Menu |||

সিউডোসায়েসিস বা ‘ফলস প্রেগনেন্সি’, অতঃপর!

‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’ বাক্যটি টেনে টেনে সুর করে বলতে থাকে অপরিণত বয়স্ক কিশোরী মা তিথি। ছোট্ট আঁচলে বারবার আগলে ধরে আদরের ধনটিকে। বুকভরা মমতায় সন্তানটি আাঁচলের তলে মুখ লুকায়। প্রতিবেশী নীলা রহমান (ছদ্মনাম) বারান্দার গ্রিল দিয়ে তিথির সন্তানটিকে দেখে। ঐশ্বর্যের তীব্রতা সত্তে¡ও নীলার গৃহ শূন্য মরুভূমি। একটিবার ‘মা’ ডাকের অভাব তাকে ব্যাকুল করে দেয়। প্রতিবেশী তিথির ভাঙা গৃহকেই নবজাতকটির জন্য আকাশের রঙধনু মনে হয়। একদিন নীলা গর্ভে অনুভব করেন প্রাণের অস্তিত্ব। বিয়ের দীর্ঘ ১০ বছর পর মা হওয়ার ঘটনা তাকে আনন্দে আত্মহারা করে তোলে। কিন্তু গর্ভধারণের তিন মাস পরেই জানা যায়, আদৌ ছিল না কোনো গর্ভধারণ। তবে কেন নীলা ভ্রুণের অনুভব করলেন! এত বড় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো ভুল হতে পারে না। তবে কেন এমন হলো? পরিস্থিতির শিকার হন অনেক নারী। যার জন্য নীরবে, নিভৃতে সহ্য করতে হয় হাজারো কষ্ট। এটি এক ধরনের স্ত্রীরোগ। এর নাম সিউডোসায়েসিস বা স্পুরিয়াস প্রেগনেন্সি বা ফলস প্রেগনেন্সি অর্থাৎ মিথ্যে গর্ভধারণ। চলুন শুনি কয়েকজনের কথা।

কেস স্টাডি-১:
ঢাকা মোহাম্মদপুর নিবাসী সালমা হক (ছদ্মনাম)। বিয়ে হয়েছে সাত বছর আগে। স্বামী ইংল্যান্ডে থাকেন। বিত্তের অভাব নেই। শ্বশুর- শাশুড়ি, ননদ, দেবর সবাই চাকরি করেন। সালমার সারাটা দিন কাটে রান্নাঘর, গৃহপরিচারিকা আর খাঁচার ময়না পাখিটার সঙ্গে কথা বলে। আশপাশের ফ্ল্যাট থেকে ছোট্ট বাচ্চারা তার সঙ্গে খেলতে আসে। কলেজ জীবনের বন্ধু হাসান আহমেদও প্রায় আসে, তবু যেন দিন কাটে না। একটা ছোট্ট সন্তানের হাহাকার তাকে কাতর করে তোলে। স্বামী দূরে থাকলেও নিত্য যোগাযোগ করে। তবু দিনকে দিন হতাশা যেন ঝাপটে ধরে। স্বামী সজীব হকের ছবি নিয়েই কামনা করেন যদি তার চেহারার মতো ফুটফুটে একি শিশু থাকত। হঠাৎ একদিন সালমা উপলব্ধি করেন, তিনি মা হতে চলেছেন। সজীব পাঁচ মাস আগে দেশে এসেছিলেন। এতদিন পরে কীভাবে গর্ভধারণ সম্ভব? দীর্ঘ বছর পরে গর্ভধারণের খবরটি জানতে পেরে পাঁচ মাসের বিলম্বে কেউ গুরুত্বই দেয় না। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বয়ে যায় খুশির বন্যা। দিনে দিনে শরীর খুব খারাপ হতে থাকে, ওজন বাড়তে থাকে, বমি বমি ভাব, দুই পা ফুলে যায়। মাসি ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বশুর অর্ডার দিয়ে নকশাখচিত ব্যয়বহুল দোলনা নিয়ে আসেন। অধিক আনন্দে চোখের নিমিষেই কেটে যায় একটি মাস। অতঃপর চিকিৎসার পরীক্ষায় জানা যায়, এটি গর্ভধারণ নয়, এক ধরনের ব্যাধি। দৈহিক হরমোনজনিত পরিবর্তনের জন্য এমন হয়। কিন্তু কেউ চিকিৎসকের কথা বিশ্বাস করে না। সবার ধারণা, সালমা ও বন্ধু হাসানের অবৈধতার ফসল ছিল সেটি। হয়তো ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে এক মাসের মধ্যেই গোপনে গর্ভপাত করেছে। শাশুড়ির ধারণা, সারাদিন বাড়ি ফাঁকা থাকে, বউমার কোনো বন্ধু আসে, বউমা তার ঘরের দরজা সবসময় বন্ধ রাখে, না জানি কী করেছে! উচ্চশিক্ষিত শাশুড়ির এমন নিকৃষ্ট মনমানসিকতায় সালমা হতবাক হয়ে যান।

সালমা উপায়হীন হয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করেন। তার পবিত্র দেহে ছিল না বিন্দু পরিমাণও অবৈধতার আঁচড়। তবে কেন এমন হলো? সজীব হক স্ত্রীর সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। মানসিক সাহস দেওয়া তো দূরের কথা, সালমার মা-বাবার পরিবারও তাকে ভুল বোঝে। কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ড থেকে আসে একটা নীল খাম। কিন্তু প্রেমপত্র নয়, তালাকনামা। সবার লাঞ্ছনা ও প্রাণপ্রিয় স্বামীর নির্মমতায় সালমা হক বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন। তার স্থান পাবনার হেমায়েতপুর।

কেস স্টাডি-২:
মহুয়া ইসলাম (ছদ্মনাম), চট্টগ্রাম নিবাসী। পেশায় প্রশিকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বয়স ৪৫ ছুঁইছুঁই। তার স্বামী মাহবুব আনাম ঢাকার এক কলেজের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক। তাদের মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে আর ছেলে জাপানে অধ্যয়নরত। আর দুই বছরের মধ্যেই মাহবুব আনাম চাকরিতে অবসর পাবেন। কর্মস্থল দুই জায়গা হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীতে প্রায় পাঁচ-ছয় মাস পর দেখা হয়। হঠাৎ একদিন অফিসের জরুরি সভাতে মহুয়ার মনে হয় পুরো কক্ষটা বৃত্তাকারে দুলছে। এত মানুষজনের সামনে কোনোমতে বমির বেগ সামলান। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবিষ্কার করেন গর্ভধারণের সব উপসর্গ। প্রথমদিকে কাজের চাপে খেয়ালই করেননা। একমাসের মধ্যেই পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠে। স্বামীর সঙ্গে ছয় মাস দেখা না হওয়া ও গর্ভনিরোধক সত্তে¡ও এমন পরিস্থিতি জেনে স্বামী ভুল বোঝেন।

মাহবুব আনাম শিক্ষক অর্থাৎ মানুষ গড়ার কারিগর। নিত্য মনোবিজ্ঞানের চর্চা করেও স্ত্রীর মন বুঝলেন না। কীভাবে এমন হলো স্ত্রীকে প্রশ্নও করলেন না। এত বছরের বিশ্বাস, বন্ধুত্ব সব ভেঙে গেল অনাকাঙ্খিত এই ঝড়ো হাওয়ায়। বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞও (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তার ভুল চিকিৎসা করেন। তিনিও জানান গর্ভধারনের বার্তা। এত সচেতনতা সত্তে¡ও কেন এমন হলো? এ প্রশ্নের উত্তর তার নিজেরও অজানা। ‘দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ধায়’ এই প্রবাদ বাক্যটি মহুয়া ইসলামের জীবনে সত্যি হলো। তার সহকর্মীসহ সব আত্মীয়স্বজনের মাঝে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেল। নিজের মেয়েও মাকে বলল, ‘তোমাকে জন্মদাত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে আমার ঘৃণা হয়। তুমি এত নিচে নামতে পারো, আমি কল্পনাই করিনি। তোমার জন্য শ্বশুরবাড়িতে আমি মুখ দেখাতে পারি না। ছিঃ মা, ছিঃ!’

২৫ বছরের গড়া সংসারটি চোখের নিমিষেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। স্বামীও দোষারোপ করতে থাকেন, ‘এবার বুঝেছি, কাজের মিথ্যা অজুহাতে তুমি কীসব করে বেড়াও। তোমার মুখ দেখার আগেই যেন আমার মরণ হয়।’ নোংরা মন্তব্যগুলো মহুয়া ইসলামের বুকে বজ্রপাত হানে। পুনরায় পরীক্ষা করে জানা যায়, আগের তথ্য ভুল ছিল। একই চিকিৎসক জানান, সেটা ছিল ব্যাধি। কিন্তু ততদিনে মাহবুব আনাম চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে লোকলজ্জায় ছেলের কাছে চলে যান। ২৫ বছরের সংসারে উপহার দিয়ে গেছেন তালাকনামা। চরম আত্মসম্মান বোধের কাছে মহুয়া ইসলাম তার ভাঙা মনটাকে আর জোড়া দিতে পারেন না। কষ্টে, অভিমানে গর্ভধারণের ভুল তথ্যটি তার পরবারের কাউকে আর জানাননি। স্বামী- সন্তান থাকা সত্তে¡ও সন্তানহারা ও বিধবার মতো জীবন যাপন করছেন।

কেস স্টাডি-৩:
কুড়িগ্রামের দরিদ্র কৃষকের মেয়ে জরিনা। বয়স আনুমানিক ১৯ হলেও মঙ্গা, অনাহারের জন্য সঠিক বর্ধন হয়নি। তার বয়স ১১-১২ মনে হয়। বাবার নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে যৌতুকের দায়ে তার বিয়ে হয়নি। তার খুব ইচ্ছা করে লাল পেড়ে শাড়ি, হাতভর্তি চুড়িতে বউ সাজতে। তার সব বান্ধবীর মতো সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে থাকতে। তীব্র এ ইচ্ছাটা নিজের মাঝে চেপে রাখতে রাখতেই জরিনা অনুভব করে তার দেহে ছোট্ট এক মানুষের আগমনী বার্তা। প্রতিদিন সকালে চোখ মেললেই তার প্রচন্ড বমি পায়। সব উপসর্গ গর্ভধারণের সঙ্গে মিলে যায়। শরীরিক সম্পর্ক ব্যতীত গর্ভধারণ, জরিনার মনে হাজারো প্রশ্নের উদ্রেক করে। বাবা, মেয়ের একটিই ঘর। ঘরের দরজাও ভাঙা। তবে কি রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে নোংরা কোনো পুরুষ তাকে …! কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। গ্রামবাসী তাকে ভুল বোঝে। তাকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়। অবশেষে বাবার অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে জরিনা পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। সে আত্মহত্যা করে।

কেস স্টাডি-৪:
ঢাকার গুলশান নিবাসী নির্মিতা খান (ছদ্মনাম)। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে পড়েন। নির্মিতা খান পড়ার পাশাপাশি র্যাম্প মডেলিংয়ে জড়িত। পাঁচ বছরের আগে কোনোক্রমেই মা হতে চান না। হঠাৎ তিনি উপলব্ধি করেন, তিনি মা হতে চলেছেন। তার তলপেট ও দুই পা ফুলে যায়। প্রতিদিন ক্যালেন্ডার দেখে গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার পরও কেন এমন হলো? ব্যাপারটা নির্মিতার বোধগম্য হয় না। এই পরিস্থিতির জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কোন ভুল খুঁজে পায় না। গর্ভস ারের জন্য বিশাল বাজেটের বিদেশী সংস্থার কাজ পেয়েও তা ফিরিয়ে দেন নির্মিতা। কারণ স্থাপত্যের কাজে শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ছোটাছুটি করতে হয়। পরে চিকিৎসকের কাছে অবহিত হন, এটি গর্ভধারণ নয়। গর্ভধারণ সম্পর্কে নির্মিতার অধিক ভীতির কারণে এমন হয়েছে। দুই মাসের ভুল ধারণায় দুর্ভাগ্যবশত তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে হাত ফসকে চলে যায় সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের দেশে এমন অগণিত নারী রয়েছে, যারা সিউডোসায়েসিসে আক্রান্ত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবাহিতদেরই হয়। অবিবাহিতদের হয় খুবই নগণ্য।

এই অসুখের কারণগুলো হলো-
* বন্ধ্যা, সন্তানহীন নারী যারা ভীষণ পরিমাণে সন্তান কামনা করেন তাদের চেতনায় সন্তানের জন্য সর্বদা আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে হরমোন জড়িত। ফলে দেহে হরমোনজনিত পরিবর্তন আসে। অনেক সময় গর্ভধারণে অধিক ভয়ের কারণেও এমন হয়। শারীরিক সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকার জন্য ভ্রুণ জন্ম নেয় না কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণগুলো গর্ভস ারের সঙ্গে মিলে যায়।

*যেসব নারীর বয়স ৪৫-৫৫ তাদের প্রকৃতির নিয়মে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন মানসিক ও হরমোনজনিত কারণে এমন হয়। এই রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, রোগের কারণ জানার পরই লক্ষণগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই উধাও হতে থাকে। রোগী পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।

*দেহের সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে মনস্তাত্তিক ব্যাপার জড়িত। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। তাই এই ব্যাধির জন্য শারীরিক ও মানসিক দিক উভয়ই দায়ী।

যারা এর রোগের শিকার হন-
*বন্ধ্যা, সন্তানহীন নারী
*যারা গর্ভধারণকে প্রচন্ড ভয় পায়
*যারা নিত্য বউ বা মা হতে চায়
*দাম্পত্য জীবনে যাদের স্বামী দূরে থাকেন এবং যারা প্রচন্ড পরিমাণে একাকিত্বে ভোগেন।

সিউডোসায়েসিসের লক্ষণগুলো
*এক বা দুই মাস ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
*তলপেট ভারী হতে থাকে
*দেহের ওজন বাড়ে
*বমি বমি লাগে, টক খেতে ইচ্ছে হয়
*কোনো কোনো রোগীর পা ফুলে যায়
*প্রতিদিন সকালে শরীর খুব খারাপ লাগে
*মাথা ঘোরায়
*নিম্ন রক্তচাপ হয়
*রক্তশূন্যতাও থাকতে পারে
*রোগী তার গর্ভে যেন প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে।

কিন্তু রোগী তার রোগ সম্পর্কে জানার কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। এই রোগ এক বা দুই মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। রোগী ব্যতীত অনেকেই ভাবেন এটা রোগীর কু-মতলবি। অথচ এটা ব্যাধি। রোগী ও পরিবারের সবাই সচেতন হলে এ ব্যাধিটি মানবজীবনে এত ভায়বহ আকার নিত না। চিকিৎসক, পরিবার পরিকল্পনার ব্যক্তিরা ছাড়া পুরো দেশবাসীই এই বিষয়ে অজ্ঞ। তবে ছোট্ট এ রোগটি ক্যান্সার, এইডস বা এইচআইভির মতো ঘাতক ব্যাধি নয়। এ রোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. টি এ চৌধুরী বলেন, ‘বিয়ে পরবর্তী জীবনে নারীদের ব্যাপক জটিলতার মাঝে এটি একেবারেই নগণ্য। শুধু কারণ ও প্রতিকারের অভাবে এটি জটিল হয়ে যাচ্ছে। গর্ভধারণ সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা, সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাব ও পারিবারিক অসহযোগিতা এর জন্য দায়ী। আমার দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে এমন অনেক রোগীর কাহিনী জানি। তাদের স্মৃতি আজও আমাকে কষ্ট দেয়। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন।’

শিকদার মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল এর স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিন্নাত আরা নাসরীন বলেন, ‘সিউডোসায়েসিস সামান্য এক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। নির্দিষ্ট বয়সের পরে যে কোনো নারী এই রোগের শিকার হতে পারে। এটা জরায়ু বা স্তন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ নয়। পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতাই পারে, এই রোগ দূর করতে।’

সামান্য এক রোগে আমাদের দেশের হাজারো নির্মিতা খান, নীলা রহমান, জরিনা ভয়ানক সমস্যায় পতিত হচ্ছেন। অনেকেই শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের মানসিক ও সামাজিক সমস্যায়।

 

 

ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যাচ্ছেন কুয়েত প্রবাসীরা
প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কাজ-বেতন না দিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

» গ্রীন ক্রিসেন্ট সোসাইটির পক্ষে ঈদ সামগ্রী বিতরণে কুয়েতের সহায়তা

» সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশে ঈদ ১০ এপ্রিল

» বাংলাদেশ কমিউনিটি কুয়েতের পক্ষে মারা যাওয়া প্রবাসীর পরিবারকে আর্থিক সহায়তা

» কুয়েতে প্রবাসী তরুণদের উদ্যোগে রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

» কুয়েত যুবলীগের কর্মী সভা, ইফতার বিতরণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

» জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যাচ্ছেন কুয়েত প্রবাসীরা

» সার্চ ফলাফল আর ফ্রি রাখবে না গুগল

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

সিউডোসায়েসিস বা ‘ফলস প্রেগনেন্সি’, অতঃপর!

‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা’ বাক্যটি টেনে টেনে সুর করে বলতে থাকে অপরিণত বয়স্ক কিশোরী মা তিথি। ছোট্ট আঁচলে বারবার আগলে ধরে আদরের ধনটিকে। বুকভরা মমতায় সন্তানটি আাঁচলের তলে মুখ লুকায়। প্রতিবেশী নীলা রহমান (ছদ্মনাম) বারান্দার গ্রিল দিয়ে তিথির সন্তানটিকে দেখে। ঐশ্বর্যের তীব্রতা সত্তে¡ও নীলার গৃহ শূন্য মরুভূমি। একটিবার ‘মা’ ডাকের অভাব তাকে ব্যাকুল করে দেয়। প্রতিবেশী তিথির ভাঙা গৃহকেই নবজাতকটির জন্য আকাশের রঙধনু মনে হয়। একদিন নীলা গর্ভে অনুভব করেন প্রাণের অস্তিত্ব। বিয়ের দীর্ঘ ১০ বছর পর মা হওয়ার ঘটনা তাকে আনন্দে আত্মহারা করে তোলে। কিন্তু গর্ভধারণের তিন মাস পরেই জানা যায়, আদৌ ছিল না কোনো গর্ভধারণ। তবে কেন নীলা ভ্রুণের অনুভব করলেন! এত বড় স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো ভুল হতে পারে না। তবে কেন এমন হলো? পরিস্থিতির শিকার হন অনেক নারী। যার জন্য নীরবে, নিভৃতে সহ্য করতে হয় হাজারো কষ্ট। এটি এক ধরনের স্ত্রীরোগ। এর নাম সিউডোসায়েসিস বা স্পুরিয়াস প্রেগনেন্সি বা ফলস প্রেগনেন্সি অর্থাৎ মিথ্যে গর্ভধারণ। চলুন শুনি কয়েকজনের কথা।

কেস স্টাডি-১:
ঢাকা মোহাম্মদপুর নিবাসী সালমা হক (ছদ্মনাম)। বিয়ে হয়েছে সাত বছর আগে। স্বামী ইংল্যান্ডে থাকেন। বিত্তের অভাব নেই। শ্বশুর- শাশুড়ি, ননদ, দেবর সবাই চাকরি করেন। সালমার সারাটা দিন কাটে রান্নাঘর, গৃহপরিচারিকা আর খাঁচার ময়না পাখিটার সঙ্গে কথা বলে। আশপাশের ফ্ল্যাট থেকে ছোট্ট বাচ্চারা তার সঙ্গে খেলতে আসে। কলেজ জীবনের বন্ধু হাসান আহমেদও প্রায় আসে, তবু যেন দিন কাটে না। একটা ছোট্ট সন্তানের হাহাকার তাকে কাতর করে তোলে। স্বামী দূরে থাকলেও নিত্য যোগাযোগ করে। তবু দিনকে দিন হতাশা যেন ঝাপটে ধরে। স্বামী সজীব হকের ছবি নিয়েই কামনা করেন যদি তার চেহারার মতো ফুটফুটে একি শিশু থাকত। হঠাৎ একদিন সালমা উপলব্ধি করেন, তিনি মা হতে চলেছেন। সজীব পাঁচ মাস আগে দেশে এসেছিলেন। এতদিন পরে কীভাবে গর্ভধারণ সম্ভব? দীর্ঘ বছর পরে গর্ভধারণের খবরটি জানতে পেরে পাঁচ মাসের বিলম্বে কেউ গুরুত্বই দেয় না। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের মাঝে বয়ে যায় খুশির বন্যা। দিনে দিনে শরীর খুব খারাপ হতে থাকে, ওজন বাড়তে থাকে, বমি বমি ভাব, দুই পা ফুলে যায়। মাসি ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। শ্বশুর অর্ডার দিয়ে নকশাখচিত ব্যয়বহুল দোলনা নিয়ে আসেন। অধিক আনন্দে চোখের নিমিষেই কেটে যায় একটি মাস। অতঃপর চিকিৎসার পরীক্ষায় জানা যায়, এটি গর্ভধারণ নয়, এক ধরনের ব্যাধি। দৈহিক হরমোনজনিত পরিবর্তনের জন্য এমন হয়। কিন্তু কেউ চিকিৎসকের কথা বিশ্বাস করে না। সবার ধারণা, সালমা ও বন্ধু হাসানের অবৈধতার ফসল ছিল সেটি। হয়তো ধরা পরে যাওয়ার ভয়ে এক মাসের মধ্যেই গোপনে গর্ভপাত করেছে। শাশুড়ির ধারণা, সারাদিন বাড়ি ফাঁকা থাকে, বউমার কোনো বন্ধু আসে, বউমা তার ঘরের দরজা সবসময় বন্ধ রাখে, না জানি কী করেছে! উচ্চশিক্ষিত শাশুড়ির এমন নিকৃষ্ট মনমানসিকতায় সালমা হতবাক হয়ে যান।

সালমা উপায়হীন হয়ে মুখ বুজে সব সহ্য করেন। তার পবিত্র দেহে ছিল না বিন্দু পরিমাণও অবৈধতার আঁচড়। তবে কেন এমন হলো? সজীব হক স্ত্রীর সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। মানসিক সাহস দেওয়া তো দূরের কথা, সালমার মা-বাবার পরিবারও তাকে ভুল বোঝে। কিছুদিনের মধ্যেই ইংল্যান্ড থেকে আসে একটা নীল খাম। কিন্তু প্রেমপত্র নয়, তালাকনামা। সবার লাঞ্ছনা ও প্রাণপ্রিয় স্বামীর নির্মমতায় সালমা হক বর্তমানে মানসিক ভারসাম্যহীন। তার স্থান পাবনার হেমায়েতপুর।

কেস স্টাডি-২:
মহুয়া ইসলাম (ছদ্মনাম), চট্টগ্রাম নিবাসী। পেশায় প্রশিকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বয়স ৪৫ ছুঁইছুঁই। তার স্বামী মাহবুব আনাম ঢাকার এক কলেজের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক। তাদের মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে আর ছেলে জাপানে অধ্যয়নরত। আর দুই বছরের মধ্যেই মাহবুব আনাম চাকরিতে অবসর পাবেন। কর্মস্থল দুই জায়গা হওয়ায় স্বামী-স্ত্রীতে প্রায় পাঁচ-ছয় মাস পর দেখা হয়। হঠাৎ একদিন অফিসের জরুরি সভাতে মহুয়ার মনে হয় পুরো কক্ষটা বৃত্তাকারে দুলছে। এত মানুষজনের সামনে কোনোমতে বমির বেগ সামলান। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আবিষ্কার করেন গর্ভধারণের সব উপসর্গ। প্রথমদিকে কাজের চাপে খেয়ালই করেননা। একমাসের মধ্যেই পরিস্থিতি গুরুতর হয়ে ওঠে। স্বামীর সঙ্গে ছয় মাস দেখা না হওয়া ও গর্ভনিরোধক সত্তে¡ও এমন পরিস্থিতি জেনে স্বামী ভুল বোঝেন।

মাহবুব আনাম শিক্ষক অর্থাৎ মানুষ গড়ার কারিগর। নিত্য মনোবিজ্ঞানের চর্চা করেও স্ত্রীর মন বুঝলেন না। কীভাবে এমন হলো স্ত্রীকে প্রশ্নও করলেন না। এত বছরের বিশ্বাস, বন্ধুত্ব সব ভেঙে গেল অনাকাঙ্খিত এই ঝড়ো হাওয়ায়। বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞও (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) তার ভুল চিকিৎসা করেন। তিনিও জানান গর্ভধারনের বার্তা। এত সচেতনতা সত্তে¡ও কেন এমন হলো? এ প্রশ্নের উত্তর তার নিজেরও অজানা। ‘দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ধায়’ এই প্রবাদ বাক্যটি মহুয়া ইসলামের জীবনে সত্যি হলো। তার সহকর্মীসহ সব আত্মীয়স্বজনের মাঝে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেল। নিজের মেয়েও মাকে বলল, ‘তোমাকে জন্মদাত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে আমার ঘৃণা হয়। তুমি এত নিচে নামতে পারো, আমি কল্পনাই করিনি। তোমার জন্য শ্বশুরবাড়িতে আমি মুখ দেখাতে পারি না। ছিঃ মা, ছিঃ!’

২৫ বছরের গড়া সংসারটি চোখের নিমিষেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায়। স্বামীও দোষারোপ করতে থাকেন, ‘এবার বুঝেছি, কাজের মিথ্যা অজুহাতে তুমি কীসব করে বেড়াও। তোমার মুখ দেখার আগেই যেন আমার মরণ হয়।’ নোংরা মন্তব্যগুলো মহুয়া ইসলামের বুকে বজ্রপাত হানে। পুনরায় পরীক্ষা করে জানা যায়, আগের তথ্য ভুল ছিল। একই চিকিৎসক জানান, সেটা ছিল ব্যাধি। কিন্তু ততদিনে মাহবুব আনাম চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে লোকলজ্জায় ছেলের কাছে চলে যান। ২৫ বছরের সংসারে উপহার দিয়ে গেছেন তালাকনামা। চরম আত্মসম্মান বোধের কাছে মহুয়া ইসলাম তার ভাঙা মনটাকে আর জোড়া দিতে পারেন না। কষ্টে, অভিমানে গর্ভধারণের ভুল তথ্যটি তার পরবারের কাউকে আর জানাননি। স্বামী- সন্তান থাকা সত্তে¡ও সন্তানহারা ও বিধবার মতো জীবন যাপন করছেন।

কেস স্টাডি-৩:
কুড়িগ্রামের দরিদ্র কৃষকের মেয়ে জরিনা। বয়স আনুমানিক ১৯ হলেও মঙ্গা, অনাহারের জন্য সঠিক বর্ধন হয়নি। তার বয়স ১১-১২ মনে হয়। বাবার নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে যৌতুকের দায়ে তার বিয়ে হয়নি। তার খুব ইচ্ছা করে লাল পেড়ে শাড়ি, হাতভর্তি চুড়িতে বউ সাজতে। তার সব বান্ধবীর মতো সন্তান নিয়ে স্বামীর ঘরে থাকতে। তীব্র এ ইচ্ছাটা নিজের মাঝে চেপে রাখতে রাখতেই জরিনা অনুভব করে তার দেহে ছোট্ট এক মানুষের আগমনী বার্তা। প্রতিদিন সকালে চোখ মেললেই তার প্রচন্ড বমি পায়। সব উপসর্গ গর্ভধারণের সঙ্গে মিলে যায়। শরীরিক সম্পর্ক ব্যতীত গর্ভধারণ, জরিনার মনে হাজারো প্রশ্নের উদ্রেক করে। বাবা, মেয়ের একটিই ঘর। ঘরের দরজাও ভাঙা। তবে কি রাতের বেলা ঘুমের ঘোরে নোংরা কোনো পুরুষ তাকে …! কিন্তু সেটা তো অসম্ভব। গ্রামবাসী তাকে ভুল বোঝে। তাকে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়। অবশেষে বাবার অপমান ও লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে জরিনা পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। সে আত্মহত্যা করে।

কেস স্টাডি-৪:
ঢাকার গুলশান নিবাসী নির্মিতা খান (ছদ্মনাম)। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগে পড়েন। নির্মিতা খান পড়ার পাশাপাশি র্যাম্প মডেলিংয়ে জড়িত। পাঁচ বছরের আগে কোনোক্রমেই মা হতে চান না। হঠাৎ তিনি উপলব্ধি করেন, তিনি মা হতে চলেছেন। তার তলপেট ও দুই পা ফুলে যায়। প্রতিদিন ক্যালেন্ডার দেখে গর্ভনিরোধক বড়ি খাওয়ার পরও কেন এমন হলো? ব্যাপারটা নির্মিতার বোধগম্য হয় না। এই পরিস্থিতির জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়েই কোন ভুল খুঁজে পায় না। গর্ভস ারের জন্য বিশাল বাজেটের বিদেশী সংস্থার কাজ পেয়েও তা ফিরিয়ে দেন নির্মিতা। কারণ স্থাপত্যের কাজে শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর ছোটাছুটি করতে হয়। পরে চিকিৎসকের কাছে অবহিত হন, এটি গর্ভধারণ নয়। গর্ভধারণ সম্পর্কে নির্মিতার অধিক ভীতির কারণে এমন হয়েছে। দুই মাসের ভুল ধারণায় দুর্ভাগ্যবশত তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে হাত ফসকে চলে যায় সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের দেশে এমন অগণিত নারী রয়েছে, যারা সিউডোসায়েসিসে আক্রান্ত হন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিবাহিতদেরই হয়। অবিবাহিতদের হয় খুবই নগণ্য।

এই অসুখের কারণগুলো হলো-
* বন্ধ্যা, সন্তানহীন নারী যারা ভীষণ পরিমাণে সন্তান কামনা করেন তাদের চেতনায় সন্তানের জন্য সর্বদা আকাঙ্ক্ষা কাজ করে। মানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে হরমোন জড়িত। ফলে দেহে হরমোনজনিত পরিবর্তন আসে। অনেক সময় গর্ভধারণে অধিক ভয়ের কারণেও এমন হয়। শারীরিক সম্পর্ক অনুপস্থিত থাকার জন্য ভ্রুণ জন্ম নেয় না কিন্তু প্রাথমিক লক্ষণগুলো গর্ভস ারের সঙ্গে মিলে যায়।

*যেসব নারীর বয়স ৪৫-৫৫ তাদের প্রকৃতির নিয়মে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন মানসিক ও হরমোনজনিত কারণে এমন হয়। এই রোগের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, রোগের কারণ জানার পরই লক্ষণগুলো কয়েকদিনের মধ্যেই উধাও হতে থাকে। রোগী পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে।

*দেহের সব ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে মনস্তাত্তিক ব্যাপার জড়িত। আর এটি নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। তাই এই ব্যাধির জন্য শারীরিক ও মানসিক দিক উভয়ই দায়ী।

যারা এর রোগের শিকার হন-
*বন্ধ্যা, সন্তানহীন নারী
*যারা গর্ভধারণকে প্রচন্ড ভয় পায়
*যারা নিত্য বউ বা মা হতে চায়
*দাম্পত্য জীবনে যাদের স্বামী দূরে থাকেন এবং যারা প্রচন্ড পরিমাণে একাকিত্বে ভোগেন।

সিউডোসায়েসিসের লক্ষণগুলো
*এক বা দুই মাস ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়।
*তলপেট ভারী হতে থাকে
*দেহের ওজন বাড়ে
*বমি বমি লাগে, টক খেতে ইচ্ছে হয়
*কোনো কোনো রোগীর পা ফুলে যায়
*প্রতিদিন সকালে শরীর খুব খারাপ লাগে
*মাথা ঘোরায়
*নিম্ন রক্তচাপ হয়
*রক্তশূন্যতাও থাকতে পারে
*রোগী তার গর্ভে যেন প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করে।

কিন্তু রোগী তার রোগ সম্পর্কে জানার কিছুদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়। এই রোগ এক বা দুই মাসের বেশি স্থায়ী হয় না। রোগী ব্যতীত অনেকেই ভাবেন এটা রোগীর কু-মতলবি। অথচ এটা ব্যাধি। রোগী ও পরিবারের সবাই সচেতন হলে এ ব্যাধিটি মানবজীবনে এত ভায়বহ আকার নিত না। চিকিৎসক, পরিবার পরিকল্পনার ব্যক্তিরা ছাড়া পুরো দেশবাসীই এই বিষয়ে অজ্ঞ। তবে ছোট্ট এ রোগটি ক্যান্সার, এইডস বা এইচআইভির মতো ঘাতক ব্যাধি নয়। এ রোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. টি এ চৌধুরী বলেন, ‘বিয়ে পরবর্তী জীবনে নারীদের ব্যাপক জটিলতার মাঝে এটি একেবারেই নগণ্য। শুধু কারণ ও প্রতিকারের অভাবে এটি জটিল হয়ে যাচ্ছে। গর্ভধারণ সম্পর্কে মানুষের অজ্ঞতা, সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাব ও পারিবারিক অসহযোগিতা এর জন্য দায়ী। আমার দীর্ঘ চিকিৎসা জীবনে এমন অনেক রোগীর কাহিনী জানি। তাদের স্মৃতি আজও আমাকে কষ্ট দেয়। এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও মানসিক বিশ্রাম প্রয়োজন।’

শিকদার মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল এর স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. জিন্নাত আরা নাসরীন বলেন, ‘সিউডোসায়েসিস সামান্য এক শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন। নির্দিষ্ট বয়সের পরে যে কোনো নারী এই রোগের শিকার হতে পারে। এটা জরায়ু বা স্তন ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ নয়। পারিবারিক ও সামাজিক সহযোগিতাই পারে, এই রোগ দূর করতে।’

সামান্য এক রোগে আমাদের দেশের হাজারো নির্মিতা খান, নীলা রহমান, জরিনা ভয়ানক সমস্যায় পতিত হচ্ছেন। অনেকেই শিকার হচ্ছেন বিভিন্ন ধরণের মানসিক ও সামাজিক সমস্যায়।

 

 

ফারহানা মোবিন
চিকিৎসক, লেখক ও উপস্থাপিকা

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যাচ্ছেন কুয়েত প্রবাসীরা
প্রবাসী কর্মীর প্রতিবন্ধী সন্তানদের " প্রতিবন্ধী ভাতা" প্রদানের দরখাস্ত আহ্বান
প্রবাসী স্বজন ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
পান খাওয়া মানুষদের দেশে দেয়ালের রঙ লাগেনা
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আনসার হোসেন চৌধুরী কুয়েতে মারা গেছেন
নায়ক ফেরদৌসের স্ত্রীর বিচক্ষণতায় বাঁচল বিমানে থাকা ২৯৭ জনের প্রাণ
জালালাবাদ এসোসিয়েশন ঢাকার পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত
মালয়েশিয়ায় শ্রমিকদের কাজ-বেতন না দিলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নতুন মন্ত্রিসভায় ঠাঁই হলো না সিলেটের চার মন্ত্রীর
প্রবাসীকে স্যালুট দিয়ে এমপি হিসেবে যাত্রা শুরু করলেন ব্যারিস্টার সুমন


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (রাত ১১:০৫)
  • ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ৮ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ১৮ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।