Menu |||

বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে জ্বর, সর্দি ও মৃত্যু বাড়ছেই

 

ভারতের সীমান্তবর্তী এই উপজেলার রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রধান নির্বাহী আব্দুর রহমান এসব তথ্য জানিয়ে বললেন, “মারা যাওয়া ওই চারজনেরই সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ ছিল।“

তার ভাষ্যমতে, মহেশপুরের গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে মানুষ জ্বরে ভুগছেন। বাড়িতে বসেই সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। শুধু শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন।

তাদের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মহেশপুরে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে উপজেলায় কোভিড শনাক্ত হওয়া আরও ১০ জন মারা গেছেন।

আব্দুর রহমান বলেন, “এই এলাকার অনেক মানুষই গত দুই মাসে ভারত থেকে ফিরেছেন। তাদের অনেকের পরীক্ষায় কোভিড ধরাও পড়ে। এরপর থেকে গ্রামগুলোতে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়।“

ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাতজন মারা গেছেন। এসময় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বুধবার এসব তথ্য জানান।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের বেশিরভাগই এখন গ্রামের মানুষ।

 

 

এই জেলার সদর হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে বেডের সংখ্যা সম্প্রতি ৫০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে। তবুও রোগী যেন উপচে পড়ছে।

বুধবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, রোগীর চাপ অনেক বেশি। করোনা ওয়ার্ডে ১২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এখন গ্রামের রোগী বেশি আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্বর-সর্দি নিয়ে মানুষ বাড়িতেই থাকছে, যখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে-তখনই হাসপাতালে ছুটে আসছেন। শেষ সময়ে আসায় অনেককেই আমরা বাঁচাতে পারছি না।“

গ্রামে কোভিড রোগী বাড়ার বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের মুখপাত্র সুহাষ রঞ্জন হাওলাদার বলেন, “করোনার প্রথম ঢেউয়ে শহরের অধিকাংশ সচেতন মানুষ টিকা নিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্য সচেতন বেশি। কিন্তু গ্রামের মানুষের মধ্যে তা অনেক কম। যে কারণে দ্বিতীয় ঢেউয়ে গ্রামের মানুষ আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন।“

হাসপাতালে জায়গা নেই

যশোর সদর হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় বারান্দায় ভ্যানের ওপর কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্মীরা। প্রতিদিন মৃত্যু ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর মিলছে।

 

জেলার সিভিল সার্জন দপ্তরের চিকিৎসা কর্মকর্তা রেহনেওয়াজ বলেন, “মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যশোর সদর হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।”

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ বলেন, “বুধবার সকালে হাসপাতালে মোট রোগী ছিলেন ১৫৫ জন। শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সবাইকে সাধ্যমত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।“

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে খোলা জায়গায়, ভ্যানের ওপরে রোগীদের রেখে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।

 

যশোর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, “গ্রামাঞ্চলের কোভিড রোগীর সংখ্যা এখন বেশি। আর তারা এমন অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন যে, সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা এমন বৃদ্ধি পেতে থাকলে অক্সিজেন সংকট তৈরি হবে।”

জেলার কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাদের ইউনিয়নে ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।

সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম বলেন, “আমার ইউনিয়নের ঘরে ঘরে অনেকের জ্বর ও সর্দি-কাশি। বর্ষায় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ থাকে। এর সঙ্গে করোনাভাইরাস যোগ হয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ জ্বর না করোনাভাইরাস তা বুঝে উঠতে সময় চলে যাচ্ছে।”

একই উপজেলার উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটুও একই কথা বলেন।

 

 

বাগেরহাটে এক মাসে ৪৪ জনের মৃত্যু

বাগেরহাটে জ্বর নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে।

জেলা সিভিল সার্জন কেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, “গত ৬ জুন থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু বেড়েছে তিনগুন।“

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, “৩০ মে থেকে বাগেরহাটে সংক্রমণ বাড়ছে। মোংলা দিয়ে শুরু হয়েছে সংক্রমণ। সেখানে সংক্রমণের হার ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

“এখন করোনার উপসর্গ সর্দি-জ্বর-কাশি জেলার গ্রামের ঘরে ঘরে। মানুষ পরীক্ষা করছে না, ভয় পাচ্ছে। একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।“

বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসকেরা জেলা প্রশাসনকে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

উত্তরের চিত্রও অভিন্ন

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও ঘরে ঘরে জ্বর ছড়িয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক হাবিব এ রসুল লিটন বলেন, “সেই জুনে জ্বরের রোগীর যে স্রোত শুরু হয়েছিল তা এখনও চলছে। যেই গ্রামে একবার জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে, সেখানে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে তারপর থামছে।

 

“সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে খুব বেশি হলে ৫ শতাংশের মধ্যে রোগটা জটিল আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে যারা বয়স্ক ও যাদের অন্যান্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তবে সম্প্রতি জেলায় তিনজন যুবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।“

এই জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা সদরে ৩৫ বছর ধরে ওষুধের দোকান করেন মো. ইলিয়াস। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বরের প্রকোপ সাংঘাতিকভাবে বেড়েছে। এর আগে কখনও এরকম দেখা যায়নি।”

 

 

জ্বরের ওষুধের চাহিদা প্রচুর বেড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গ্রামের দোকানগুলোতে জ্বরের কিছু ওষুধের সংকটও দেখা দিয়েছিল। তবে এখন সেটা কিছুটা কেটেছে।“

পাশের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ বাজারে প্রায় ৩০ বছর ধরে চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ওষুধের দোকান চালিয়ে আসছেন পল্লী চিকিৎসক নূর ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বর বেড়েছে এটা সত্য। তবে প্রতিবছর গরম পড়ার পর গ্রামে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। সাধারণ মানের কিছু ওষুধেই তা সেরে যায়। এবারও সাধারণ ওষুধেই জ্বর সারছে। এই ওষুধের বিক্রিও বেড়েছে।“

মৃত্যু বাড়ছেই

সারা দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে ৪ জুলাই প্রথমবারের মত তা দেড়শ ছাড়ানোর খবর আসে।

বুধবার তিন দিনের মাথায় তা এক লাফে দুইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, এসময়ে কোভিড শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ জনের।

 

 

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা জেলায়। কুষ্টিয়ায় ১১ জন, ঝিনাইদহে সাতজন, যশোরে ছয়জন, চুয়াডাঙ্গায় পাঁচজন, নড়াইলে চারজন, বাগেরহাটে তিনজন, মেহেরপুরে দুজন ও মাগুরায় একজন মারা গেছেন।

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশমুখ খ্যাত বগুড়ায় বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১১ জন।

জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, এদের মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন মারা যান। একজনের মৃত্যু হয়েছে টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় উপসর্গ নিয়ে আরও ১১ জন মারা গেছেন।

 

 

সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

 

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» সুদানে বর তার বন্ধুদের চাবুক মারার সংস্কৃতি

» অসুস্থ প্রবাসী, হাসপাতালে ১বছর ছয়  মাস,সেবকের ভূমিকায় সাংবাদিক মহসিন

»

» যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

» কাতার পুলিশ কলেজের সপ্তম স্নাতক প্রদানে আমির শেখ তামিম

» বাংলাদেশ দূতাবাস কুয়েতের “বিজ্ঞপ্তি”

» কাতারে প্রীতি ফুটবল টুনামেন্ট এর ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত

» পুলিশ, র‍্যাব ও আনসারদের কারা কোন পোশাক পেলেন?

» “কুয়েতে শীতের ৫ মাস” তাবু ঘরের গল্প

» ১৯ সন্তানের মা হয়েও পিএইচডি করলেন সৌদি নারী!

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

বাংলাদেশে গ্রামে গ্রামে জ্বর, সর্দি ও মৃত্যু বাড়ছেই

 

ভারতের সীমান্তবর্তী এই উপজেলার রুরাল ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রধান নির্বাহী আব্দুর রহমান এসব তথ্য জানিয়ে বললেন, “মারা যাওয়া ওই চারজনেরই সর্দি-জ্বরের মত উপসর্গ ছিল।“

তার ভাষ্যমতে, মহেশপুরের গ্রামগুলোতে ঘরে ঘরে মানুষ জ্বরে ভুগছেন। বাড়িতে বসেই সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা। শুধু শ্বাসকষ্টের মত সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন।

তাদের প্রতিষ্ঠানের হিসাবে কোভিডের উপসর্গ নিয়ে মহেশপুরে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে উপজেলায় কোভিড শনাক্ত হওয়া আরও ১০ জন মারা গেছেন।

আব্দুর রহমান বলেন, “এই এলাকার অনেক মানুষই গত দুই মাসে ভারত থেকে ফিরেছেন। তাদের অনেকের পরীক্ষায় কোভিড ধরাও পড়ে। এরপর থেকে গ্রামগুলোতে জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়।“

ঝিনাইদহে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাতজন মারা গেছেন। এসময় উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। এছাড়া নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৬ জন। জেলার সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বুধবার এসব তথ্য জানান।

চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের বেশিরভাগই এখন গ্রামের মানুষ।

 

 

এই জেলার সদর হাসপাতালের কোভিড ইউনিটে বেডের সংখ্যা সম্প্রতি ৫০ শয্যা থেকে বাড়িয়ে ১০০ করা হয়েছে। তবুও রোগী যেন উপচে পড়ছে।

বুধবার হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, রোগীর চাপ অনেক বেশি। করোনা ওয়ার্ডে ১২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এখন গ্রামের রোগী বেশি আসছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “জ্বর-সর্দি নিয়ে মানুষ বাড়িতেই থাকছে, যখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছে-তখনই হাসপাতালে ছুটে আসছেন। শেষ সময়ে আসায় অনেককেই আমরা বাঁচাতে পারছি না।“

গ্রামে কোভিড রোগী বাড়ার বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড ইউনিটের মুখপাত্র সুহাষ রঞ্জন হাওলাদার বলেন, “করোনার প্রথম ঢেউয়ে শহরের অধিকাংশ সচেতন মানুষ টিকা নিয়েছেন। তারা স্বাস্থ্য সচেতন বেশি। কিন্তু গ্রামের মানুষের মধ্যে তা অনেক কম। যে কারণে দ্বিতীয় ঢেউয়ে গ্রামের মানুষ আক্রান্ত বেশি হচ্ছেন।“

হাসপাতালে জায়গা নেই

যশোর সদর হাসপাতালে শয্যা খালি না থাকায় বারান্দায় ভ্যানের ওপর কোভিড রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, যাদের বেশিরভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসছেন। চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্য-কর্মীরা। প্রতিদিন মৃত্যু ও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে খবর মিলছে।

 

জেলার সিভিল সার্জন দপ্তরের চিকিৎসা কর্মকর্তা রেহনেওয়াজ বলেন, “মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যশোর সদর হাসপাতালে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে উপসর্গ নিয়ে আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে।”

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ বলেন, “বুধবার সকালে হাসপাতালে মোট রোগী ছিলেন ১৫৫ জন। শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সবাইকে শয্যা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে সবাইকে সাধ্যমত চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।“

সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বাইরে খোলা জায়গায়, ভ্যানের ওপরে রোগীদের রেখে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে।

 

যশোর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আখতারুজ্জামান বলেন, “গ্রামাঞ্চলের কোভিড রোগীর সংখ্যা এখন বেশি। আর তারা এমন অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন যে, সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা এমন বৃদ্ধি পেতে থাকলে অক্সিজেন সংকট তৈরি হবে।”

জেলার কয়েকজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, তাদের ইউনিয়নে ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশির প্রকোপ দেখা যাচ্ছে।

সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম বলেন, “আমার ইউনিয়নের ঘরে ঘরে অনেকের জ্বর ও সর্দি-কাশি। বর্ষায় ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রকোপ থাকে। এর সঙ্গে করোনাভাইরাস যোগ হয়ে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ জ্বর না করোনাভাইরাস তা বুঝে উঠতে সময় চলে যাচ্ছে।”

একই উপজেলার উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটুও একই কথা বলেন।

 

 

বাগেরহাটে এক মাসে ৪৪ জনের মৃত্যু

বাগেরহাটে জ্বর নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি মানুষের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে।

জেলা সিভিল সার্জন কেএম হুমায়ুন কবীর বলেন, “গত ৬ জুন থেকে ৬ জুলাইয়ের মধ্যে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মহামারীর প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যু বেড়েছে তিনগুন।“

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, “৩০ মে থেকে বাগেরহাটে সংক্রমণ বাড়ছে। মোংলা দিয়ে শুরু হয়েছে সংক্রমণ। সেখানে সংক্রমণের হার ৭৩ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছিল।

“এখন করোনার উপসর্গ সর্দি-জ্বর-কাশি জেলার গ্রামের ঘরে ঘরে। মানুষ পরীক্ষা করছে না, ভয় পাচ্ছে। একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে।“

বিভিন্ন উপজেলা থেকে চিকিৎসকেরা জেলা প্রশাসনকে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

উত্তরের চিত্রও অভিন্ন

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতেও ঘরে ঘরে জ্বর ছড়িয়েছে। ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের চিকিৎসক হাবিব এ রসুল লিটন বলেন, “সেই জুনে জ্বরের রোগীর যে স্রোত শুরু হয়েছিল তা এখনও চলছে। যেই গ্রামে একবার জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়েছে, সেখানে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে তারপর থামছে।

 

“সাধারণভাবে ধারণা করা যায়, আক্রান্তদের মধ্যে খুব বেশি হলে ৫ শতাংশের মধ্যে রোগটা জটিল আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে যারা বয়স্ক ও যাদের অন্যান্য শারীরিক জটিলতা রয়েছে। তবে সম্প্রতি জেলায় তিনজন যুবা করোনা আক্রান্ত হয়ে বা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।“

এই জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা সদরে ৩৫ বছর ধরে ওষুধের দোকান করেন মো. ইলিয়াস। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বরের প্রকোপ সাংঘাতিকভাবে বেড়েছে। এর আগে কখনও এরকম দেখা যায়নি।”

 

 

জ্বরের ওষুধের চাহিদা প্রচুর বেড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গ্রামের দোকানগুলোতে জ্বরের কিছু ওষুধের সংকটও দেখা দিয়েছিল। তবে এখন সেটা কিছুটা কেটেছে।“

পাশের জেলা পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ বাজারে প্রায় ৩০ বছর ধরে চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ওষুধের দোকান চালিয়ে আসছেন পল্লী চিকিৎসক নূর ইসলাম।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জ্বর বেড়েছে এটা সত্য। তবে প্রতিবছর গরম পড়ার পর গ্রামে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। সাধারণ মানের কিছু ওষুধেই তা সেরে যায়। এবারও সাধারণ ওষুধেই জ্বর সারছে। এই ওষুধের বিক্রিও বেড়েছে।“

মৃত্যু বাড়ছেই

সারা দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। এর মধ্যে ৪ জুলাই প্রথমবারের মত তা দেড়শ ছাড়ানোর খবর আসে।

বুধবার তিন দিনের মাথায় তা এক লাফে দুইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে সর্বোচ্চ ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা জানান, এসময়ে কোভিড শনাক্ত হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৯০০ জনের।

 

 

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা জেলায়। কুষ্টিয়ায় ১১ জন, ঝিনাইদহে সাতজন, যশোরে ছয়জন, চুয়াডাঙ্গায় পাঁচজন, নড়াইলে চারজন, বাগেরহাটে তিনজন, মেহেরপুরে দুজন ও মাগুরায় একজন মারা গেছেন।

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলের প্রবেশমুখ খ্যাত বগুড়ায় বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ১১ জন।

জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন জানান, এদের মধ্যে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজন মারা যান। একজনের মৃত্যু হয়েছে টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় উপসর্গ নিয়ে আরও ১১ জন মারা গেছেন।

 

 

সূত্র, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম

 

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Sat, 1 Feb.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।