প্রশংসা থেকে রোষানল; ভুল ভাঙা থেকে সহাবস্থান – এক প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মীর চোখে লক্ষ্মীপুরের সাবেক এমপি

প্রবাস জীবনে নানা অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হয় গণমাধ্যমকর্মীদের। তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যেমন প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ, প্রত্যাশা-সম্ভাবনার খবর তুলে আনতে হয়, তেমনি কখনো কখনো অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত প্রবাসীদের নিয়েও সতর্কতামূলক প্রতিবেদন করতে হয়। কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করা আ হ জুবেদের জীবনে তেমনই এক উল্লেখযোগ্য অভিজ্ঞতা জড়িয়ে আছে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে।
২০১৩ সালের দিকে কুয়েতের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেন শহিদ ইসলাম পাপুল। যদিও তার ব্যবসায়িক সফলতা আরও আগে থেকেই ছিল। অন্যদিকে, নানা কারণে কুয়েতের আইনে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি ২০২০ সালের ৭ জুন কারাগারে যান।
গণমাধ্যমকর্মী আ হ জুবেদের সঙ্গে পাপুলের সাক্ষাৎ বা পরিচয় হয় ২০১৪ সালের দিকে। এরপর, কুয়েতের একজন প্রবাসী ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি নেতা হিসেবে শহিদ ইসলাম পাপুলকে নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে জুবেদের কলমে।
স্মৃতিচারণ করে জুবেদ জানান, ২০১৫ সালের দিকে কুয়েত সিটির রাজধানী হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাপুল প্রকাশ্যে তার (জুবেদ) ও তার কাজের অবর্ণনীয় প্রশংসা করেছিলেন। সেসময় তিনি জুবেদকে আহ্বান করেন যে, গণমাধ্যমে কাজ করতে গিয়ে কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে যেনো নির্দ্বিধায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। যদিও জুবেদের সে ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়নি, ফলে তিনি যোগাযোগও করেননি।
তবে সম্পর্কের এই সুবাতাস বেশিদিন টেকেনি। ২০১৭ সালের দিকে যখন বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পাপুল জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন কুয়েতে প্রবাসীদের একটি অংশ তার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সেই সময়ে পাপুলের বিপক্ষে থাকা ওইসব প্রবাসীদের নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে পাপুল জুবেদের ওপর ক্ষিপ্ত হন।
জুবেদের ভাষ্যমতে, সেই সময় কুয়েতের রাজধানী হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাপুল সাহেব তাকে ও তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘অগ্রদৃষ্টি’কে জড়িয়ে বক্তব্য দেন। ঘটনাচক্রে জুবেদও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করতে চাইলেও মরহুম ইউনুস মতিন ও আশরাক আলী ফেরদৌস এর আপত্তির মুখে তিনি সেদিন নীরব থাকেন। পরে অবশ্য অন্য এক প্লাটফর্মে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি পাপুল সাহেবের দেওয়া বক্তব্যের জবাব দেন।
দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে পাপুল বাংলাদেশের সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হয়ে কুয়েতে এলে সম্পর্কের মোড় ঘুরে যায়। জুবেদ জানান, একদিন একটি কফি শপে তারা সহ আরও ১০-১৫ জন উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় পাপুল নিজেই তার ভুল স্বীকার করে বলেন, “জুবেদ, মনে কিছু নিওনা ভাই। আসলে খারাপ লোকেরা তোমার সম্পর্কে নেতিবাচক নানা কথা বলে আমার কান ভারি করে ফেলে, পরে সম্ভবত আমি তোমাকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলেছিলাম।”
জবাবে জুবেদ তখন বলেছিলেন, “না ভাই, এমন কিছু না। এসব নিয়ে আমি ভাবি না।”
জুবেদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি অন্যের প্ররোচনায় ভুলবশত একজন গণমাধ্যমকর্মীকে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বললেও পরে তিনি নিজেই সেই ভুল বুঝতে পারেন। তবে এটাও ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, একসময় এই ভদ্রলোকই জুবেদের কাজের অবর্ণনীয় প্রশংসাও করেছিলেন। প্রবাসীদের স্বার্থে সংবাদ পরিবেশন করতে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের যে ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে আ হ জুবেদের এই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তারই একটি প্রতিচ্ছবি।
কুয়েতের রাজধানী হোটেলে আ হ জুবেদ এর প্রশংসা করছেন শহিদুল ইসলাম পাপুল।











