স্পোর্টস ডেস্কঃ ট্রফি হাতে নিয়ে হাসি মুখে পোজ দেওয়াই নিয়ম। সে কারণেই হয়তো ত্রিদেশীয় সিরিজে যৌথ শিরোপা জয়ী হয়ে সাকিব আল হাসানের মুখে দেখা গেল হাসি। নইলে ঘরের মাঠে বছরের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজে হাসির উপলক্ষ্য খুব একটা পায়নি বাংলাদেশ দল। সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহর কণ্ঠেও ফুটে উঠল সেই হতাশা। জানালেন, সামনে এগিয়ে চলার পথে আরও উন্নতি করেতে মুখিয়ে আছে দল।
ব্যর্থতার এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে গত বিশ্বকাপ থেকে। বিশ্বকাপে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার পর শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয়ে ফেরে বাংলাদেশ দল।
নতুন মৌসুমের শুরুতে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সিরিজের চ্যালেঞ্জ ছিল তুলনামূলক কঠিন। আফগানিস্তানের সঙ্গে একটি মাত্র টেস্ট, এরপর জিম্বাবুয়েকে নিয়ে এই ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ। হারানো আত্মবিশ্বাসের কিছুটা ফিরিয়ে আনার সুযোগ ছিল এই সিরিজে। কিন্তু নবীন টেস্ট দল আফগানিস্তানের কাছে বাজেভাবে টেস্টে হেরে যায় বাংলাদেশ।
এরপর টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের সঙ্গেও জয় এসেছে হারের দুয়ার থেকে ফিরে। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে আরেকটি পরাজয়। সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেট গিয়ে ঠেকেছিল যেন তলানিতে।
এরপর অবশ্য জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের সঙ্গে টানা দুটি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ। যদিও আফগানদের সঙ্গে সেই জয় খুব দাপুটে ছিল না। সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে সাকিবের দুর্দান্ত ইনিংস জিতিয়েছিল বাংলাদেশকে। বৃষ্টিতে ফাইনাল ভেসে যাওয়ায় শিরোপা ভাগাভাগি হয়েছে। তবে ফাইনালে ফেভারিট ছিল আফগানরাই।
ঘরের মাঠে বছরের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচের পর দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন মাহমুদউল্লাহ। পেছন ফিরে তাকিয়ে এই সিনিয়র ক্রিকেটার হতাশাই খুঁজে পেলেন বেশি।
“সব মিলিয়ে পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে, হতাশার জায়গাই বেশি ছিল। অনেক বেশি। কারণ আমি বিশ্বাস করি, আমরা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারিনি। টেস্ট ম্যাচটি অবশ্যই হতাশাজনক ছিল। আমাদের আরও ভালো কিছু করার সামর্থ্য ছিল।”
“টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার পর যখন নিজেদের মধ্যে কথা হলো, কোচও বললেন যে আমাদের শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। পরে টি-টোয়েন্টিতেও আফগানদের কাছে হারার পর আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলাম। তার পরও সবার ভেতরে স্পৃহা ছিল, যেটা পরে কাজে দিয়েছে। পরবর্তীতে যেন এই ব্যাপারগুলি আগে থেকেই কাজ করে, ভুল যাতে না করি, সেসব মাথায় রাখতে হবে।”
টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ভাগটা যেভাবে খেলেছে দল, তাতে অবশ্য কিছুটা স্বস্তির উপলক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। তবে এখনও উন্নতির অনেক জায়গা দেখছেন ৬টি টেস্ট ও ৫টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া অলরাউন্ডার।
“টি-টোয়েন্টি সিরিজে সব মিলিয়ে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে কিছু কিছু জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে। বেশকিছু জায়গায় আরও ভালো করা উচিত ছিল আমাদের। বেশ কয়েকটি ম্যাচে ১৩-১৪ ওভারের মধ্যে আমাদের ৫-৬ উইকেট চলে গিয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে যা আদর্শ নয়।”
“এসব নিয়ে কোচ কথা বলেছেন, সাকিব বলেছে, গ্রুপ হিসেবে আমরা বলেছি। দিনশেষে আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। অনুশীলনে নিজেকে আরও পরিণত করা। পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে পরিস্থিতি বুঝে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কখন কোন বোলারকে টার্গেট করতে হবে, দল কি চাচ্ছে, এই ব্যাপারগুলো অনেক বিবেচনা করতে হয়। এখানে আমাদের উন্নতি করতে হবে।”
বাংলাদেশের পরের সিরিজ ভারতের মাটিতে। দুটি টেস্টের পাশাপাশি সেখানে আছে তিনটি টি-টোয়েন্টি। বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত এখন সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দলগুলির একটি, দেশের মাটিতে পরাক্রমশালী। তাদের সঙ্গে ভালো করতে হলে উন্নতির বিকল্প দেখছেন না মাহমুদউল্লাহ।
“ভারতের বিপক্ষে আমাদের পরের সিরিজ। সেখানে আমাদের সর্বোচ্চটা খেলতে হবে। অন্যথায় ওদেরকে হারানো কঠিন হবে। এই সিরিজে আত্মবিশ্বাস কিছুটা ফিরে এসেছে। আশা করি পরের সিরিজে এটা ধরে রাখা যাবে।”
মাহমুদউল্লাহর নিজের পারফরম্যান্সেও ছিল দলের মতো উঠানামা। টেস্টে দুই ইনিংসেই আউট হয়েছিলেন ৭ রান করে। টি-টোয়েন্টি সিরিজের শুরু ৬ রান করে। পরের দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছেন ৪৪ ও ৬২। শেষ ম্যাচে আবার ৬।
নিজের পারফরম্যান্সেও উন্নতির অনেক জায়গা দেখছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। জানালেন, ব্যাটিং কোচের সঙ্গে কাজ করছেন উন্নতি করতে।
“আমাকে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। গত কয়েকদিন নিলের (ব্যাটিং কোচ ম্যাকেঞ্জি) সঙ্গে অনেক কাজ করেছি। ও খুব ভালো ব্যাটিং কোচ। অনেক সময় টেকনিক্যালি আমি হয়তো ধরতে পারছি না, সে পারছে। বা ছোটখাটো কিছু বলছে, যা অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দেয়। এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে।”
“ব্যাটিংয়ের কিছু টেকনিক নিয়ে কথা হচ্ছিল। অনেক সময় কোনো ব্যাটসম্যান রান খরায় থাকলে সেখান থেকে রান পেতে এত মরিয়া থাকে যে কোথায় ভুল হচ্ছে, সেদিকে মনোযোগ থাকে না। সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে ওর সঙ্গে। কিছু টিপস কাজেও দিয়েছে।”