Menu |||

কৃষি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদ,হাওর রক্ষায় কৃষক আন্দোলন, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ হাওর রক্ষায় মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। সদর উপজেলার পূবের হাওরে সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপনের প্রতিবাদে রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরের দিকে জেলা শহরের আদালত সড়কে মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

হাওরাঞ্চলের কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পূবের হাওরের বাকি অংশ রক্ষার দাবি জানান কৃষক, মৎস্যজীবি, হাওর ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যরা।

পূবের হাওর অধ্যুষিত আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া একালাকার সর্বস্তরের কৃষক-মৎস্যজীবী জনসাধারণের উদ্যোগে এই কৃষক আন্দোলনে সহযোগিতা করে ‘হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার’।

কৃষকেরা বলেন, ‘এই পূবের হাওর আমাদের জীবিকার অংশ। গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই হাওরের ধান না পেলে মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়বে। অথচ আমরা এই হাওরে উৎপাদিত ধান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করি। দূরের পাইকার ও মিল মালিকরা এসে ধান কিনে নিয়ে যায়। সেই হাওরের ধান উৎপাদন বন্ধ হওয়ার সমস্ত আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আর এই জমিতে ধান উৎপাদন হবে না। ফলে, ধান বিক্রি তো দূরের কথা, নিজেরাই খাবারের চাল পাব না, দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ব। শুধু ধান নয়, হাওরের আশেপাশের গ্রামের কৃষকরা গরু ও ছাগল চড়ান। সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

কৃষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হাওর রক্ষা আন্দোলন করায় মিথ্যা মামলা ও হয়রানির ভয়-হুমকি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

প্রতিবাদ সভায় জেলার হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘি হাওরে একইরূপে সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপন উদ্যোগের প্রতিবাদ জানানো হয়।

শহরের আদালত সড়কে পুরাতন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দুপুরের বারোটার দিকে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন কৃষক, মৎস্যজীবি, হাওর আন্দোলনের সদস্য ও পরিবেশকর্মীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কৃষকনেতা আব্দুল সোবাহান। সমাবেশ পরিচালনা করেন হাওর রক্ষা আন্দোলন নির্বাহী সদস্য মো. শাহিন ইকবাল। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও ধরার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আব্দুল করিম কিম, প্রফেসর সেলিমুজ্জামান, হাওর রক্ষা আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলার আহবায়ক আ স ম ছালেহ সোহেল, সদস্য সচিব এম খছরু চৌধুরী, রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা আহমদ বেলাল, নির্বাহী সদস্য শামসুদ্দিন মাস্টার, আলমগীর হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম। পূবের হাওরের এলাকা থেকে বক্তব্য রাখেন শামিম আহমদ, মাওলানা মহসিন আহমদ, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি নেতা এহসান জাকারিয়াসহ মৌলভীবাজার জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

*কৃষক-মৎস্যজীবি ও হাওর আন্দোলনের বক্তব্য*
বিকল্প জায়গা থাকতে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কৃষিজমি নষ্ট করে ‘পূবের হাওরে’ ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রতিরোধের আহ্বান জানান আনেদালনকারীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশে শেষে এক প্রেসনোটে কৃষক-মৎস্যজীবি ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন-
মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার ৪ নং আপার কাগাবালা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া গ্রাম-সহ আশপাশের ১৫ হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি জনগণের মিঠাপানির মাছ, ভাত ও কৃষিজ ফসল উৎপাদনের চাহিদাপূরণ করছে ‘পূবের হাওর’ নামের হাওরটি। যুগযুগ ধরে এ এলাকার প্রায় আড়াই হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি পরিবারের জীবন-জীবিকা এই হাওরের উপর নির্ভরশীল। উল্লিখিত তিনগ্রামের মানুষের কৃষিজ উৎপাদনে এ পূবের হাওর-ই একমাত্র হাওর।

পূবের হাওরের ১০০ একর ফসলী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে Moulvibazar Solar PV Park নামীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে, চিরতরের জন্য পূবের হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফসলী জমির কৃষিজ উৎপাদন হারিয়ে গেছে। অথচ, এ হাওরের জমিতে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ২০০৪—২০০৫ অর্থ-বছরে রাবার ড্যাম প্রকল্প করে স্থানীয় গোপলা নদী থেকে শীত মৌসুমে হাওরে পানি আনার ব্যবস্থা করেছিলেন।

পূবের হাওরে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এতো বেশি পরিমাণ কৃষি জমির অপচয় হবে বলে আমরা কৃষকরা বুঝিনি। তাছাড়া কোম্পানির লোকেরা সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের আগে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষক-মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করতো যে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে ধান-মাছ চাষের কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। তাদের আশ্বাসে ভরা কথাগুলো এখন মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছে। অর্থাৎ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের দখলী ভূমিতে ধান, মিঠাপানির প্রাকৃতিক মাছ বা অন্য কোনো ফসলের চাষাবাদ হবে না।

বর্ণিত অবস্থায় এই পূবের হাওরের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজ ভূমি কৃষি-কাজের জন্য অকার্যকর করার পরেও আমরা শুনেছি, হাওরের বাকি দুই তৃতীয়াংশ কৃষি জমি জুড়ে আরও ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প করা হবে। এবং সাথে হাওর ভরাট করে নানা-ধরনের শিল্প কারখানাও হবে। তারমানে হলো এই পূবের হাওরের কৃষিজ উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। হাওরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহকারী কৃষক মৎস্যজীবি কর্মহীন হবে এবং এলাকার বনেদী কৃষক পরিবারগুলোও ১২ মাস কিনে খেতে হবে। ছোট্ট একটি দেশ আমাদের। জনসংখ্যার তুলনায় কৃষিজমি নিতান্ত অপ্রতুল। সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের বিকল্প জায়গা ভূমি-পরিবেশ-জলাধার আইন লঙ্ঘন করে, কৃষিজমি এবং হাওরকে ধ্বংস করে এমন প্রকল্প গ্রহণ কৃষিজ উৎপাদন ও কৃষক সহায়ক নীতির হতে পারে না। এমন ধ্বংস যজ্ঞের পরিবেশ ছাড়পত্র, ভূতাপেক্ষ ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হয়েছে বা হবে তা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।

অতএব, আমাদের এলকার মানুষের জীবন-যাপন ও জীবন-জীবিকার অংশ ‘পূবের হাওর’ এর বাকি অংশ বাঁচাতে আমরা মৌলভীবাজারবাসীর সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা চাই। কৃষি, কৃষক ও হওর-পরিবেশ রক্ষার লড়াই-সংগ্রামে পাশে পেতে চাই।

আথানগিরি গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সুস্বাদু মাছের জন্যও প্রসিদ্ধ এই বড় হাওর। সেটা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়লো।’

গ্রামের মুরুব্বি আবদুস সোবহান ছুফাই বলেন, ‘এভাবে চোখের সামনে পূবের হাওর বদলে যাচ্ছে! হাওরে কোম্পানি এসে প্রকল্প করে ফেলতেছে। মানুষ বাড়িঘর করে ফেলছে।’

বড় হাওর ও হাইল হাওরের ওপর নির্ভরশীল মানুষ চোখের সামনে কৃষি জমি ও জলাশয় বিলীন হওয়া রূপান্তরগুলো দেখছেন। যেটি ধান ও মাছের উর্বর উৎসস্থল। এতে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণবিদেরাও।

উল্লেখ্য- গত ১২ অক্টোবর একই দাবিতে পূবের হাওরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াগাও এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবিরা। এতে হাওর আন্দেলন মৌলভীবাজারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে কৃষকদের কথা শোনেন।

আন্দোলন সংগঠন ও প্রচারে: আথানগিরি, মোকামবাড়ি, নোয়াপাড়া এলাকার সর্বস্তরের কৃষক মৎস্যজীবী জনসাধারণ। সহযোগিতায়: হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার। যোগাযোগ: 01749-928041, 01779-847557 (কৃষক পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য)।। 01711-300728, 01722254245 (জেলা-পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য)।

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

এএফসি চ্যালেঞ্জ লীগের মিশনে কুয়েতে বসুন্ধরা কিংস, প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ

সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটি- অগ্রদৃষ্টি

কুয়েতে ৫৪৬ "CIVIL ID" ঠিকানা হালনাগাদে ১ মাস সময়: অন্যথায় ১০০ দিনার জরিমানা

পাপুলকে ঘিরে এক প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মীর স্মৃতি-অভিজ্ঞতা

গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

কুয়েতের স্মার্ট নিরাপত্তা টহল পরিদর্শনে উপ-প্রধানমন্ত্রী: অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

কুয়েতের স্কুলগুলোতে সব ধরনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

'মৃত্যুফাঁদে' ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সিলেটে গণঅবস্থান, হুঁশিয়ারি বিএনপির

কুয়েতে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব কুয়েত কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫: শিরোপা জিতল সিলেট নবজাগরণ স্পোর্ট...

কুয়েতে যত্রতত্র আবর্জনা ফেললেই কঠোর শাস্তি: প্রবাসীদের জন্য নির্বাসন, নাগরিকদের জেল

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» এএফসি চ্যালেঞ্জ লীগের মিশনে কুয়েতে বসুন্ধরা কিংস, প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ

» কুয়েতে আনন্দ উৎসব ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা- অগ্রদৃষ্টি

» কৃষি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদ,হাওর রক্ষায় কৃষক আন্দোলন, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

» সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটি- অগ্রদৃষ্টি

» কুয়েতে প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে হাসপাতাল, মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশাল বিনিয়োগ

» কুয়েত ইমিগ্রেশনে বড় কেলেঙ্কারি: এন্ট্রি-এক্সিট রেকর্ড জাল করার দায়ে কর্মকর্তা আটক- অগ্রদৃষ্টি

» কুয়েতে ট্র্যাফিক ও অপরাধ দমনে পুলিশের কড়া অভিযান: রেকর্ড হলো হাজার হাজার আইন লঙ্ঘন

» কুয়েতে চাহিদা বাড়ায় আরও ক্যাম্পিং “খেমা” সাইটের চিন্তা

» মালদ্বীপে ‘হিউম্যান হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’ পেলেন প্রবাসী সাংবাদিক

» কুয়েতে ৫৪৬ “CIVIL ID” ঠিকানা হালনাগাদে ১ মাস সময়: অন্যথায় ১০০ দিনার জরিমানা

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

কৃষি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের প্রতিবাদ,হাওর রক্ষায় কৃষক আন্দোলন, দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধিঃ হাওর রক্ষায় মৌলভীবাজারে শুরু হয়েছে কৃষক আন্দোলন। সদর উপজেলার পূবের হাওরে সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপনের প্রতিবাদে রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরের দিকে জেলা শহরের আদালত সড়কে মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

হাওরাঞ্চলের কৃষিজমির শ্রেণি পরিবর্তন করে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ এবং হাওরের পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের প্রতিবাদ, পূবের হাওরের বাকি অংশ রক্ষার দাবি জানান কৃষক, মৎস্যজীবি, হাওর ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সদস্যরা।

পূবের হাওর অধ্যুষিত আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া একালাকার সর্বস্তরের কৃষক-মৎস্যজীবী জনসাধারণের উদ্যোগে এই কৃষক আন্দোলনে সহযোগিতা করে ‘হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার’।

কৃষকেরা বলেন, ‘এই পূবের হাওর আমাদের জীবিকার অংশ। গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। এই হাওরের ধান না পেলে মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়বে। অথচ আমরা এই হাওরে উৎপাদিত ধান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করি। দূরের পাইকার ও মিল মালিকরা এসে ধান কিনে নিয়ে যায়। সেই হাওরের ধান উৎপাদন বন্ধ হওয়ার সমস্ত আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন আর এই জমিতে ধান উৎপাদন হবে না। ফলে, ধান বিক্রি তো দূরের কথা, নিজেরাই খাবারের চাল পাব না, দুর্ভিক্ষের মধ্যে পড়ব। শুধু ধান নয়, হাওরের আশেপাশের গ্রামের কৃষকরা গরু ও ছাগল চড়ান। সেটাও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’

কৃষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, হাওর রক্ষা আন্দোলন করায় মিথ্যা মামলা ও হয়রানির ভয়-হুমকি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।

প্রতিবাদ সভায় জেলার হাইল হাওর ও কাউয়াদীঘি হাওরে একইরূপে সোলার প্যানেল প্রকল্প স্থাপন উদ্যোগের প্রতিবাদ জানানো হয়।

শহরের আদালত সড়কে পুরাতন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দুপুরের বারোটার দিকে মানবন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বিক্ষোভ মিছিল করেন কৃষক, মৎস্যজীবি, হাওর আন্দোলনের সদস্য ও পরিবেশকর্মীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানবন্ধনে সভাপতিত্ব করেন কৃষকনেতা আব্দুল সোবাহান। সমাবেশ পরিচালনা করেন হাওর রক্ষা আন্দোলন নির্বাহী সদস্য মো. শাহিন ইকবাল। বক্তব্য রাখেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের নেতা ও ধরার কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আব্দুল করিম কিম, প্রফেসর সেলিমুজ্জামান, হাওর রক্ষা আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলার আহবায়ক আ স ম ছালেহ সোহেল, সদস্য সচিব এম খছরু চৌধুরী, রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা আহমদ বেলাল, নির্বাহী সদস্য শামসুদ্দিন মাস্টার, আলমগীর হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম। পূবের হাওরের এলাকা থেকে বক্তব্য রাখেন শামিম আহমদ, মাওলানা মহসিন আহমদ, আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনসিপি নেতা এহসান জাকারিয়াসহ মৌলভীবাজার জেলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

*কৃষক-মৎস্যজীবি ও হাওর আন্দোলনের বক্তব্য*
বিকল্প জায়গা থাকতে ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন ও কৃষিজমি নষ্ট করে ‘পূবের হাওরে’ ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রতিরোধের আহ্বান জানান আনেদালনকারীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশে শেষে এক প্রেসনোটে কৃষক-মৎস্যজীবি ও হাওর আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন-
মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার ৪ নং আপার কাগাবালা ইউনিয়নের আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াপাড়া গ্রাম-সহ আশপাশের ১৫ হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি জনগণের মিঠাপানির মাছ, ভাত ও কৃষিজ ফসল উৎপাদনের চাহিদাপূরণ করছে ‘পূবের হাওর’ নামের হাওরটি। যুগযুগ ধরে এ এলাকার প্রায় আড়াই হাজার কৃষক-মৎস্যজীবি পরিবারের জীবন-জীবিকা এই হাওরের উপর নির্ভরশীল। উল্লিখিত তিনগ্রামের মানুষের কৃষিজ উৎপাদনে এ পূবের হাওর-ই একমাত্র হাওর।

পূবের হাওরের ১০০ একর ফসলী ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করে Moulvibazar Solar PV Park নামীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। এতে, চিরতরের জন্য পূবের হাওরের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ফসলী জমির কৃষিজ উৎপাদন হারিয়ে গেছে। অথচ, এ হাওরের জমিতে কৃষিজ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান ২০০৪—২০০৫ অর্থ-বছরে রাবার ড্যাম প্রকল্প করে স্থানীয় গোপলা নদী থেকে শীত মৌসুমে হাওরে পানি আনার ব্যবস্থা করেছিলেন।

পূবের হাওরে ১০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এতো বেশি পরিমাণ কৃষি জমির অপচয় হবে বলে আমরা কৃষকরা বুঝিনি। তাছাড়া কোম্পানির লোকেরা সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের আগে স্থানীয় গ্রামবাসী ও কৃষক-মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কাছে প্রচার করতো যে, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে ধান-মাছ চাষের কোনোরূপ ক্ষতি হবে না। তাদের আশ্বাসে ভরা কথাগুলো এখন মিথ্যা প্রমাণ হচ্ছে। অর্থাৎ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের দখলী ভূমিতে ধান, মিঠাপানির প্রাকৃতিক মাছ বা অন্য কোনো ফসলের চাষাবাদ হবে না।

বর্ণিত অবস্থায় এই পূবের হাওরের এক তৃতীয়াংশ কৃষিজ ভূমি কৃষি-কাজের জন্য অকার্যকর করার পরেও আমরা শুনেছি, হাওরের বাকি দুই তৃতীয়াংশ কৃষি জমি জুড়ে আরও ২৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প করা হবে। এবং সাথে হাওর ভরাট করে নানা-ধরনের শিল্প কারখানাও হবে। তারমানে হলো এই পূবের হাওরের কৃষিজ উৎপাদন, জলজ উদ্ভিদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধীরে ধীরে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। হাওরকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহকারী কৃষক মৎস্যজীবি কর্মহীন হবে এবং এলাকার বনেদী কৃষক পরিবারগুলোও ১২ মাস কিনে খেতে হবে। ছোট্ট একটি দেশ আমাদের। জনসংখ্যার তুলনায় কৃষিজমি নিতান্ত অপ্রতুল। সবুজ জ্বালানি উৎপাদনের বিকল্প জায়গা ভূমি-পরিবেশ-জলাধার আইন লঙ্ঘন করে, কৃষিজমি এবং হাওরকে ধ্বংস করে এমন প্রকল্প গ্রহণ কৃষিজ উৎপাদন ও কৃষক সহায়ক নীতির হতে পারে না। এমন ধ্বংস যজ্ঞের পরিবেশ ছাড়পত্র, ভূতাপেক্ষ ছাড়পত্র কিভাবে দেওয়া হয়েছে বা হবে তা আমাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।

অতএব, আমাদের এলকার মানুষের জীবন-যাপন ও জীবন-জীবিকার অংশ ‘পূবের হাওর’ এর বাকি অংশ বাঁচাতে আমরা মৌলভীবাজারবাসীর সর্বস্তরের জনসাধারণের সহযোগিতা চাই। কৃষি, কৃষক ও হওর-পরিবেশ রক্ষার লড়াই-সংগ্রামে পাশে পেতে চাই।

আথানগিরি গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘সুস্বাদু মাছের জন্যও প্রসিদ্ধ এই বড় হাওর। সেটা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়লো।’

গ্রামের মুরুব্বি আবদুস সোবহান ছুফাই বলেন, ‘এভাবে চোখের সামনে পূবের হাওর বদলে যাচ্ছে! হাওরে কোম্পানি এসে প্রকল্প করে ফেলতেছে। মানুষ বাড়িঘর করে ফেলছে।’

বড় হাওর ও হাইল হাওরের ওপর নির্ভরশীল মানুষ চোখের সামনে কৃষি জমি ও জলাশয় বিলীন হওয়া রূপান্তরগুলো দেখছেন। যেটি ধান ও মাছের উর্বর উৎসস্থল। এতে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণবিদেরাও।

উল্লেখ্য- গত ১২ অক্টোবর একই দাবিতে পূবের হাওরে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন আথানগিরি, মোকামবাড়ি ও নোয়াগাও এলাকার কৃষক ও মৎস্যজীবিরা। এতে হাওর আন্দেলন মৌলভীবাজারের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে কৃষকদের কথা শোনেন।

আন্দোলন সংগঠন ও প্রচারে: আথানগিরি, মোকামবাড়ি, নোয়াপাড়া এলাকার সর্বস্তরের কৃষক মৎস্যজীবী জনসাধারণ। সহযোগিতায়: হাওর রক্ষা আন্দোলন, মৌলভীবাজার। যোগাযোগ: 01749-928041, 01779-847557 (কৃষক পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য)।। 01711-300728, 01722254245 (জেলা-পর্যায়ে যোগাযোগের জন্য)।

Facebook Comments Box

সাম্প্রতিক খবর:

এএফসি চ্যালেঞ্জ লীগের মিশনে কুয়েতে বসুন্ধরা কিংস, প্রবাসীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ

সিলেট রত্ন ফাউন্ডেশনের নতুন কমিটি- অগ্রদৃষ্টি

কুয়েতে ৫৪৬ "CIVIL ID" ঠিকানা হালনাগাদে ১ মাস সময়: অন্যথায় ১০০ দিনার জরিমানা

পাপুলকে ঘিরে এক প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মীর স্মৃতি-অভিজ্ঞতা

গ্লোবাল জালালাবাদ এসোসিয়েশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত

কুয়েতের স্মার্ট নিরাপত্তা টহল পরিদর্শনে উপ-প্রধানমন্ত্রী: অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার

কুয়েতের স্কুলগুলোতে সব ধরনের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়

'মৃত্যুফাঁদে' ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক: দ্রুত সংস্কারের দাবিতে সিলেটে গণঅবস্থান, হুঁশিয়ারি বিএনপির

কুয়েতে ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব কুয়েত কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫: শিরোপা জিতল সিলেট নবজাগরণ স্পোর্ট...

কুয়েতে যত্রতত্র আবর্জনা ফেললেই কঠোর শাস্তি: প্রবাসীদের জন্য নির্বাসন, নাগরিকদের জেল


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 23 Oct.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।