সৈয়দ সুমন,লেস্টার,ইউ কেঃ রাজনীতিতে “পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ” বলতে একটি ব্যাপার রয়েছে। যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহিষ্ণুতা আদৌ আছে কি না,সেটা বলা খুবই মুশকিল।তাপমাত্রা মাপার মতো কোন বিশেষ ধরনের যন্ত্র থাকলে হয়তো সেটা বলা যেত যে,কতটুকু আছে।কেননা বর্তমান রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই বললেই চলে।একদল আরেক দলের প্রতি প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও ব্যক্তিগত আক্রমণই যেন এখন এক নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি।আর দিনে দিনে এর মাত্রা যেন বেড়েই চলছে।যার ফলশ্রুতিতে জন্ম নিচ্ছে হানাহানি ও পারস্পপরিক অ-শ্রদ্ধা।
কিছুদিন অাগে টেলিভিশনে তৃতীয় মাত্রা নামে একটি টকশো অনুষ্ঠান দেখছিলাম।অনুষ্ঠানে দুজন অতিথি। দুজনই বাংলাদেশের খ্যাতনামা রাজনীতিবিদ এবং দুজনই বাংলাদেশের প্রধান দু রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন।অনুষ্ঠানে কথা বলার বিষয়টি ছিল সদ্য নির্বাচন নিয়ে। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দুজনই মূল প্রসঙ্গ ছেড়ে চলে গেলেন আরেক প্রসঙ্গে।একজন বলছেন,৭১ এর স্বাধীনতার যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের তেমন কোন অবদান-ই ছিল না।কেননা তিনি তখন দেশেই ছিলেন না।
আরেকজন বলে উঠলেন,সে সময় জিয়া ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন সামান্য অফিসার মাত্র।আর কিছুই না।মুজিব ছিলেন সব।শুরু হলো দুজনের তুমূল উতপ্ত বাক্য বিনিময়।সেই সাথে ব্যক্তিগত আক্রমণ। পরিশেষে উপস্থাপকের হস্তক্ষেপে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা।
এই হলো আমাদের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচারের এক খন্ড চিত্র মাত্র।
অথচ আমি,আপনি বা আমরা যে যেই ইতিহাসই পর্যালোচনা করি না কেন সমাপ্ত বা অসমাপ্ত,বিকৃত বা স্বীকৃত,চাইলেই কি আমরা এ দু জনের কোন একজনকে আমাদের ইতিহাস থেকে বাদ দিতে পারবো?সেটা কি আদৌ সম্ভব?কখনো সম্ভব না।পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক একটি সফল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এ দুটি মানুষের অবদান ছিল অনিস্বীকার্য।হয়তোবা কারো অবদান বেশী,কারোবা কম।স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশেকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে তাদের ছিল নিরলস প্রচেষ্টা।গনমানুষের প্রতি অসীম ভালোবাসার স্বীকৃতি সরূপ একজনের ভাগ্যে জুটেছিল বঙ্গবন্দু উপাধি,আর স্বাধীনতা সংগ্রামে অসামান্য অবদানের জন্য আরেকজনের ভাগ্যে জুটেছিল বীরউত্তম খেতাব।দুজন-ই ছিলেন বাংলার ইতিহাসে ক্ষণজন্মা সফল রাষ্ট্র নায়ক।যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় চিরদিন থাকবে স্বর্ণাক্ষরে লিখা।আমি বা আপনি চাইলেই সে লেখা মুছে ফেলতে পারবো না।
অথচ বর্তমান রাজনীতিতে আমরা এ কি দেখতে পাচ্ছি? চাটুকারিতা আর নীতিহীন রাজনীতির বাজারে অামাদের এ দু “রহমান” ই যেন বলীর পাঠা।অসুস্থ রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এ দুজনই যেন প্রধান হাতিয়ার!!!
কিন্তু কেন?এদের দুজনকে অসম্মান না করে কি আমাদের রাজনীতি করা যায় না।কোন সংবিধানে লিখা আছে যে,রাজনীতি করতে হলে জাতীয় বীরদের অপমান করতে হবে?কোথায় সে লেখা?নাকি এটা শুধু আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি?
আমরা যদি আমাদের ঘাড়টা ঘুরিয়ে একটু তাকাই,তবে কি দেখতে পাই।ভারতের মাটিতে জন্ম নেয়া এক প্রবাদ পুরুষ মহাত্মা গান্দি।জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষ যে মানুষটির প্রতি সে দেশের মানৃুষের রয়েছে অপার শ্রদ্ধা। ভারতের ইতিহাসে এ এক মুকুটহীন সম্রাট।যিনি না ছিলেন রাষ্ট্রপতি,না ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।অথচ এ মানুষটিই সবার প্রিয় “বাপু”।সেই সময়কার অক্সফোর্ডের বার এট লো খ্যাত এ মানুষটির সম্মান ও স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে।তার Non- violent Resistance আজ যেন বিশ্ব রাজনীতির এক মূল মন্ত্র।
কিন্তু অত্যন্ত দু:খের বিষয়,স্বাধীনতার ৪৩ টি বছর পেরিয়ে গেলেও জাতি হিসেবে এখন পর্যন্ত আমরা কাউকেই সেই মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পারিনি।অার কোনদিন পারবো কি না,সেটাও জানা নেই।কারণ এ দুজন মানুষকে নিয়ে আমাদের মাঝে বিতর্কের যেন শেষ নেই!জাতি হিসেবে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে?
তাই আসুন,এই অসুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াই।আমাদের জাতীয় বীরদের সম্মান করতে শিখি।অাগামী প্রজন্মের সামনে তাদের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরি।এখনো সময় রয়েছে আমাদের কিছু করার।তা না হলে হয়তো কোন একদিন অামরা অামাদের অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেলবো।হয়ে উঠবো নাম পরিচয়হীন এক কুলাঙ্গার জাতি!!