নিজস্ব প্রতিবেধকঃ- সাব্বির রহমান খেললেন ৭৯ রানের ধ্রুপদী এক ইনিংস। তাকে ১২৪ রানের জুটিতে সঙ্গত দিয়ে ৪৪ রান করলেন শাহরিয়ার নাফীস। আর তাদের বীরত্বে বিপিএলের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার জিতে ফাইনালে উঠে গেল বরিশাল বুলস। সাকিব আল হাসানের রংপুর রাইডার্সকে রবিবার মাহমুদ উল্লার বরিশাল হারিয়েছে ৫ উইকেটে। ১৫ ডিসেম্বর মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সাথে শিরোপা লড়াইয়ে নামবে বরিশাল।
টস জিতে আগে ব্যাট করে ৯ উইকেটে ১৬০ রান করে রংপুর। লেন্ডল সিমন্স খেলেছিলেন ৭৩ রানের ইনিংস। এরপর সাব্বির ও নাফীস ম্যাচ বের করে নিয়েছেন রংপুরের হাত থেকে। ৩ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে ১৬৩ রান করে ম্যাচ জিতেছে বরিশাল। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন সাব্বির। ক্রিস গেইল ছিলেন না। রনি তালুকদারের সাথে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল সেকুগে প্রসন্নকে। দুজনই ফিরে গেছেন তিন ওভারের মধ্যে। এবারের আসরের প্রথম তিন ম্যাচ খেলে ভালো না করায় বাদ পড়েছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। এদিন চার নম্বরে নামলেন। অন্য প্রান্তে ছিলেন আগের ম্যাচে ফর্মে ফেরা সাব্বির রহমান। ১৬ রান আসলো সাকিবের করা পঞ্চম ওভারে। দুটি বাউন্ডারি মারলেন সাব্বির। একটি নাফীস। মোহাম্মদ নবিকে পরের ওভারেই একটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন সাব্বির। ১০ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার চাপ সামলেছে সাব্বির-নাফীস জুটি। এরপর কাজ ছিল প্রয়োজনীয় ৮ গড়ে রান করে যাওয়া। বাউন্ডারির সাথে স্ট্রাইক রোটেট করে সাফল্যের সাথেই এগিয়েছেন তারা। সাব্বির ৩৪ বলে এবারের আসরে তার প্রথম ফিফটিটা তুলে নিয়ে মাঠে সিজদা করেন। বোঝাই যায় কতোটা নির্ভার হয়েছেন এই ব্যাটসম্যান। রংপুর অধিনায়ক সাকিব বোলার বদলেছেন। সাফল্য আসছিল না। শেষ ৩০ বলে বরিশালের জিততে দরকার ৪৩ রান। তৃতীয় উইকেটে এই আসরের সর্বোচ্চ জুটিটা গড়ে ফেলেছেন সাব্বির ও নাফীস। আরাফাত সানি ইনিংসের ১৬তম ওভারে দিলেন ১৪ রান। জয় হাতছানি দিয়ে ডাকে বরিশালকে। জিততে অলৌকিক কিছু করতে হয় রংপুরকে। কিছুটা নাটকীয়তা এলো। ৭ রানের মধ্যে ফিরে গেলেন নাফীস ও সাব্বির। ৪০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪৪ করে রান আউট নাফীস। ৪৯ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৯ রান করেছেন সাব্বির। তারা তৃতীয় উইকেটে দিয়েছেন ১২৪ রান। শেষ ১৪ বলে ২০ রান ঠেকাতে পারলো না রংপুর। অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাও ৫ রান করে আউট! পরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে চাপ কমিয়ে দেন রায়াদ ইমরিট। শেষ ওভারে দরকার ৮ রান। প্রথম ৩ বলে দুই বাউন্ডারি সহ ১০ রান তুলে খেলা শেষ করে দেন কেভন কুপার! এর আগে জহরুল ইসলামের ইনজুরিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামেন রংপুরের ওপেনার রাসেল আল মামুন। লেন্ডল সিমন্সের সাথে তার জুটি তেমন গতি পায়নি। তবে একেবারে খারাপও হয়নি। ৮.৩ ওভারে তারা তুলেছেন ৫২ রান। পঞ্চম ওভারে সিমন্স চড়াও হন স্পিনার তাইজুল ইসলামের ওপর। ওই ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন। ২০ রান করেছেন মামুন। যাতে আছে একটি ছক্কাও। প্রসন্ন আউট করেছেন তাকে। এরপর দলের ৭০ রানের সময় কুপারের বলে চমৎকার একটি ক্যাচ নিয়েছেন মোহাম্মদ সামি। ৬ রান করে ফিরে গেছেন টুর্নামেন্টে ব্যর্থ সৌম্য সরকার। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সাথে সিমন্সের তৃতীয় উইকেটে ৪৪ রানের জুটি হয়েছে। কিন্তু দলকে আসলে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন সিমন্সই। প্রতি ওভারেই অন্তত একটি চার মারছিলেন। ১৩তম ওভারে আল আমিনকে লং অফের ওপর দিয়ে নিজের ইনিংসের দ্বিতীয় ছক্কাটি মেরেছেন সিমন্স। আগের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন। রনি তালুকদার কঠিন ক্যাচটা নিতে পারেননি। ওই ওভারেই এবারের বিপিএলের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন সিমন্স। এর পর টানা তিন ওভারে তিন উইকেট হারায় রংপুর। সাকিব ১৩ রান করে আল আমিনের বলে বোল্ড হয়েছেন। ৫৭ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ৭৩ রান করে সিমন্স ফিরেছেন সামির বলে স্টাম্প হারিয়ে। থিসারা পেরেরা (৫) ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন কুপারকে। তবে শেষ দিকে রংপুরের সংগ্রহে বড় ভূমিকা রেখেছে ড্যারেন স্যামির ১০ বলে করা ২৩ রান। ৩টি চার ও একটি ছক্কা মেরেছেন স্যামি। কুপারের শেষ ওভারে পড়েছে ৪ উইকেট! এর দুটি রান আউট। ৩৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন কুপার। এবারের বিপিএলে ২০ উইকেট নিয়ে এখন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এই পেসার। শেষে কুপারের ব্যাট থেকেই জয় সূচক রান নিয়ে ফাইনালে উঠেছে বরিশাল।