খেলাধুলা ডেস্ক: ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরার পর যেন নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না মোস্তাফিজুর রহমান। শ্রীলঙ্কা সিরিজে তার বিধ্বংসী রূপ দেখা গেল কই! নিজের সেরাটা যেন মাশরাফি বিন মুর্তজার বিদায়ী ম্যাচের জন্যই রেখে দিলেন দ্য ফিজ।
বৃহস্পতিবার দুই ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে বিধ্বংসী বোলিংয়ের পসরা সাজিয়েছেন কাটার মাস্টার। মোস্তাফিজের পাশাপাশি সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে রঙিন বিদায়ই উপহার পেলেন মাশরাফি। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে আলো ঝলমলে রাতে শ্রীলঙ্কাকে ৪৫ রানে হারিয়ে মাশরাফির বিদায়কে রাঙিয়ে দিল টাইগার শিবির।
প্রেমাদাসায় টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ ওভার বাকি থাকতেই ১৩১ রানে গুটিয়ে যায় লঙ্কানরা। ফলে ৪৫ রানের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
মাশরাফির রঙিন বিদায়ের দিন দারুণ স্বস্তি নিয়েই বাড়ি ফেরার উপলক্ষ পেয়েছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলও খাবি খায় সেখানে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ সমান ১-১ ড্রয়ের স্বস্তি নিয়ে বাড়ি ফেরা কম গর্বের বিষয় নয়।
১৭৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে যেন আক্রমণাত্মক কৌশল নিয়েই মাঠে নামেন কুশল ও থারাঙ্গা। সাকিবের করা করা ইনিংসের প্রথম বলকে শর্ট ফাইন লেগ দিয়ে বাউন্ডারি-ছাড়া করেন। তবে পরের বলে দুর্দান্ত ডেলিভারিতে কুশলকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে উল্লাসে ভাসান সাকিব।
মাশরাফির করা দ্বিতীয় ওভারে চেশ চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন থারাঙ্গা। তবে মাশরাফির ওভার থেকে ৮ রানের বেশি নিতে পারেননি থারাঙ্গা ও দিলশান মুনারাবিরা। এরপর লঙ্কান শিবিরে ফের আঘাত হানেন সাকিব।
সাকিবের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে চার মারেন মুনারাবিরা। দ্বিতীয় বলে কোনো রান নিতে পারেননি তিনি। পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন মুনারাবিরা।
পঞ্চম ওভারে আক্রমণে এসেই শ্রীলঙ্কাকে বড় ধাক্কা দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম বলে তাকে তুলে মারতে গিয়ে মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক থারাঙ্গা। বোলিংয়ে নিজের সেরা অস্ত্র মোস্তাফিজকে ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। বিদায়ী ম্যাচে মাশরাফিকে হতাশ করেননি কাটার মাস্টার। আসেলা গুনারত্নে ওভারে প্রথম বলে মারতে গিয়ে কভারে মোসাদ্দেক হোসেরনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। পরের বলে পয়েন্টে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়েন সিরিবর্ধনে। আর তাতেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা।
৪০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে খাদের কিনারা থেকে উদ্ধার করেন পেরেরা ও কাপুগেদারা। ষষ্ঠ উইকেটে এই দুজন ৪৫ বলে ৫৮ রানের দারুণ জুটি গড়লে ম্যাচে ফিরে আসে স্বাগতিকরা। তবে সাকিবের করা ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে মুশফিকের দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে পেরেরা ফিরে গেলে ফের ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা।
শ্রীলঙ্কার নিভু নিভু আশা শেষ হয় ১৬তম ওভারে। মাশরাফির করা ওভারের পঞ্চম বলে হার্ডহিটার সেকগু প্রসন্ন ফিরে গেলে জয়োৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে দেয় বাংলাদেশ। পরের ওভারে মোস্তাফিজের জোড়া আঘাত। আর ১৮তম ওভারের শেষ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বলে ভিকাম সঞ্জয় মাহমুদউল্লাহ হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে বিজয়োৎসবে মেতে ওঠে বাংলাদেশ দল।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে মাশরাফির বিদায়ী ম্যাচটাকে স্মরণীয় করে রাখার পণ করেই যেন মাঠে নেমেছিলেন সৌম্য সরকার, সাকিব ও ইমরুল কায়েস। এই তিনজনের দৃঢ়তায় নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে সফরকারীরা। অবশ্য শেষদিকে তালগোল না পাকালে সংগ্রহটা আরো বড় হতে পারতো।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ৩১ বলে ৪টি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৩৮ রান করেন। ইমরুল কায়েস ২৫ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৬ ও সৌম্য ১৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় করেন ৩৪ রান। এছাড়া সাব্বির রহমান ১৯, মোসাদ্দেক ১৭ ও মুশফিক করেন ১৫ রান।
শ্রীলঙ্কার হয়ে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেন হ্যাটট্রিক-ম্যান মালিঙ্গা। একটি করে উইকেট নেন থিসারা পেরেরা, নুয়ান কুলাসেকারা, ভিকাম সঞ্জয় ও আসেলা গুনারত্নে। ১৯তম ওভারে টানা তিন বলে মুশফিক, মাশরাফি ও অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন মালিঙ্গা।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে হার দিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তবে এরপরই দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। দ্বিতীয় টেস্টে দাপটের সঙ্গে জিতে সিরিজ সমতায় শেষ করে মুশফিকের দল। এরপর তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে লঙ্কানদের বিধ্বস্ত করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে বৃষ্টি এবং শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা জয় পাওয়ায় সিরিজ জেতা হয়নি লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। টি-টোয়েন্টি সিরিজে হার দিয়ে শুরু করার পর বৃহস্পতিবার দাপুটে জয় দিয়ে মাশরাফির বিদায়কে রাঙায় বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজও ড্র করে মাশরাফির দল।
শ্রীলঙ্কার একাদশ: কুশল পেরেরা, দিলশান মুনারাবিরা, উপুল থারাঙ্গা (অধিনায়ক), চামারা কাপুগেদারা, আসেলা গুনারত্নে, মিলিন্দা সিরিবর্ধনে, থিসারা পেরেরা, সেকুগে প্রসন্ন, নুয়ান কুলাসেকারা, লাসিথ মালিঙ্গা ও ভিকাম সঞ্জয়।
বাংলাদেশ একাদশ: ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহীম, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মুর্তজা (অধিনায়ক), মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
অগ্রদৃষ্টি. কম // এমএসআই