এ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি সৈয়দ শামসুল হক বাদল জানান, এদিন জেরা শেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য দিন রাখার কথা ছিল। কিন্তু মুন্সি আতিক ‘সম্পূর্ণ জেরার’ জন্য প্রস্তুত না থাকায় আদালত নতুন দিন রাখেন।
বাদল সাংবাদিকদের বলেন, সব ঠিক থাকলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নতুন বছরের শুরুতেই এ মামলার রায় আসতে পারে।
দুই মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত করকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের তিন আইনজীবীর মধ্যে এদিন কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে আদালতের অনুমতি নিয়ে তিনি নিজেই তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন।
ডাণ্ডাবেরি পরা অবস্থায় আকাঠগড়া থেকে নির্বিকার ভঙ্গিতে থেকে মুন্সি আতিককে মামলার তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন এই জঙ্গি নেতা।
হান্নান বলেন, “দেখুন আমি একজন সন্মানিত ব্যক্তি, আলেম, সমাজসেবক এবং একজন এনজিও প্রতিষ্ঠাতা; দরিদ্র অসহায় মানুষের সাহায্যকারী।”
এ সময় মুন্সি আতিক বলেন, এ সব বিষয়ে তিনি তদন্তে কিছু পাননি।
মুফতি হান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার নির্বাচনী এলাকা একই, অর্থাৎ কোটালীপাড়ায়। তার আপন চাচা মুন্সি সিরাজুল ইসলাম গোপালগঞ্জ জেলার কৃষক লীগের সভাপতি। তার আত্মীয়দের অনেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত।
মুন্সি আতিক এ সময় বলেন, এসব বিষয় তিনি শুনেছেন।
মুফতি হান্নান ও মুন্সি আতিক দুজনেই ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি।
মুফতি হান্নান
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরতাকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিতে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলা হয় মুফতি হান্নানকে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মুফতি হান্নানের বাড়ি৷ গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসায় তিনি লেখাপড়া করেছেন।
সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা এবং রমনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার ঘটনায় হান্নানের মৃত্যুদণ্ডের রায় এসেছে আদালতে।
শেখ হাসিনার ভাষণের জন্য মঞ্চ নির্মাণের সময় ২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি দোকানের সামনে থেকে পুঁতে রাখা ৭৬ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। দুই দিন পরে ওই মহাবিদ্যালয়ের মাঠে একটি জনসভায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণ দেয়ার কথা ছিল।
এ ঘটনায় কোটালিপাড়া থানার এসআই নূর হোসেন বাদী হয়ে থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন। তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল, তাতে আসামি করা হয় ১৬ জনকে। পরে ২০০৯ সালের ২৯ জুন নতুন করে নয় জনকে অন্তর্ভুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
গোপালগঞ্জের আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্রটি যখন দেওয়া হয়, তখন রাষ্ট্রপক্ষে ৮৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরে তখনকার বিচারিক আদালতের বিচারক গোলাম মুরশেদ ওই ৪১ সাক্ষীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আবার ডাকেন।
জনগুরুত্বসম্পন্ন, স্পর্শকাতর ও আলোচিত হওয়ার কারণে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে গোপালগঞ্জের আদালত থেকে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে বর্তমানের ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় মামলার নথি।
এ ট্রাইব্যুনালের পেশকার কামাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মুন্সি আতিক এদিন দশম দিবসের মতো জেরার মুখোমুখি হন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৮৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৪ জনের সাক্ষ্য আদালত শুনেছে। আর কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
এ মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নানসহ নয় আসামি কারাগারে, একজন জামিনে এবং ১৫ জন পলাতক রয়েছেন।