আ,হ জুবেদঃ ঐতিহ্যবাহী শাহ্ দরং শাহ্’র মেলা মানে লক্ষ লক্ষ শাহ্ দরং পীর ভক্ত অনুরাগীদের আগমন ঘটে প্রতি বছরের মাঘ মাসের প্রথম সপ্তাহে মৌলভীবাজার জেলার সদর থানাধীন বেকামুড়া গ্রামে।
৩৬০ আউলিয়ার দেশ সিলেট অঞ্চলের প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শত শত পীর আউলিয়ার মাজার। যদিও আজ অবধি কেউই সুনির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারেননি ৩৬০ আউলিয়ার মাজার কোথায় অবস্থিত। এমনকি ৩৬০ আউলিয়ার নাম এবং তাদের মাজারের স্থান উল্লেখ করে এখন পর্যন্ত কোনো পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস কেউই উপস্থাপন করতে পারেননি।
তবে এই অঞ্চলে গত কয়েক দশক ধরে একটি নেতিবাচক প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা গেছে যে, ভুয়া পীরের মাজারের সংখ্যা ক্রমাগত ভাবে বাড়ছে।
বেকামুড়া গ্রামের পুর্বপুরুষদের মতে মরহুম পীর শাহ্ দরং শাহ্ ৩৬০ আউলিয়ার সঙ্গের সাথী একজন পীর ছিলেন।
শাহ্ দরং শাহ্’র মৃত্যুবরণ এর পর থেকেই উক্ত এলাকার পুর্বপুরুষদের ন্যায় তার ভক্তনুরাগী ও বংশধর দাবীদার একাংশ মানুষরা মেলা-উরুস আয়োজন করে আসছেন।
এবার গত ২০শে জানুয়ারি ২০১৬ইং রোজ বুধবার অগ্রদৃষ্টি অনলাইন মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক আ,হ জুবেদ মরহুম পীর শাহ্ দরং শাহ্’র মেলা-উরুস পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন।
তবে উল্লেখ্য যে, সেখানে ঘটমান কিছু অনিয়ম উনাকে প্রচণ্ড বিব্রত করেছে।
বাংলাদেশের সর্বত্রে মেলা মানে জুয়া খেলার একটি বিরাট আসর, এটি প্রায় সব মেলাতেই কমবেশি লক্ষ্য করাগেছে। যদিও বেকামুড়ার মেলার পুর্ব ইতিহাস বলে একসময় এখানেও জুয়ার বিরাট আসর বসতো; কিন্তু এখন বেকামুড়ার মেলার আয়োজকরা আগেকার সব অপসংস্কৃতি পরিহার করে, সমাজ-জাতি বিনষ্ট, বিপথগামী পন্থা জুয়া নামক অবৈধ খেলা থেকে পুরোটাই বেরিয়ে এসেছেন।
তবে এবার উক্ত মেলাতে অগ্রদৃষ্টি অনলাইন মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক আ,হ জুবেদকে যে বিষয়টি প্রচণ্ড ভাবে বিব্রত করেছে; সেটি হলো যে,উক্ত মেলার পশ্চিম পাশে একদিকে বৃহৎ এক অংশ নরনারী কর্তৃক বাদ্যযন্ত্র দ্বারা বিরামহীন ভাবে গান-বাজনায় মদ-গাজায় মগ্ন অন্যদিকে এরই একদম পাশেই গুটিকয়েক লোক টুপি পরিহিত অবস্থায় বিরামহীন ভাবে আল্লাহু আল্লাহু ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তুলেছিল আশপাশ এলাকা।
উরুস ও মেলার কার্যক্রম, নিয়মনীতি কি ধরনের হওয়া প্রয়োজন সেটি নিশ্চয়’ই সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা ভালোভাবেই জানেন; কিন্তু যে প্রশ্নটি জনমনে বিরাজমান, তাহলো যে, পাশাপাশি একই জায়গায় গান-বাজনা মদ-গাজার মহা উৎসব এবং মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের জন্য মাহফিলের আয়োজন কতটুকু যৌক্তিক ছিল এনিয়ে উক্ত এলাকা ছাড়াও উরুস-মেলাতে আগত অসংখ্য মানুষদের মধ্যে শত প্রশ্নের জন্মই শুধু দেয়নি; বলাচলে উরুস-মেলা পরিচালনা কমিটির প্রতি শত শত মানুষের এক ধরনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এদিকে এব্যাপারে স্থানীয় ইউপি মেম্বার মোশাইদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, দেখুন বেকামুড়ার ঐতিহ্যবাহী উরুস-মেলাটি শুধুমাত্র একটি পরিবারের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে, আমি বা আমরা অনেক কিছুই জানিনা। তবে গত ৩/৪ বছর ধরে কিছু অনিয়ম এই মেলাতে হয়ে আসছে এটি ব্যক্তিগত ভাবে আমি স্বীকার করছি।
কিন্তু আমি সহ এলাকার অনেক’ই চেষ্টা করেছি ওয়াজ মাহফিল ও গান-বাজনা যেনো একই সঙ্গে না হয় এবং এরকম কার্যক্রম থেকে উভয় পক্ষকে বিরত থাকার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করেছি।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে উনারা কেউ’ই আমাদের কথা শুনছেন না।
বেকামুড়া গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বি হীরা মিয়াকে টেলিফোনে ঐতিহ্যবাহী শাহ্ দরং শাহ্’র মেলায় ওয়াজ মাহফিল ও গান-বাজনা একই সঙ্গে পাশাপাশি জায়গায় হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, এটি আমরা জানি। কিন্তু উরুস ও মেলার নিয়মানুযায়ী স্বভাবত’ই গান-বাজনা হবে, কিন্তু একব্যক্তি আমার’ই আত্মীয় ‘মাজেদ আলী’ ও গুটিকয়েক লোকজন সমবেত হয়ে মেলাস্থলে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে আসছে গত ৩/৪ বছর ধরে।
কিন্তু আমার আত্মীয় মাজেদ আলী সত্যিকার্থে সুস্থ্য মনের মানুষ নয়; ফলে সে এইসব করে আসছে। যদিও একই দিনে এহেন আয়োজনের ব্যাপারে আমি স্বয়ং তাকে অনেকবার বাধা দিয়ে বলেছি সে যেনো ওয়াজ মাহফিল এর আয়োজন শাহ্ দরং শাহ’র মেলার আগে নতুবা পরে একদিন আয়োজন করে।
কিন্তু মাজেদ আলী আমার কথা শুনছেনা, তবে শাহ্ দরং শাহ’র মেলাতে একটা অনিয়ম বা একটি ক্ষেত্রে যে সঠিক হচ্ছেনা সেটি আমি স্বীকার করছি।
এমতাবস্থায় উক্ত এলাকার সকল শ্রেণী- পেশার মানুষের প্রশ্ন আর কতদিন চলবে শাহ্ দরং শাহ্ এর মেলাতে কেউ গায় আল্লাহ্-নবীর গান, কেউ গায় গাজাবাবার গানের এই বাড়াবাড়ি।