হয় । নিঃসঙ্গতা কি? নিঃসঙ্গতা মানে তো কারো অনুপস্থিতি ভীষণভাবে অনুভব করা । কাউকে গভীরভাবে মিস করা।আর একাকিত্ব? একাকিত্ব হলো ওই নিঃসঙ্গতা কাটিয়ে নিজের মাঝে নিজকে সতেজ রাখা । ভালো রাখতে সচেষ্ট থাকা। শত কষ্টেও অন্যত্র নিজেকে ‘খাপ’ খাইয়ে নেয়া । নিঃসঙ্গতা যদি হয় কাউকে মিস করা,নিঃসঙ্গতা যদি হয় প্রিয়জনদের অনুপস্থিতি গভীরভাবে অনুভব করা, তাহলে তো প্রবাসীরা নিঃসঙ্গই বটে। এত নিঃসঙ্গতার মাঝেও প্রভাতে দোয়েল পাখির শীষে প্রবাসীদের ঘুম ভাঙ্গে । ঘু ঘু পাখিগুলোর রমরমা ডাকা-ডাকি মনকে উতলা করে। কী এক অদ্ভূত নষ্টালজিয়ায় আক্রন্ত হলেও ওই দৃশ্যমান পাখিগুলোকে কেন এত অচেনা মনে হয়? আচ্ছা, সীমান্ত পেরিয়ে গেলেও কী ওই ঘন নীল আকাশের রঙ কখনো ভিন্ন হয়? হয়না । তবু কেন মনে হয় ওই চিরচেনা আকাশটা এত অচেনা? এই সবই তো নিঃসঙ্গতা । প্রবাসীদের নিঃসঙ্গতা । এই নিঃসঙ্গ প্রবাসীরাই একাকিত্ব জীবন নিয়ে দেশ আর স্বজনদের মাঝেই নিজকে লুকিয়ে রাখে।প্রবাসীরা দেশ ও স্বজনদের নিয়েই স্বপ্ন দেখে । কখনো আড়ালে । কখনো প্রকাশ্যে। ওই স্বপ্নগুলো কেবলই সাদাকালো নয় । রঙবে রঙেরও হয় । অনেকেরই ধারণা প্রবাসে থাকা মানে না ‘বিদেশী’ না ‘বাঙালী’ হয়ে বেঁচে থাকা । প্রবাস মানে কী একগুয়েমি জীবন? প্রবাসী মানে কী সাংস্কৃতিক আত্নপরিচয় ভুলে যাওয়া? নাকি এই একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গ জীবনেও প্রবাসীরা আকড়ে ধরে থাকে দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি? একটি সময় হয়তো ছিল প্রবাস মানে না ‘বাঙালি’ না ‘বিদেশী’ হয়ে বেঁচে থাকা । কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই । ওই ধারণার পুরোটাই পাল্টে গেছে । কুয়েত প্রবাসীরা নিজকে ষোলআনা বাঙালীয়ানায় দেখতে না পেলেও বাঙালি জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক কর্মকান্ড ও সাফল্য এখন অনেক ব্যপ্তি লাভ করছে। পিঠা উত্সব,একুশে ফেব্রুয়ারী পালন, বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন, বৈশাখী মেলার জমকালো আয়োজনসহ হরেকরকম সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে প্রবাসী-অভিবাসী বাঙালীরা জাগিয়ে রাখছে নিজ দেশের শিল্প সংস্কৃতি এই প্রবাসেও । কুয়েতে এখন বাঙালিদের নিয়মিত সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র । উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে ‘না বাঙালি’ হয়ে বেঁচে থাকার ওই সংকুচিত ধারণাটি । এই তো, এখন থেকে দেড় যুগ আগেও কোনো বাংলাদেশী টিভি চ্যানেল ইউরোপ কিনবা আমেরিকার ভূখন্ডে বসে দেখার কল্পনা ছিল কাল্পনিক বিলাসিতা । আর এখান? শুধু ইউরোপ তথা কুয়েতে বসেই প্রবাসীরা দেখছে অর্ধ ডজনেরও বেশি বাংলা টিভি চ্যানেল । যেগুলো প্রতিনিয়ত চব্বিশ ঘন্টাই প্রবাসীদের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে বাঙালিয়ানার স্বাদ । শুধু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াই নয় পুরো কুয়েত জুড়ে অর্ধশতেরও বেশি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে বাংলা ভাষায় । প্রবাসী বাংলাদেশিদের বহুদিনের স্বপ্ন কুয়েতে একটি বাংলাদেশি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে অনেক চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন মহল। নানা সমস্যার পরিত্রান ঘটিয়ে অবশেষে একটি বাংলা স্কুলের শুভ সূচনা হলো কুয়েতের বুকে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় এই স্কুলের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দিন এনডিসি, পিএসসি (অব.) এই স্কুলের মোড়ক উন্মোচন করেন। আবদুল্লাহ আল মোবারক (গর্ব জিলিব) ব্লক-৯, রোড-১৪, ৩৭নং বিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কুয়েতস্থ প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত স্কুলের নাম করণ করা হয় মর্ণিং গ্লোরি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। প্রাথমিক পর্যায়ে এর শিক্ষা কার্যক্রম প্লে গ্রুপ, এল কেজি, ইউ কেজি এবং প্রথম শ্রেনী পর্যন্ত। স্কুলটিতে বাংলাদেশ শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাস (ইংরেজী মাধ্যম) অনুযায়ী শিক্ষা লাভের সুযোগ থাকবে।- আরো রয়েছে একটি রেডিও বেতার বাংলা । এক সময় যা ছিল কল্পনিক বিলাসিতা তা এখন হয়ে উঠছে নিত্য দিনের সঙ্গী । কুয়েতে এখন বেশকিছু প্রতিনিধিত্বশীল সাংস্কৃতিক সংগঠনও গড়ে উঠেছে। গড়ে উঠেছে মননশীল সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে । অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন সংগীত ও নৃত্যের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ সাংস্কৃতিক কর্মসূচি নিয়ে প্রবাসীদের জন্যে কাজ করে যাচ্ছে । এই সব কিছুই ‘না বাঙালি’ হয়ে বেঁচে থাকার দৃঢ় অনুপ্রেরণা, সেই সাথে বাংলাদেশী অধ্যুশিত কুয়েতে কিছুসংখ্য্যক কলম সৈনিক আছেন, যারাা পরাধীনতার দুর্ভেধ্য প্রচীরে বন্দি থেকে ও আবহমান বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্বিশালী করতে নানন্দিক দৃষ্টান্ত রাখছেন,প্রবাসীদের জীবন কেমন কাটে? এ প্রশ্নটা অনেকেরই । কারো কারো রয়েছে বিশেষ কৌতুহল।অন্তত যারা প্রবাসী নয়।কৌতুহলটা তাদেরই বেশি যাদের স্বজনরা প্রবাসী।আমজনতার আগ্রহ যে নেই তা নয়।তা ক্ষেত্র বিশেষে।তাদেরও কৌতুহল হয়,যখন কোনো প্রবাসী হয়ে উঠে আমরা বাঙালি প্রবাসীরা কেমন আছি? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বললে কিভাবে কাটছে আমাদের জীবন? দেশের অস্থিতিশীল ঘুমোট রাজনৈতিক পরিবেশের বাইরে থেকে আমরা কী খুব ভালো আছি? দেশ ও স্বজনদের দুরে রেখে আমাদের প্রবাস জীবন কী খুব স্বস্তিতে কাটছে? নাকি সোনার হরিনের পিছনে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমারও ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। এই প্রশ্নগুলো করার পিছনে অন্য কোনো অযাচিত উদ্দেশ্য নেই । সুখ, দুঃখ আর কষ্টের অনুভূতিগুলো বলবার প্রয়াস মাত্র।কারণ,কারো কাছে যাপিত জীবন বড্ড বেশি অহংকারী । কারো কাছে বেঁচে থাকাটাই বড় চ্যালেঞ্জ । হোকনা সে প্রবাসী কিনবা অন্য কেউ? কুয়েতে প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি থেকেই আজকের এই লেখা,বহুমাত্রিক বাধ-বিঘœতার মধ্যে স্বদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঠিকা নিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে দেশের উজ্জল ভবিষ্যৎ অন্বেষায়।

(চলবে) লেখক:কুয়েত প্রবাসী

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Sun, 2 Feb.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।