খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি বিশেষ কিছু পুষ্টি উপাদানের দিকে নজর দিতে হয়।
বয়স চল্লিশ হলে দেহ এক ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।
এই সময় এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে থাক। হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ও হাড়-ভঙ্গুর রোগ-সহ নানান জটিলতা দেখা দিতে শুরু করে।
তবে কিছু তৃপ্তিকর তবে পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার মাধ্যমে সুস্থ থাকার মাত্রা বাড়ানো যায়।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া নিবাসী পুষ্টিবিদ ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ অ্যাশলে লার্সেন বলেন, “স্বাস্থ্যবান থাকতে খাবার অনেকটা ওষুধের মতো কাজ করে।”
তাই ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি, বয়স বৃদ্ধির সাথে কয়েকটি খাবার নিয়মিত গ্রহণের পরামর্শ দেন।
আঁশ
প্রতিদিন পূর্ণ শষ্য ও সবজি খাওয়ার মাধ্যমে পর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ নিশ্চিত করা যায়। উদ্ভিজ্জ আঁশ হজমতন্ত্রের উন্নতি ঘটায়। প্রদাহ কমায়। আর স্বাস্থ্যকর কোলেস্টেরলের মাত্রা বজার রাখতে সাহায্য করে।
পাশাপাশি অবসাদ কাটাতে ও বিভিন্ন ধরনের মারাত্মকর অসুস্থতা যেমন- হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আইবিএস ও ‘কোলন’ ক্যান্সার দূরে রাখতে পারে।
যে কোনো বয়সেই আঁশ গ্রহণ করা উপকারী। নারীদের প্রতিদিন ২১ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়।
আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়, যা টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়া থেকে রক্ষা করে।
লার্সেন বলেন, “খাবারে প্রোটিন ও আঁশ যুক্ত করার মাধ্যমে রক্তে শর্করা ধীরে মেশে। পূর্ণ শষ্য যেমন- ওটসের সাথে টক দই খাওয়া উপকারী।”
ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস
রাতের খাবারে মাছ, নাস্তা হিসেবে বাদাম খেয়ে প্রতিদিনের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস’য়ের চাহিদা পূরণ করা যায়।
এই পুষ্টি উপাদান কোষের বিশেষ করে মস্তিষ্কের ক্ষয় রোধ করতে কাজ করে।
বিভিন্ন ধরনের তৈলাক্ত মাছ, আখরোট, তিসির বীজ, সয়াবিন থেকে মিলবে এই পুষ্টি উপাদান।
ক্যালসিয়াম
যে কোনো ধরনের দুগ্ধজাত খাবার ও পালংশাক ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটাতে পারে।
“মজবুত হাড় ও দাঁতের জন্য প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। নারীদের রজোঃবন্ধের পর হাড় ভঙ্গুর রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এজন্য ১৯ থেকে ৫০ বয়সি নারীদের প্রতিদিন ১ হাজার মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়” বলেন লার্সেন।
আর পঞ্চাশের পর প্রতিদিন ১২শ’ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হয়।
এই লক্ষ্য পূরণ করতে প্রতি বেলায় উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্তি খাবার খেতে হবে। যেমন- দুধ, দই ও পত্রল শাকসবজি।
প্রোটিন
সাধারণত দেহের ওজন ও কাজের পরিমাপের ওপর প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা নির্ভর করে।
লার্সেন বলেন, “বেশিরভাগ নারীর দৈনিক ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করার প্রয়োজন হয়।”
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশির ক্ষয় শুরু হয়। যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা এড়ানো যায়।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে- চর্বিহীন (মুরগি) মাংস, সামুদ্রিক খাবার, ডিম, মটর, ছোলা, বাদাম, বীজ, সয়া ইত্যাদি।
ভিটামিন ডি
ক্যালসিয়াম শোষণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে প্রয়োজন হয় ভিটামিন ডি।
লার্সন জানান, ১৫ থেকে ৭০ বয়সি নারীদের দৈনিক ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি প্রয়োজন। খাবারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি গ্রহণ করা সম্ভব হয় না সবসময়। এজন্য বিকল্প পন্থায় অভাব পূরণ করতে স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন।
ফাইটোইস্ট্রোজেন্টস
বাদাম, সয়াবিন্স ও সবজিতে মেলে এই রাসায়নিক। যা হৃদরোগ, প্রদাহ ও আলৎঝাইমার’স রোগ প্রতিহত করতে কাজ করে।
পাশাপাশি ত্বক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে। এছাড়া মেনোপজের পরবর্তী সমস্যা যেমন- ‘হট ফ্লাশেস’ ও রাতে ঘাম হওয়ার মতো সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে।