ময়মনসিংহ থেকে::: রোববার (১৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১টা। সকালের সূর্যটা তেঁতে উঠেছে। এই অসহনীয় গরম অগ্রাহ্য করে ধর্ম-বর্ণ-বয়স নির্বিশেষে ময়মনসিংহ নগরবাসী নেমে এসেছে রাজপথে। নতুন বিভাগ পাওয়ার আনন্দ-উচ্ছ্বাসে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পথঘাট লোকারণ্য।
সবার ঠিকানা একটাই, শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণ। সেখানেই উৎসব আয়োজনে জড়ো হচ্ছেন সবাই। এ মিলনমেলায় তাই ছুটছে মানুষ। প্রায় তিন দশকের স্বপ্ন পূরণ হওয়ায় প্রাণের উচ্ছ্বাসে উদ্বেল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে যেন উপচে পড়ছিল।
উৎসবের নগরীতে উজ্জীবিত তারুণ্যের কণ্ঠে ছন্দবদ্ধ উচ্চারণ, ‘প্রাণের দাবি পূরণ হলো, ময়মনসিংহ বিভাগ হলো’। ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা কথা রাখলো, ময়মনসিংহ বিভাগ হলো।’ দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তাল মিলিয়ে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিলেন তারা।
উৎসবে চলছিল যুবলীগ নেতা শাহীনুর রহমানের শোডাউন। পথ চলতে চলতে এ নেতা অগ্রদৃষ্টিকে বলেন, বঞ্চনার বৃত্তে বন্দী ছিলাম আমরা। প্রধানমন্ত্রী আমাদের শিকলভাঙা আনন্দের উপলক্ষ্য তৈরি করে দিয়েছেন। অভিনন্দন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে।
বিজয় ও আনন্দ শোভাযাত্রায় ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে শহর ঘুরে বেড়ান সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন এমপি। বিভাগের বাসিন্দাদের তিনি হাত নেড়ে অভিবাদন জানান।
শহরের টাউন হল প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হওয়া এ বিজয় শোভাযাত্রা শেষ হয় স্থানীয় রেলওয়ে কৃষ্ণচূড়া চত্বরে। এ শোভাযাত্রায় স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণের আবেগে যোগ দেন বিভিন্ন বয়সের নারীরাও।
স্থানীয় শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ময়মনসিংহ শহর ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আলোর পথে হিজড়া সমাজ কল্যাণ সংস্থাসহ বিভিন্ন সামাজিক, এনজিও ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নেয়।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষ করতালি দিয়ে দীর্ঘ এ বিজয় শোভাযাত্রাকে অভিনন্দন জানা
য়। শোভাযাত্রা থেকে ভেসে আসা শ্লোগানেও অনেককে সুর মেলাতে দেখা যায়।
শোভাযাত্রায় আসা ময়মনসিংহ শহর ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা কথা রেখেছেন। এখন আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণশক্তির নাম ময়মনসিংহ বিভাগ।
হালুয়াঘাটের কড়ইতলী কয়লা শুল্ক বন্দরের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সুরুজ মিয়া বলেন, ময়মনসিংহ বিভাগের ঐতিহাসিক এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমাদের প্রাণের উৎসবের সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ময়মনসিংহ বিভাগ করার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় জামালপুর জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদকে অভিনন্দন জানিয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, আমি আজ নতুন ময়মনসিংহ বিভাগের নাগরিক। ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় ব্রক্ষপুত্র নদ খননের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। আগামী ৩ বছরের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের অগ্রগতি আমরা দেখতে পাবো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেন, তাই করেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আগামীতে ময়মনসিংহেও মেডিকেল কলেজ হবে। এ বিভাগকে এগিয়ে নিতে প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী ৩ মাসের মধ্যেই এ সিটি করপোরেশনের কাজ শুরু হবে।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন বলেন, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফসল ময়মনসিংহ বিভাগ আজ বাস্তব। শেখ হাসিনার উন্নয়নের ডাকে যুক্ত হয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিতে হবে।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খানের সভাপতিত্বে অন্যদের বক্তব্য রাখেন- ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনের সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পরিচালক আমিনুল হক শামীম প্রমুখ।