রৌমারী (কুড়িগ্রাম): কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন রৌমারী’র গরু খামারিরা। অতি মাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে ইনজেকশন ও বড়ি। মাসে প্রতিটি গরুকে দেওয়া হচ্ছে ৫-৬টা ক্যাটোফস ইনজেকশন।
অনেক খামারি কম সময়ে অধিক মুনাফার আশায় বাজার থেকে নিজেরাই স্ট্ররয়েড গ্রুপের রোডাক্সান, ডেক্সামেট, ডেকাসন, স্টেরন জাতীয় ব্যবহার করছেন। খামারিদের কাছে এটা ‘পামবড়ি’ নামে পরিচিত।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এ কাজে সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে গরুর চিকিৎসক হিসেবে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন শতাধিক ব্যক্তি। মূলত চিকিৎসার নামে গরু মোটাতাজাকরণে অবৈধ ইনজেকশনসহ বড়ি খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
বুধবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের মদা ব্যাপারীর হাট এলাকার খামারি জহুরুল ইসলামের বাড়িতে গেলে দেখা যায়, বিভিন্ন জাতের ১০টি গরু পালন করছেন তিনি।জহুরুল ইসলাম অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, ‘গরুগুলোকে নিয়মিত খাবারের পাশাপাশি বিভিন্ন ভিটামিন খাওয়ানো হয়। মোটাতাজাকরণে তিনি নিয়মিত ক্যাটোফস ইনজেকশন ব্যবহার করেন। মাসে ৫/৬টা ক্যাটোফস ইনজেকশন দেওয়া হয়। তাকে এ পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল বারেক। আর নিয়মিত বাড়িতে এসে ইনজেকশনগুলো পুশ করে দেন ওই অফিসের অফিস সহকারী বাদশা মিয়া। এর মধ্যে ওই খামারির একটি ষাঁড়ের দাম বাজারে নেওয়ার আগেই পাইকাররা ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম হাঁকিয়েছে।’
লাভজনক এ ব্যবসা দেখে একই এলাকার নিজাম, লুৎফর, মতিনসহ আরও অনেকে খামার স্থাপন করছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী এলাকার আমিনুল, বারবান্দার আশরাফুল, চর লাঠিয়াল ডাঙ্গার আব্দুল হাই, মুকুল, লালকুড়ার নুর ইসলাম, ধনারচর নতুনগ্রামের আছমত আলী, যাদুরচর নতুন গ্রমের ইসমাইল সহ ৪ শতাধিক খামারি একইপদ্ধতিতে গরু পালন করছেন।
রৌমারী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল বারেক অগ্রদৃষ্টিকে জানান, উপজেলায় ছোট বড় ৪শ’র বেশি গরু মোটাতাজাকরণ খামারি রয়েছে। শুধু স্ট্ররয়েড গ্রুপের ওষুধ বাদে বাজারে পাওয়া যায় এমন সব প্রকার ওষুধ মোটাতাজাকরণে যেকোনো মাত্রায় ব্যবহার করতে পারে খামারিরা। এতে কোনো ক্ষতি হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের বিক্রিবিল এলাকার আব্দুল বাতেন তিনি একটি বেসরকারি সংস্থা চরজীবিকায়ন প্রকল্প (সিএলপি)থেকে ৭দিনের পশু পালনের পশু ডাক্তার হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। স্বশিক্ষিত ওই ব্যক্তি এলাকায় পশু চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তিনি নিয়মিত বকবান্দা, বিক্রিবিল, পাহাড়তলী, চরলাঠিয়ালডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার খামারিদের গরুর চিকিৎসা দেন।
তার মতো বারবান্দার মমিন, ফখরুল, বাদশা, নুরমোহাম্মাদ,দাঁতভাঙ্গার আব্দুল হক, খন্জনমারার আব্দুর রহমান, ধনারচরের ইয়াকুব, সায়দাবাদের জাহাঙ্গীর, দুবলাবাড়ীর আব্দুল হাকিম, কোমরভাঙ্গির আজাহার আলীসহ শতাধিক নামমাত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে গরু মোটাতাজাকরণে চিকিৎসার নামে খামারিদের ইনজেকশন ব্যবহারে উৎসাহ দিয়ে থাকেন।