ঢাকা প্রতিনিধিঃ আফসানা ফেরদৌসের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে তার পরিবার।
রোববার (২১ আগস্ট) বিকেলে এক বিবৃতিতে তার পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেদনকে সঠিক ও নির্ভুল নয় বলে দাবি করেন।
বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করেছেন, আফসানার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এটি আত্মহত্যা। এই প্রতিবেদনটিকে সঠিক ও নির্ভুল বলে আমরা মনে করি না। বরং প্রতিবেদনটি যে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবমুক্ত নয় সে বিষয়টিও সন্দেহের বাইরে নয়। কারণ আফসানা যদি আত্মহত্যা করতো, তবে নিজ বাসাতেই করতো। নিজ বাসা ছাড়া কেউ আত্মহত্যা করার মতো মানসিক অবস্থায় থাকে না। বা পরিকল্পনা করে অন্য বাসায় বা স্থানে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে না। আর করলেও সেখানকার পাড়া-প্রতিবেশীরা ভিড় করে দেখার জন্য এবং সবাই জেনে যাবে ঘটনাটি, পুলিশ এসে মরদেহ নামায় এবং এটি সবারই জানা। আমরা এখনও মনে করি আফসানাকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ তাকে ঘটনার আগেই বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকেই মোবাইলে পাননি তার প্রতিবেশী, যিনি আফসানাকে নিজ মেয়ের মতো দেখতেন। পরে তিনি ক্রমাগতভাবে পরের দুইদিন শুক্রবার ও শনিবার (১২ ও ১৩ আগস্ট) দিনে-রাতে মোবাইলে ফোন দিয়েও কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি।
তারা প্রশ্ন রাখেন, আফসানা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার আল হেলাল হাসপাতালে মরদেহ পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত কোথায় ছিল? আফসানার মোবাইল (০১৭১৪৮৪৩২৯৪) ফোন কল ট্র্যাকিং করে কি তদন্তকারী পুলিশ সেটি বের করেছে? কেন করেনি এখনও?
তারা আবারও দাবি করেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটি নিশ্চিত যে, আফসানাকে কোনো না কোনাে একস্থানে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তারা কারণ হিসেবে বলেন, আফসানার স্বজনরা রবিনের বন্ধু পরিচয়দানকারীর ফোন পেয়ে মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতালে ছুটে গেলে সেখানে জানতে পারেন, দুজন যুবক আফসানা নামে একজন মেয়ের মরদেহ ফেলে পালিয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে খবর দিলে, পুলিশ মরদেহ কাফরুল থানায় নিয়ে যায়। সেখানে মরদেহের ছবি তোলার পর ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়। মরদেহের ছবি দেখে ও মর্গে আফসানার মরদেহ শনাক্ত করার সময় তার গলার মাঝ বরাবর গভীর দাগ লক্ষ্য করা যায়। দাগের ধরণ দেখে বোঝা যায় রশির মতো কোনো কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু ঘটানো হয়েছে। গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে যেমন দাগ হয়, তার গলার দাগটি তা থেকে ভিন্ন। আত্মহত্যায় যে দাগ হয়, সেটি হয় গলার উপরের কণ্ঠারোধ করার মতো এবং কিছুটা বাঁকানো এছাড়া মৃতদেহের স্পাইনাল কর্ডও ভাঙা থাকে। কিন্তু আফসানার মরদেহে সেরকম কিছুই ছিল না। সুতরাং এটি আত্মহত্যা বলে গ্রহনযোগ্য নয়।
পত্রিকার খবরের সূত্র ধরে বিবৃতিতে তারা জানান, পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় দুই বাসিন্দা কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, শুক্রবার (১২ আগস্ট) সন্ধ্যায় ওই এলাকার গুল মোহাম্মদ বাচ্চুর বাড়ি বা এর পাশ থেকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার শোনার কথা তারাও জেনেছেন। এলাকায় এ নিয়ে গুঞ্জন হয়েছিল। স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দেওয়া কয়েকজন যুবক একটি মেয়েকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে।
তারা আবারও দাবি করেন, আফসানা যদি আত্মহত্যা করেই থাকেন তবে তার পরিবারকে কেন তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনের বন্ধু সৌরভ পরিচয় দিয়ে ফোন করে জানানো হয় (অপরিচিত নং ০১৬২২৪০৬৭১৩) আফসানার মরদেহের কথা? কেন তখন জানানো হয়নি আত্মহত্যার কথা? কেনই বা মরদেহ দাফনের আগে পরে ফোন করে (অপরিচিত ০১৭৮৬৭৩৭৪৪৪, ০১৭৪৯১৭৩১৪৮) পরিবারকে বাড়াবাড়ি না করে প্রস্তাব দেওয়া হয় সমঝোতা করার জন্য?
আফসানার বিয়ের বিষয়টি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অনেকে ইতোমধ্যেই জেনেছেন যে, আফসানা ফেরদৌস তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিনকে বিয়ে করেছিল এবং তার সঙ্গে বিগত আড়াই বছর ধরে মিরপুরের মানিকদিতে ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে থাকতো। তাদের বিয়ের কাবিননামা বাড়িওয়ালা দেখেছেন এবং পুলিশ ছেঁড়া অবস্থায় সেই কাবিননামা আফসানার বাসা থেকে উদ্ধারও করেছে । প্রসঙ্গ হচ্ছে, দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন থাকতেই পারে, কিন্তু কেনো তাকে হত্যা করতে হবে? আর যদি আফসানা আত্মহত্যাই করে থাকে তবে, তার স্বামী হাবিবুর রহমান রবিন কেনো পলাতক? কেন সে স্ত্রীর নির্মম মৃত্যুতে শোকার্ত নয়? কেন সে তার ঘনিষ্ট বন্ধুসহ পলাতক? কেনো সে আত্মগোপনে?
একইসঙ্গে কেনো এখন পর্যন্ত পুলিশ রবিনকে গ্রেফতার/আটক বা ধরতে করেনি বলেও প্রশ্ন রাখেন তার পরিবারের সদস্যরা।