তিস্তা নদীর জলবন্টন চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে আলোচনায় বসবে ভারত সরকার।
মমতা ব্যানার্জী দুদিন আগে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে ২৫শে মে তিস্তার জলবন্টন চুক্তি সাক্ষরিত হবে বলে তিনি শুনেছেন, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কেউ কোনও আলোচনা করে নি।
“হয়তো সব আলাপ আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে। আমি তো শুনেছি ২৫শে মে বাংলাদেশে গিয়ে নাকি জলবন্টন চুক্তি সই হবে। অথচ আমি কিছুই জানি না এখনও পর্যন্ত। কেউ আমাকে কিছু জানায় নি। তোমরা যদি সব কিছু রেডি করে আমাকে বলো স্ট্যাম্প মারার জন্য, তাহলে আমি বলব সরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে,” ওই সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতেই পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র গোপাল বাগলে জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যটা নিয়ে কিছু বলা সমীচীন হবে না। তবে এটা বলতে পারি যে সরকারের কাজের অভিমুখটাই হল সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে এগোন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় যেভাবে সবপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে এগোন হয়, এক্ষেত্রেও সেভাবেই এগোন হবে।”
শুক্রবারের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক ব্রিফিং-এ মি. বাগলে স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ করে যেভাবে ছিটমহল বিনিময় হয়েছে, তার উদাহরণ দেন।
“স্থলসীমান্ত চুক্তিও সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ফলেই সম্ভব হয়েছে। প্রত্যেক পক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা কেই এগোন হয়েছিল। সেজন্যই সাফল্যের সঙ্গে ওই চুক্তি রূপায়ণ করা গেছে,” বলছিলেন মি. বাগলে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে আর বিস্তারিত কিছু এখনই যে বলার সময় আসে নি, সেটা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মি. বাগলের কথায়, “ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব আর পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সেই ভিত আরও শক্ত হবে।
তিস্তা নদীর জল বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ আলোচনা চললেও ২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি ওই চুক্তির বিরোধীতা করে আসছেন।
তাঁর মতে, তিস্তা নদীর জল বন্টন নিয়ে চুক্তি করে বাংলাদেশকে জল দিতে হলে তাঁর রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা চাষের জল পাবেন না।
বারে বারেই তিনি বলে থাকেন যে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকলেও নিজের রাজ্যের কৃষকদের স্বার্থ দেখাটাই তাঁর কাছে বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
তিস্তার জলবন্টন কীভাবে করা যেতে পারে, বা আদৌ চুক্তি করা ঠিক হবে কী না, তা নিয়ে নদী বিশেষজ্ঞ কল্যান রুদ্রকে দিয়ে একটি সরকারী রিপোর্টও তৈরী করিয়েছেন মমতা ব্যানার্জী। যদিও সেই রিপোর্টের বিস্তারিত কখনই প্রকাশ করা হয় নি।