তিন দিনেই একশো কোটি। হবে না কেন! টাইটেল কার্ডে যে তাঁর নাম। সালমান খান! মুম্বইতে মুখোমুখি ভারতী দুবে।
ছবি সুপারহিট। চার দিনে ‘বজরঙ্গী ভাইজান’ একশো কোটি পেরোল। ওদিকে ফোর্বস লিস্টে ২১২.৬ কোটি টাকা কামিয়ে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে টাই। কেমন লাগছে সালমান খানের?
শুনেছি আপনার আর শাহরুখ খানের ঝামেলা মিটে গিয়েছে? শাহরুখের ‘রইস’ও যে ‘সুলতান’য়ের সঙ্গে একই দিনে রিলিজ করবে!
আমার তো মনে হয় একই দিনে রিলিজ করানোটা ভালই হবে। আরে রিলিজ ডেট নিয়ে অত কচকচানির কী আছে! একদিন না একদিন তো শুরু করতেই হবে। আর আগেও তো এমন হয়েছে। একই দিনে দু’টো ছবি রিলিজ করে দু’টোই ভাল ব্যবসা করেছে।
ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সুদর্শন অভিনেতা আপনি। পঞ্চাশ হতে চলল কিন্তু এখনও এলিজিবল ব্যাচেলর। বিয়েটা কেন করছেন না বলুন তো?
অনেক দিন তো একাই আছি। তাছাড়া আমার জীবনে যে-ই আসুক, তাকে আমার কাজ, আমার বন্ধুবান্ধব, আমার স্লিপিং হ্যাবিটস-এ অভ্যস্ত হতে হবে।
যেটা নিয়ে ঝামেলা হতে পারে?
আমার তো অনেক সম্পর্ক হয়েছে। প্রথমে দেখেছি এগুলো সব অ্যাডজাস্ট হয়ে যায়। কিন্তু কিছু দিন পরেই ঝামেলা শুরু হয়।
তা হলে বিয়েটা করছেন না?
ও রকম লক্ষ্য নিয়ে এগোলে আমি দেখেছি ঠিকঠাক হয় না। হলে হবে। (দুষ্টুমি ভরা সালমান -চিত হাসি হেসে)। কিন্তু আমার বাচ্চাদের সঙ্গে থাকতে দারুণ লাগে। বিয়ে ছাড়া সেটার কি কোনও ব্যবস্থা করা যেতে পারে?
তা হলে ওটাই লক্ষ্য?
হা হা হা হা। আসলে নির্দিষ্ট লক্ষ্য বলে কিছু নেই আমার জীবনে। কেরিয়ারের শুরুতে মডেলিং করতে চেয়েছিলাম। তারপর অভিনেতা হওয়ার জন্য অডিশন দিই। আর যখন অভিনেতা হলাম তখন একটা ছবি করে দশ লাখ কামাতে চেয়েছিলাম। এখন বছরে দু’টো ছবি, টিভি শো করতে চাই। দেশের জন্য কাজ করতে ইচ্ছে করে। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। লক্ষ্যগুলো ক্রমেই বড় হচ্ছে।
কেউ বিপদে পড়লে তো সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সবার আগে…
দেখুন, প্রত্যেকেরই নিজস্ব সমস্যা আছে। আর যদি আমি কারও ফেভার চাই আর তার যদি সেই ক্ষমতা থাকে, তা হলে সেটা করতে কেউ অস্বীকার করবে কেন? এবং কেউ যদি আমার জন্য করে, তার বিপদের দিনেও আমি তার পাশে থাকব।
আপনার ফ্যানেরা তো সব সময় আপনার পাশে থেকেছে। ‘হিট অ্যান্ড রান’ কেসের পরেও ফ্যানদের ভালোবাসা তো কমেনি। ওদের সময় দেন কী ভাবে? এত ফ্যান আপনার…
ডিজিটাল মিডিয়া কাজটা খুব সহজ করে দিয়েছে। এই দেখুন না, কিছুক্ষণ আগে ফেসবুকে চ্যাট করছিলাম ভক্তদের সঙ্গে। একটা সময় তো আমার অটোগ্রাফ করা ছবি পাঠাতাম ওদের। এক একদিনে অন্তত চার-পাঁচ বস্তা হয়ে যেত! আর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন ওই ছবিগুলো ছাপাতেও বেশ খরচ হয়। মা বলত, ‘অ্যায়সে তো হম বরবাদ হো যায়েঙ্গে।’ সেই সময় একটা ছবি প্রিন্ট করতে পাঁচ টাকা খরচ হত। জানেন, এক এক দিনে ১০০০ থেকে ১২০০ ছবি মেইল করতাম।
আপনি তো আপনার ফ্যানেদের রিটার্ন গিফটও দেন?
আমরা প্রায় ১১১ জনকে নমিনেট করেছি ‘ক্লিনইন্ডিয়াউইথএসকে’ প্রোগ্রামে। যদি কেউ এটা করতে পারে আমরা তাদের ‘বিইং হিউম্যান’ থেকে গিফট পাঠাই।
আপনি তো যেখানেই শ্যুটিং করেন, সেখানেই মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলেন। ‘বজরঙ্গী ভাইজান’য়ের কাশ্মীর আউটডোরেও নাকি তাই করেছিলেন?
হ্যাঁ, করেছিলাম তো। যেখানেই শ্যুটিং করি, সেখানেই একটা মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলার চেষ্টা করি। কাশ্মীরেও করেছিলাম। দু’শো বাচ্চার মধ্যে সাঁইত্রিশ জনের অপারেশন হয়েছে সেখানে।
মহিলাদের জন্যও একটা ক্যাম্প করেছিলাম। সেখানেও ১৩০ জনের মধ্যে ৪৭ জনের অপারেশন হয়েছে।
সালমানের এই দিকটা কিন্তু অনেকেই জানে না!
সেটা তাদের ব্যাপার…
‘বজরঙ্গী ভাইজান’ এ আপনি যাকে বলে ‘গুড হার্টেড সোল’। বাস্তব জীবনেও কি পর্দায় যে চরিত্রে অভিনয় করেন, তার প্রভাব থেকে যায়?
আসলে যে চরিত্রেই অভিনয় করি, চেষ্টা করি সেই চরিত্রের কিছু অংশ নিজের সঙ্গে রাখতে। ‘বজরঙ্গী ভাইজান’-এ যেমন। চরিত্রটি ভাবছে নিজের ঝুঁকিতে সে ছোট্ট মেয়েটাকে পাকিস্তানে পৌঁছে দেবে। নিজের জীবনে এমনটা ঘটলে আপনিও কি এটাই করতে চাইবেন না?
যশ রাজের ‘সুলতান’ নিয়ে কিছু বলুন না…
অনেক দিন ধরে ‘সুলতান’য়ের জন্য ট্রেন করছি। কুস্তির আখড়াতেও তো যেতাম বডি বানানোর জন্য। ‘সুলতান’ কিন্তু একটা স্পোর্টস লাভ স্টোরি। আর মনে রাখবেন ‘সুলতান’য়ে একজনই পরিচিত হিরোইন, দীপিকা। অন্যজন কিন্তু নতুন মুখ।
সালমান খান-ও শেষমেশ ছবি প্রযোজনায়। কোনও বিশেষ কারণ?
কেন? সবারই তো নিজের নিজের প্রোডাকশন হাউজ আছে। আর এটা রোজগারের একটা নিরাপদ রাস্তা। শাহরুখ (খান)-আমিরের (খান) কাছে ওদের কত ছবির রাইটস আছে ভাবুন তো! আমার কাছে তো কিছুই নেই।
মানে আপনার আগের ছবিগুলোর রাইটস আপনার কাছে নেই?
নেই তো। আর আমার প্রোডিউসররা সেগুলো সব চ্যানেলকে বেচে দিয়ে অনেক টাকা কামিয়েছে। তবে আমাকে দিলে আরও বেশি দামে বিক্রি করতে পারতাম। (হাসি)
নিজেকে প্রোডিউসর হিসেবে তা হলে কত নম্বর দেবেন সালমান খান?
নম্বর দেওয়ার আগে বলি, আমি কিন্তু সিনেমার সবক’টা দিক দেখি। বাজেট, স্ক্রিপ্ট— সব। কিন্তু যতক্ষণ না ছবিটা বানানো শুরু হচ্ছে ততক্ষণ। একবার সেটা হয়ে গেলে আমি ওটা পরিচালকের হাতে ছেড়ে দিই।
শুধু সিনেমা বা বিয়িং হিউম্যান-ই বা কেন! এখন তো নাকি আপনি আপনার নিজস্ব চ্যানেলও তৈরি করতে চলেছেন…
আমরা এটাকে একটা ইন্টারঅ্যাক্টিভ চ্যানেল করতে চাই। যে কোনও চ্যানেলের আগে আমরা নিউজ ব্রেক করব— এটাই আমার প্ল্যান। আর তাছাড়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে মিডিয়া অনেক ভুলভাল খবর ছড়ায় বাজারে… সেগুলো আমরা বন্ধ করতে চাই। কোনটা ভুল খবর, কোনটা গসিপ— সেটাও মানুষকে বলে দিতে চাই। এটা যদি না করি তা হলে আমরা মানে ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজেদের বাঁচাতে পারব না এই সাঙ্ঘাতিক অ্যাগ্রেসিভ মিডিয়া থেকে।
শেষ প্রশ্ন, আজকের এই পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই সালমান, দিনের শেষে নিজের বাড়িতে একা থাকলে কী ভাবে?
(মিনিটখানেক চুপ থেকে) সে ভাবে, আমি সেই অভিনেতা হতে চাই না যার হাতে কোনও কাজ নেই। আর এত দিন পর মনে হয় ‘রিল’ লাইফের বাইরেও ‘রিয়েল’ লাইফে কিছু করি।
আমার ফ্যানদের থেকে যা পেয়েছি, আমার দেশ থেকে যা পেয়েছি— সেটা ফেরত দিতে চাই ছবির মধ্যে দিয়ে। এবিপি’র সৌজন্যে।