চট্টগ্রামের একটি প্রাচীন আ লিক প্রবাদ রয়েছে, ‘হাতত কাঁচি কোঁরত দা ভাত খাইলে রইন্ন্যা যা” অর্থাৎ হাতে কাঁচি কোমরে দা ভাত খেলে রাঙ্গুনিয়া যা। দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী চট্টগ্রামের শস্য ভান্ডারখ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল এখন ন্যাড়া ভূমিতে। আমন ধান গোলায় তোলার দুই সপ্তাহ’র ব্যবধানে কৃষকরা বোরো চাষাবাদের জন্য গুমাই বিলকে প্রস্তুত করতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে। নদী থেকে পানি সেচ দিয়ে সারি সারি তৈরি করা হচ্ছে সোনালী বীজতলা। বাড়ছে শ্রমিকদের কদর। চড়া মূল্য দিয়ে শ্রমিক সংগ্রহ করে অল্প সময়ে চারা গজাতে কৃষকদের তাড়াহুড়ো চোখে পড়ার মতো। পুরো গুমাই বিলে কৃষকরা বোরো চাষাবাদের জন্য বীজতলা তৈরি ও বোরো চাষের জন্য জমিকে উপযোগী করার কাজ করছে। দুই সপ্তাহ আগেও পুরো গুমাই বিল জুুড়ে সোনালী ধানের নাচন যে কাউকে আকৃষ্ট করলেও খোলা বিলে উন্মুক্ত ন্যাড়া ভূমিতে পানি সেচ দিয়ে বীজতলা তৈরির জন্য টুইটুম্বর পানির দৃশ্য লক্ষ্যনীয়। অধিকাংশ ভূমিতে বীজ ফেলাও হয়েছে ইতিমধ্যে। অনেকে আবার নিজের প্রয়োজন ছাড়াও চারা বিক্রি করার জন্য অতিরিক্ত বীজতলা তৈরি করছে । প্রতিদিনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলনে কৃষকদের ফুরফুরে মেজাজে চলছে বোরো চাষাবাদের জোর প্রস্তুতি।
জানা যায়, কর্ণফুলী নদী বিস্তৃত উর্বর ভূমি গুমাই বিলের পলিবাহিত জমি উর্বরতার কারণে প্রতি বছর দুই ফসলী এই ভূমি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। দেশের বৃহত্তম চলন বিলের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চট্টগ্রামের এই শস্য ভান্ডারে গত মৌসুমে খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্টিক টন। যা গুমাই বিলের ৪ হাজার হেক্টর থেকে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে খাদ্য উৎপাদন করে প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই বিল। ১৯৪৫ সালে রাঙ্গুনিয়ার কৃতি পুরুষ মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার অক্লান্ত পরিশ্রম করে গুমাই বিল সংষ্কার করে প্রথম বারের মতো আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। গুমাই ঝিল থেকে বিলে পরিণত করার প্রবল কৃতিত্বের অধিকারী তিনি। ১৯৮০-৮১ সাল থেকে গুমাই বিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি বোরো চাষাবাদে উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন হয়। এরমধ্যে গুমাই বিল থেকে সিংহভাগ ধান উৎপাদিত হবে বলে কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী রমিজ আহমেদ জানায়।
উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের পাঠান পাড়া গুমাই বিলের কৃষক আব্দুল কুদ্দুছ (৬০), নুরুল আবছার (৫৫), কদমতলীর মো. আজিম (৪০), রেজাউল করিম (৫০) জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে গুমাই বিল থেকে আমন ধান কেটে গোলায় তুলেছি। গোলায় তোলার পর পর বোরো চাষাবাদ করার লক্ষে বীজতলা তৈরি ও জমি উপযোগী করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছি। গত মৌসুমে গুমাই বিলে বাম্পার ফলন হওয়ায় আমরা এই মৌসুমেও ব্যাপকভাবে বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছি। এই মৌসুমে সেচের মাধ্যমে আমাদের চাষাবাদ করতে হবে। সেই জন্য জমি উপযোগী করে তুলতে চড়া মূল্যে শ্রমিক রেখেছি। আশারাখি গত মৌসুমের মতো এই মৌসুমেও আশানুরূপ ফলন পাব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, গতবারের আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের উপযোগী দাম পাওয়ায় কৃষকরা ফুরফুরে মেজাজেই রয়েছে। বোরো চাষাবাদ করার লক্ষেও তাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। বোরো চাষাবাদে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, বোরো চাষাবাদে লক্ষমাত্রা অর্জনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা দেওয়া হবে। কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ ও উন্নত জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকরাও উৎসাহ নিয়ে গত মৌসুমের মতো বাম্পার ফলনে অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।