ক্রীড়া প্রতিবেদক : শেষ পাঁচ মিনিটের পুরোটাই কি ম্যাজিক? ম্যাজিক হলে পুরো ম্যাচটাই হয়ে যায় নাবিব নেওয়াজময়। পুরো মৌসুমে গোলহীন স্থানীয় এ স্ট্রাইকার বদলি হয়ে নেমে হঠাৎ জ্বলে ওঠেন।
তাতেই শেষ মুহূর্তে শেখ জামালের জালে তাঁর জোড়া গোল, সুবাদে ঢাকা আবাহনী ৩-২ গোলে জিতে লিগ শিরোপার পথে অবিচল। কিন্তু ইনজুরি টাইমে গোল দুটির সময় কেমন যেন দাঁড়িয়েছিলেন শেখ জামালের ডিফেন্ডাররা। ম্যাচ শেষে টেন্টে এসে রুদ্ররূপে আবির্ভূত হলেন দুই বিদেশি ল্যান্ডিং আর এমেকা, তাঁরা নিজেদের দলের এক কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে গালাগালি করতে শুরু করেন। শেষ বাঁশির সঙ্গে সঙ্গেই তিনি অবশ্য বাড়ির পথ ধরেছেন। মাঠের বাইরে থেকে এই শেখ জামাল কর্মকর্তার কী কীর্তি ছিল কে জানে। শেখ জামাল কোচ জসীম উদ্দিন জোসি ভগ্ন হৃদয়ে বলেছেন, ‘৯০ মিনিট আমরা ভালো খেলেছি, ইনজুরি টাইমের চার মিনিটে সেই খেলাটা ধরে রাখতে পারিনি। ’
এই ম্যাচে আবাহনী খেলতে পারেনি তাদের স্বাভাবিক খেলা। একসঙ্গে ইনজ্যুরড সানডে চিজোবা ও নিষেধাজ্ঞার কারণে লি’র অনুপস্থিতিতে যেন ফাটল ধরেছিল তাদের আত্মবিশ্বাসে। এর সঙ্গে যোগ হয় আত্মবিশ্বাসহীন এক গোলরক্ষকের গোল খাওয়ার প্রবণতা। শহীদুল আলম যেন কাল গোল খাওয়ার জন্যই দাঁড়িয়েছিলেন আকাশি-নীলের পোস্টে। তাঁর ভুলেই দুটি গোল খেয়ে হারার পথ ধরেছিল চারবারের চ্যাম্পিয়নরা। আবার তাদের জয়ের পথে ফেরানোর জন্যই শেষ মুহূর্তে নেমেছিলেন নাবিব নেওয়াজ। ত্রাতা হয়ে ম্যাচ জিতিয়ে শিরোপা-শঙ্কায় পড়তে দেননি ঢাকা আবাহনীকে। ২০ ম্যাচে ৪৬ পয়েন্ট নিয়ে তারাই এখন শিরোপার বড় দাবিদার। এক ম্যাচ কম খেলে চট্টগ্রাম আবাহনীর ৪০ পয়েন্ট। শেখ জামালের সংগ্রহ ৩০ পয়েন্ট।
ম্যাচের প্রথমার্ধে আবাহনীর আক্রমণে ছিল না সেরকম ধার। একটা ভালো আক্রমণ এবং একটিই সুযোগ পেয়েছে ৪৪ মিনিটে, সেটিই গোলে রূপ দিয়েছেন জুয়েল রানা। ইংলিশ ফরোয়ার্ড জোনাথনের ডানদিক থেকে পাঠানো নিখুঁত ক্রসে ইমন বাবুর ভলি গোলরক্ষক হিমেল ফেরালেও ফিরতি বলে জুয়েল রানার হেড পৌঁছে যায় জামালের জালে। দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হতেই সেই গোল শোধ করে ম্যাচে ফিরে আসে শেখ জামাল। তবে তারাই আগে গোল করতে পারত। সেরকম সুযোগ করে দিয়েছিলেন আবাহনী গোলরক্ষক শহীদুল আলম। তিন-তিনবার তৈরি করে দিয়েছিলেন। ৪১ মিনিটে তপু বর্মণের ব্যাক পাস ধরতে অযথা গোলপোস্ট ছেড়ে এসে সুযোগ করে দিলেও এমেকা পোস্টে রাখতে পারেননি বল। তবে ৪৮ মিনিটে শহীদুলের ভুলের মাসুল দিতে হয়েছে আবাহনীকে। লিঙ্কনের ফ্রি-কিকে তাঁর দুর্বল পাঞ্চ পড়ে ল্যান্ডিংয়ের পায়ে, তারপর এই গাম্বিয়ানের ভলিতে ম্যাচে ফেরে জামাল। ৮১ মিনিটে এই গোলরক্ষকের আরেকটি ভুল, মাঝমাঠ থেকে পাঠানো লং বলটি ধরতে তিনি বেরিয়েছেন দেরিতে। তাঁর মাথার ওপর দিয়ে নাইজেরিয়ান এমেকা আবাহনীর জালে বল জমা করে দিয়ে ২-১ গোলে এগিয়ে নেন শেখ জামালকে।
হারের গন্তব্যের দিকেই যেন যাত্রা আবাহনীর। এই অগস্ত্য যাত্রা ঠেকাতে হঠাৎ নাটকীয়ভাবে হাজির নাবিব নেওয়াজ। ৮৯ মিনিটে ইমন বাবুর বদলি হয়ে নামা এই ফুটবলারকে দিয়ে দলের ভাগ্য ফিরবে, সেটা কেউ কল্পনাও করেনি। কারণ চলতি মৌসুমে আকাশি-নীল জার্সিতে ১৬টি ম্যাচে শুরু থেকে খেলেও গোলের মুখ দেখেননি। কিন্তু এই দেশি ফরোয়ার্ডের পায়ে কাল হঠাৎ গোলের মিছিল। ৯১ মিনিটে জুয়েল রানার বাঁদিক থেকে বাড়ানো ক্রসটি তিনি বুকে লাগিয়ে গোলে পৌঁছে দিয়েছেন। দুই মিনিট বাদে ঠিক আগের গোলের রিপ্লে—জুয়েল রানার নিচু ক্রসে তাঁর ভলিতে ত্রয়োদশ জয়ে আবাহনী শিরোপার পথে জোর পদক্ষেপ ফেলে। চার মিনিটে দুই গোল! নাবিব নেওয়াজও ভাবেননি এতটা, ‘আসলে গোল মিস করতে করতে আমার আত্মবিশ্বাস তলানিতে নেমে গিয়েছিল। প্র্যাকটিসেও সহজ গোল মিস করতাম। আল্লাহর কাছে কত দোয়া করেছি। মাত্র চার মিনিটে আমাকে দুই গোল উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে এই ম্যাচের ম্যান অব দ্য ম্যাচ জুয়েল রানা, সহজ দুটি গোল বানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ’
তবু কেন যে জামালের দুই বিদেশি ম্যাচের পর ক্লাব কর্মকর্তাদের গালাগাল করলেন, সন্দেহও উসকে দিয়েছে যা!