মিজানুর রহমান সুহেল, নবীগঞ্জ থেকে ॥ দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ২৮ডিসেম্বর জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক না হলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারনা শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে উক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে বলে নির্বাচন কমিশন সুত্রে জানাগেছে। বিশেষ করে সদস্য পদের প্রার্থীদের মত বিনিময় সভা ও প্রচারনা ব্যাপক হারে চলছে। প্রতি ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে একটি করে ওর্য়াড গঠন করা হয়েছে। ১৫টি ইউনিয়নে একটি সংরক্ষিত ওর্য়াড গঠন করা হয়েছে। নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন,একটি পৌরসভা ও বাহুবল উপজেলার ¯œানঘাট ইউনিয়নকে সংযুক্ত করে তিনটি সাধারন ওর্য়াড গঠন করা হয়েছে। এসব পদে প্রায় দুই ডজন প্রার্থী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
দলীয়ভাবে উপজেলা, পৌরসভা নির্বাচন ও ইউনিয়নে পর এবার নির্দলীয়ভাবে জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচনকে ঘিরে বাড়তি আমেজ দেখা যাচ্ছে ।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি জেলায় একজন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এর পাশাপাশি ১৫ জন সাধারণ সদস্য ও পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্যপদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তৃণমূলের অন্য সব নির্বাচনে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেলেও জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করবেন শুধু জেলায় অন্তর্ভুক্ত উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা।
সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্যপদে
প্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন তাদের নির্বাচন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ভোটার এবং ২৫ বছর বয়সী যেকোনো নাগরিক জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে পারবেন। তবে কোনো প্রার্থী ভোট দিতে পারবেন না। অন্যদিকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোটার হলেও প্রার্থী হতে পারবেন না।
এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের নিয়ে গ্রাম-পাড়া থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও চলছে বিচার বিশ্লেষণ। কোন দল থেকে কে পাবেন সমর্থন? এদের মধ্যে কে হবেন আগামীর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসব নিয়ে এখন চলছে আলোচনার ঝড়। অন্যদিকে সচেতন মহল মনে করেন, দলীয় সমর্থনের ওপরই নির্ভর করছে এসব প্রার্থীর জয়-পরাজয়।
ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচনে এখন বর্তমান জেলা প্রশাসক ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী ছাড়া আর কোন প্রার্থীর দেখা পাচ্ছেন না তারা। তবে সাধারন সদস্য পদে একাধীক প্রার্থী দেখা সাক্ষাৎ নিয়মিত করছেন। হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের সাধারন সদস্য পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি। নবীগঞ্জ উপজেলার ১নং বড়ভাকৈর ইউনিয়ন থেকে ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়ন কে নিয়ে গঠিত সাধারণ ওয়ার্ডে সদস্য পদে প্রচারনায় আছেন, সাবেক চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন ছুবা, মোতাচ্ছির খান, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক এড.মুজিবুর রহমান কাজল, দীঘলবাক ইউপি আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম হোসেন, ডাঃ নিজামুল ইসলাম,মাহবুব খছরু, ফয়সল আহমদ,সুজাত চৌধুরী প্রমূখ ৬নং কুর্শি ইউনিয়ন থেকে ৯নং বাউশা ও নবীগঞ্জ পৌরসভা নিয়ে গঠিত সাধারন ওর্য়াডে প্রচারনায় আছেন, শিপন আহমদ,হেলাল আহমদ, কাজী ওবায়দুল কাদের হেলাল,আজিজুল হক প্রমুখ ১০ নংদেবপাড়া ইউনিয়ন থেকে ১৩ নং পানিউমদা ইউনিয়ন ও বাহুবলের ¯œানঘাট ইউপি নিয়ে গঠিত সাধারন ওয়ার্ডে প্রচারনায় রয়েছেন জাতীয় পুরুস্কার প্রাপ্ত সাংবাদিক এম,এ আহমদ আজাদ, মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ, সুলতান মাহমুদ, আলী নেয়াজ গাজী, সাবেক মেম্বার জমশেদ মিয়া, ফয়সল আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, ও মাহমুদুল হক চৌধুরী রাকু। এছাড়া সংরক্ষিত আসনে প্রচারনায় আছেন,সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শিরিন আক্তার, লন্ডন প্রবাসী তরুনা বাহার কলি ও উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দিলারা হোসেন। এসব প্রার্থীরা প্রতিদিনই প্রচারনা ও মতবিনিময় সভা করে যাচ্ছেন। সদস্য পদে প্রার্থীদের প্রচারণায় নতুন মাত্র যোগ করেছে। চায়ের স্টল থেকে শুরু করে আড্ডাস্থলের সর্বত্র এখন জেলা পরিষদ নির্বাচন। কে হবেন আগামী ৫বছরের জন্য জেলা পরিষদের সদস্য সেই দিকে সবার নজর।
১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের আমলে স্থানীয় সরকার (জেলা পরিষদ) আইনটি প্রণীত হয়। এর মাধ্যমে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়ার বিধান ছিল। পরে আইনটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
২০০০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত জেলা পরিষদ গঠনের জন্য নতুন আইন করে। পাঁচ বছর মেয়াদি হবিগঞ্জ জেলা পরিষদে বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বিএম সভাপতি আলহাজ্ব ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী।
আসন্ন জেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পর্কে বর্তমান জেলা প্রশাসক ডাঃ মুশফিক হোসেন চৌধুরী এপ্রতিবেদককে জানান, কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরই কাজ শুরু করবেন। তিনি বলেন দলীয় বা নিরদলীয় যেভাবেই হয় তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন।
এদিকে শোনা যাচ্ছে, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোঃ ফয়সল চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। তবে বার বার যোগাযোগ করে তার মোবাইল বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।