জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ার বিগত কয়েকদিন ধরে চলমান সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা অব্যহত রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা জুড়ে বিরাজ করছে তমতমে পরিবেশ। প্রায় প্রত্যেকদিনেই ঘটছে কোন না কোন সংঘর্ষের ঘটনা। তবে এসব ঘটনায় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সুষ্ঠু পরিবেশে নিরাপদে ভোট দিতে পারবে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করছে প্রসাশন।
উপজেলার পোমরা ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীর কর্মীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর এক সমর্থক। আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। শুক্রবার (২৭ মে) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগ করা হয়েছে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে , শুক্রবার দুপুরে উপজেলার পোমরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কুতুব উদ্দীন চৌধুরী হারুনী উত্তর পোমরা মালির হাট নির্বাচনী অফিসে যাওয়ার সময় পথে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা । পরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থক স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. মুরাদ (২৭) ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে বিএনপির প্রার্থী আজিজুর রহমানের কর্মীরা গুলি করে বলে দাবি করেন প্রার্থী কুতুব উদ্দীন চৌধুরী। ঘটনার পর পুলিশ র্যাবও বিজিবির টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিরাপত্তা জোরদার করেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাত সাড়ে ১১টায় রাজানগর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার প্রার্থী আবু ছৈয়দ তালুকদারের উপর হামলা চালিয়েছে প্রতিপক্ষের প্রার্থীর কর্মীরা। এতে প্রার্থী সহ ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। এরা হলেন রফিকুল ইসলাম (৪৫), সালাউদ্দিন (৩৮), মো. খলিল (৩০), জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আনলে রফিক ও সালাউদ্দিনের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগ দাযের করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আহত মেম্বার প্রার্থী আবু ছৈয়দ জানান, ‘এলাকায় আমার জনসমর্থন দেখে ভয় পেয়ে এই হামলা চালিয়েছে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। আমাদের কর্মীদের পিঠিয়ে চলে যাওয়ার সময় নির্বাচনের দিন কাউকে কেন্দ্রে দেখলে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছে’। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করেছেন।
এর আগে লালানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চনের এক কর্মীর বাড়িতে গত বুধবার ২৫ মে গভীর রাতে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসময় কেউ হতাহত না হলেও এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। হামলার ঘটনায় রাঙ্গুনিয়া থানায় প্রার্থী বাদি হয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। প্রতিপক্ষের লোকজন এলাকায় ভীতি সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মো. মীর তৌহিদুল ইসলাম কাঞ্চন অভিযোগ করেন।
এছাড়াও বৃহষ্পতিবার (২৬ মে) দুপুরে উপজেলার দক্ষিন রাজা নগর ইউনিয়নের ফুলবাগিছা গ্রামের দেওয়ান বাজার এলাকায় বৃহষ্পতিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট অনীল বড়ুয়ার বাড়িতে অতর্কিতভাবে হামলা চালায় বিদ্রোহী প্রার্থীরা কর্মীরা। এসময় তারা ঘরের আসবাবপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র ভাংচুর করে। হামলার পর যাওয়ার সময় তারা অনীল বড়ুয়ার স্ত্রী ও মেয়েকে তার পিতা নৌকার এজেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় অনীল বড়ুয়া বড়ুয়া বাদী হয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগে ২৪ মে দিনগত রাতে উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুর কুতুবুল আলমের ২টি নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর কর্মীরা। এই ব্যাপারে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
একইদিন ভোররাতে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতের নাম মো. মহসিন (৩৬)। তার পিতার নাম রমজান আলী। তিনি একই ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের খতিবনগর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
উপজেলা জুড়ে এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জনমনে আতংক বিরাজ করছে। অনেকে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্কায় ভোট দিতেই যাবেন না বলে এই প্রতিবেদকের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে সকলকে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হুমায়ুন কবির জানায়, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। বিগত কয়েকদিনের সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাঠে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ভোটের দিন কেউ কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটানোর চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকবে প্রশাসন।