ইউরিনে ইনফেকশন ভীষণ পরিচিত একটি সমস্যা। গরমের সময়ে এই সমস্যা বেড়ে যাবার প্রবণতা থাকে বেশী। পুরুষের তুলনায় এই অসুখের প্রবণতা নারীদের বেশি। আর আমাদের দেশে বিভিন্ন অসুখের জীবাণু বাতাসে ভেসে বেড়ায়। পরিষ্কার পরিচ্ছন্তা ও সঠিক জ্ঞানের অভাবে বেড়ে যায় ইউরিন ইনফেকশানের মাত্রা। ইউরিন ইনফেকশানের কারণ সম্পর্কে মিটফোর্ড হসপিটালের গ্যাসট্রোএন্টোরোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ. এন. এম. সাইফুল্লাহ্ বলেন, “ইউরিনে ইনফেকশান আমাদের দেশের ভীষণ পরিচিত একটি সমস্যা। তবে শারীরিক গঠনের জন্য এই সমস্যা পুরুষের তুলনায় নারীদের হয় বেশী।” তাঁর মতেÑ ইউরিনে ইনফেশানের প্রধান সমস্যাগুলো হলোÑ
জননতন্ত্রের ইনফেকশান।
দীর্ঘ সময় যাবৎ মূত্র ত্যাগ না করা বা আটকে রাখা।
একবার ইউরিনে ইনফেকশান হলে আবারো হবার সম্ভাবনা থাকে, যদি সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হয়।
যারা পানি খুব কম খান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারেন না, দিনের পর দিন এই সমস্যা চলতেই থাকলে, ইউরিনে ইনফেকশান হয়।
ইউরিনে ইনফেকশানের দায়ী প্রধান ব্যাকটেরিয়া হলো ই. কোলাই (ঊ. ঈড়ষর)। এই ব্যাকটেরিয়া পাকস্থলী ও খাদ্যনালীতে থাকে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, এই ব্যাকটেরিয়া জননতন্ত্রে বাসা বাধতে পারে এবং যখন একজন নারী বা পুরুষ সঠিক সময়ে মূত্র ত্যাগ না করে, ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখে, তখন ই. কোলাই দ্রুত আক্রমণ করে।
বড় কোন অপারেশনের পরে ক্যাথেটার (অপারেশনের পরে মূত্র নির্গমনের জন্য দেয়া বিশেষ ধরণের পাইপ) দেয়া থাকে। ক্যাথেটার দীর্ঘ দিন থাকলে এবং সঠিকভাবে পরিষ্কার না করলেও ইউরিনে ইনফেকশান হয়। যাদেরকে প্যামপার পরে হসপিটালের বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়, তাদেরও এই সমস্যা হতে পারে।
একাধিক নারী পুরুষের সাথে দৈহিক সম্পর্ক, স্যাঁতসেতে জায়গায় বসবাস, অতিরিক্ত নোংরা টয়লেট ব্যবহার করা, নিয়মিত গোসল না করা, যৌন রোগে আক্রান্ত বা রোগীদের ইউরিনে ইনফেকশান হবার সম্ভাবনা খুব বেশী।
কিডনী বা জননতন্ত্রের কোথাও পাথর থাকলেও এই সমস্যা হয়।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, প্যারালাইসিস, ক্যানসার এই ধরণের অসুখ থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখনও ইনেফেকশানের মাত্রা বেড়ে যায়।
লক্ষণগুলোÑ
হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর বা জ্বর জ্বর লাগা, কোমড়ের দুই পাশে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব, পেসাবে প্রচন্ড জ্বালা পোড়া, চুলকানো।
দুর্গন্ধময় পেসাব। অনেক সময় ফেনাযুক্ত পেসাব হয়। সঠিকভাবে নাও হতে পারে। মনে হয় অনেক পেসাব হবে কিন্তু পরিষ্কারভাবে হয়না।
অনেক সময় মূত্রের সাথে রক্তও যেতে পারে।
থাই এর দুই কোণাতে ব্যথা থাকতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
পেসাব পরীক্ষা (ইউরিন আর.ই. এবং ইউরিন সি.এস.)
সি.আর.পি. (রক্তে ইনফেকশানের মাত্রা কতোটা আছে তা জানাটা ভীষণ জরুরী)
কিডনী ও তার আশেপাশের অঙ্গগুলোর আল্ট্রাসনোগ্রাফী
প্রতিকারঃ
আমাদের নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, পুষ্টিকর খাবার, মৌসুমী ফল খেতে হবে।
বাসার খাবার পূর্বে, ঘুমানোর পূর্বে মূত্র ত্যাগ করে ঘুমাতে হবে।
নিয়মিত গোসল ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। পরিধেয় বস্ত্র, বাসস্থান, টয়লেট পরিচ্ছন্ন হওয়াটা ভীষণ জরুরী।
যাদের কিছু দিন পর পর ইউরিনে ইনফেকশান হয়, তারা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
যারা অতিরিক্ত ঘেমে যান, তারা নিয়মিত লিটার পানি পান করুন।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জনগণের কল্যাণে টয়লেট স্থাপন করতে হবে।
ডাঃ ফারহানা মোবিন
এমবিবিএস (ডি.ইউ), পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন (পাবলিক হেল্থ),
পিজিটি (গাইনী এন্ড অবস্-স্কয়ার হাসপাতাল),
রেসিডেন্ট মেডিকেল অফিসার (গাইনী এন্ড অবস্),
স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা, বাংলাদেশ,
ডায়াবেটোলোজি, বারডেম হসপিটাল (অনগোয়িং)
উপস্থাপিকাঃ ‘প্রবাসীর ডাক্তার’ বাংলাটিভিতে প্রচারিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান
সম্পাদকঃ (কুয়েত বাংলা নিউজ ডটকম) www.kuwaitbanglanews.com
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকঃ অগ্রদৃষ্টি নিউজ পোর্টাল