অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ নিরাপত্তা শঙ্কা আর কড়াকড়ির মধ্যেই উদযাপন করা হয়েছে ইংরেজি নববর্ষ। নিরাপত্তার শঙ্কার কারণে গত বছরের মতো জমজমাট আয়োজন ছিল না এবার। থার্টিফার্স্ট নাইটে উন্মুক্ত স্থানে কোনো ধরনের আনন্দ উল্লাস করা যাবে না বলে গত সোমবারেই সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী। সেই সঙ্গে আতশবাজিও সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার পর থেকে পরদিন পর্যন্ত সব ধরনের জমায়েতের ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। সন্ধ্যার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও হাতিরঝিল এলাকায় প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা ও ধানমন্ডির বিভিন্ন ক্লাবে, রেস্তোরাঁয় ঘরোয়া পার্টির আয়োজন ছিল থার্টিফাস্ট উপলক্ষে। সীমিত পরিসরে আয়োজন ছিল পাঁচ তারকা হোটেলে। রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে জমকালো একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল রূপকথা প্রোডাকশন। দেশের নামী-দামি ডিজেরা এতে অংশ নেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চলে এই পার্টি। হোটেল সোনারগাঁওয়ে থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে ব্যালকনিতে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল। হাটেল সোনারগাঁওয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সালমান কবির জানান, পার্টিতে টিকিটের ব্যবস্থা ছিল। গুলশানের হোটেল দ্য ওয়েস্টিনে ডিজে পার্টির আয়োজন করেছিল টাম্পের্ড। এতে দেশের প্রথম শ্রেণির কয়েকজন ডিজে অংশগ্রহণ করেন।
ওয়েস্টিন হোটেলের সার্ভিস ইনচার্জ তারান্নো জানান, নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে এবার তেমন বড় আয়োজন ছিল না।
এদিকে, নিরাপত্তার জন্য গুলশান, বনানী ও নিকেতন এলাকার বাসিন্দাদের বৃহস্পতিবার রাত ৮টার মধ্যে স্ব স্ব এলাকায় প্রবশে করতে নির্দেশনা ছিল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকেই এসব এলাকার প্রবেশ মুখে তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয় । ডিএমপি’র অতিরিক্ত-উপ কমিশনার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, নির্দেশনা ছিল বাইরের কাউকে এসব এলাকায় প্রবেশ করতে না দেয়ার। বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা প্রতিরোধে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ।
বিশ্বজুড়ে ম্লান বর্ষবরণ
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় এবার বিশ্বজুড়ে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লন্ডন, প্যারিস, মস্কো, ব্রাসেলস, আঙ্কারা, মাদ্রিদ, নিউ ইয়র্ক সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নতুন বর্ষবরণের আনুষ্ঠানিকতা বাতিল করা হয়। একই আতঙ্কে আতশবাজি পোড়ানো বাতিল করা হয়েছে। প্যারিসে চ্যামপস-এলিসি এবং লন্ডনে একই ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ ও সেনা সদস্যদের।
বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর রেড স্কোয়ারে নতুন বর্ষবরণ করতে জনতার সমাবেশ একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ বছর এই স্কোয়ার বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় সরকারিভাবে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন বলেন, এটা কোনো গোপন বিষয় নয় যে, সন্ত্রাসীদের টার্গেটের অন্যতম স্থান হলো মস্কো। বেলজিয়ামে আতশবাজি ও উৎসব উপভোগ করতে গত বছর সমবেত হয়েছিল এক লাখের মতো মানুষ। কিন্তু সন্ত্রাসীরা ছুটির দিনগুলোতে হামলা চালাতে পারে এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এবার তাও বাতিল করা হয়েছে। সন্দেহজনকভাবে দু’ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের পরই কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
ওদিকে অন্য আরেকজনকে গত মাসে প্যারিস হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। বেলজিয়ামের সম্প্রচারকারী কর্তৃপক্ষ আরটিবিএফ’কে মেয়র ইভান মেয়েউর বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আতশবাজির উৎসব বাতিল করতে বাধ্য হচ্ছি। নতুন বর্ষবরণ করার সময় এই আতশবাজির উৎসব পালন করার কথা ছিল। গত মাসে প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত হন। এর পর চ্যাম্পস-এলিসিতে বার্ষিক আতশবাজির উৎসব বাতিল করা হয়েছে।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে টহলে নামানো হয় ১১ হাজার পুলিশ, সেনা সদস্য ও অগ্নিনির্বাপনকারীরা। এ ছাড়া সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ৬০ হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষী। আতশবাজির উৎসব না থাকলেও চ্যাম্পস-এলিসিসে সমবেত হওয়ার কথা বিপুল সংখ্যক মানুষের।