Menu |||

ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ শেষ সম্মানের প্রত্যাশা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ  নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামান এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বয়সের ভারে ন্যজ্যু হয়ে পড়ে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
জীবনের শেষ সময়টা এখন তার কাটছে বদ্ধ ঘরে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই কেটে যায় দিন রাতের পুরো সময়। প্রাণচ্ছল ভঙ্গিতে নাতি-নাতিদের সাথে তিনি আর সময় কাটাতে পাড়েন না। বিছানাই যেন তার একমাত্র সঙ্গী। ভাষাসৈনিক হিসেবে কয়েক বছর আগে তাকে সম্মাননা জানায় মৌলভীবাজারের একটি সংগঠন। জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। ভাষাসৈনিক বদরুজ্জামানের বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ জানিয়েছেন, বাবা ভাষা সৈনিক, এটা তাদের গর্বের বিষয়। বাবার শেষ ইচ্ছা ভাষাসৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া।

মৌলভীবাজারের মেধাবী মুখ বদরুজ্জামান ১৯২২ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চভাষী মৌলভী ইলিয়াছ হোসাইন ও নুরজাহান ভানু’র একমাত্র সন্তান। ১৯৪৯ সালে মেট্রিকোলেশন (এসএসসি) পরীক্ষায় প্রথম উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতি হয়, এরপরও জনাব জামান এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে চাকুরী গ্রহণ করেন। চাকুরীর সুবাধে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাওয়া ও দেখার সুযোগ হয়। ১৯৮৬ সালে জেলা কৃষি কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে যখন ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত তখন তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে তারও কণ্ঠে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতো রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই। তখন তিনি নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ অংশগ্রহণ করতেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলী চালাতে ছিল তখন তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলীতে ভাষা শহীদরা গুলীবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়ার সে মিছিলেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। তার চোখের সামনেই গুলীবিদ্ধ হন সহপাঠীরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে নুয্য বদরুজ্জামান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দিনটির কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬০ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় পত্রিকাসহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের নাম। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। দাবি ওঠে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এলাকায় ফিরে আন্দোলনের সহযোদ্ধা শাহ এসএএম কিবরিয়ার ভাতিজিকে উঁনার হাতে তোলে দেন। শাহ নূরুন নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ভাষাসৈনিক বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ আবেগজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার বাবা বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মূল্যয়ন করবে। ভাষাসৈনিক হিসেবে তার বাবার নাম সংযোজিত হবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধি হবে।

Slide 1
PlayPlay
Slide 1
previous arrow
next arrow
Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির বনভোজন ও পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত

» সুদানে বর তার বন্ধুদের চাবুক মারার সংস্কৃতি

» অসুস্থ প্রবাসী, হাসপাতালে ১বছর ছয়  মাস,সেবকের ভূমিকায় সাংবাদিক মহসিন

»

» যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

» কাতার পুলিশ কলেজের সপ্তম স্নাতক প্রদানে আমির শেখ তামিম

» বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের “বিজ্ঞপ্তি”

» কাতারে প্রীতি ফুটবল টুনামেন্ট এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

» পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারদের কারা কোন পোশাক পেলেন?

» “কুয়েতে শীতের ৫ মাস” তাবু ঘরের গল্প

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের জীবদ্দশায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিস্বরূপ শেষ সম্মানের প্রত্যাশা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ  নিভৃতচারী এক ভাষাসৈনিক শেখ বদরুজ্জামান এখন জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বয়সের ভারে ন্যজ্যু হয়ে পড়ে চলাচলের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন।
জীবনের শেষ সময়টা এখন তার কাটছে বদ্ধ ঘরে। বিছানায় শুয়ে শুয়েই কেটে যায় দিন রাতের পুরো সময়। প্রাণচ্ছল ভঙ্গিতে নাতি-নাতিদের সাথে তিনি আর সময় কাটাতে পাড়েন না। বিছানাই যেন তার একমাত্র সঙ্গী। ভাষাসৈনিক হিসেবে কয়েক বছর আগে তাকে সম্মাননা জানায় মৌলভীবাজারের একটি সংগঠন। জীবনের শেষ সময়ে এসেও এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় কোন স্বীকৃতি। ভাষাসৈনিক বদরুজ্জামানের বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ জানিয়েছেন, বাবা ভাষা সৈনিক, এটা তাদের গর্বের বিষয়। বাবার শেষ ইচ্ছা ভাষাসৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া।

মৌলভীবাজারের মেধাবী মুখ বদরুজ্জামান ১৯২২ সালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চভাষী মৌলভী ইলিয়াছ হোসাইন ও নুরজাহান ভানু’র একমাত্র সন্তান। ১৯৪৯ সালে মেট্রিকোলেশন (এসএসসি) পরীক্ষায় প্রথম উত্তীর্ণ হন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের জন্য লেখা পড়ার কিছুটা ক্ষতি হয়, এরপরও জনাব জামান এইচএসসি পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৩ সালে তিনি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে চাকুরী গ্রহণ করেন। চাকুরীর সুবাধে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় যাওয়া ও দেখার সুযোগ হয়। ১৯৮৬ সালে জেলা কৃষি কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই আন্দোলনে যখন ঢাকার রাজপথ উত্তপ্ত তখন তিনি জড়িয়ে পড়েন ভাষা আন্দোলনে। মিছিলে মিছিলে শ্লোগানে তারও কণ্ঠে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতো রাষ্ট ভাষা বাংলা চাই। তখন তিনি নিয়মিত মিছিল, মিটিং এ অংশগ্রহণ করতেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা কার্জন হল থেকে শুরু হওয়া মিছিলে পুলিশ যখন বৃষ্টির মতো গুলী চালাতে ছিল তখন তিনি ছিলেন মিছিলের অগ্রভাগে। পুলিশের গুলীতে ভাষা শহীদরা গুলীবিদ্ধ হয়ে রাজপথে লুটিয়ে পড়ার সে মিছিলেও তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। তার চোখের সামনেই গুলীবিদ্ধ হন সহপাঠীরা। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে যান। পরদিন ২২শে ফেব্রুয়ারি মজলুম জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনায় গায়েবানা জানাযায় তিনি অংশগ্রহণ করেন। বয়সের ভারে নুয্য বদরুজ্জামান সে সময়ের সহগামী, সতীর্থদের নাম স্মরণে আনতে না পারলেও স্মৃতিপটে ভাসে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই দিনটির কথা। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর তিনি নিজেকে দীর্ঘ ৬০ বছর লুকিয়ে রেখেছিলেন। কখনই বলেননি তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ২০১৩ সালে প্রথম জাতীয় পত্রিকাসহ স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ হয় ভাষা সৈনিক শেখ বদরুজ্জামানের নাম। এরপর বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় তাকে নিয়ে সংবাদ প্রচার করে। দাবি ওঠে তাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার। কিন্তু জীবনের শেষ সময়ে এসে এখনো জুটেনি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এলাকায় ফিরে আন্দোলনের সহযোদ্ধা শাহ এসএএম কিবরিয়ার ভাতিজিকে উঁনার হাতে তোলে দেন। শাহ নূরুন নাহারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

ভাষাসৈনিক বড় ছেলে হাজী নোমান আহমদ আবেগজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার বাবা বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে। তিনি একজন ভাষাসৈনিক। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর মূল্যয়ন করবে। ভাষাসৈনিক হিসেবে তার বাবার নাম সংযোজিত হবে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সমৃদ্ধি হবে।

Slide 1
PlayPlay
Slide 1
previous arrow
next arrow
Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Sun, 2 Feb.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।