
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে, বিশেষ করে কুয়েতে, ভিসা ব্যবসা একটি বহুল প্রচলিত বাস্তবতা। এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রায়শই ‘দালাল’ নামে পরিচিত। যদিও ‘দালাল’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ (ব্রোকার) বা আরবিতে (সিমসার), যার অর্থ মধ্যস্থতাকারী, তবুও বাংলা ভাষায় এর একটি নেতিবাচক এবং অপমানজনক অর্থ প্রচলিত। এটি সাধারণত সেইসব ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যারা অবৈধ বা অনৈতিক কাজের মধ্যস্থতা করে।
সম্প্রতি, কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত এক গণশুনানিতে এই ‘দালাল’ শব্দটি ব্যবহারের ওপর এক প্রবাসী বক্তব্য রাখেন। সেখানে ওই প্রবাসী বাংলাদেশি অভিযোগ করেন যে, কুয়েতে কর্মরত কিছু বাংলাদেশি সাংবাদিকেরা সংবাদে ‘দালাল’ শব্দটি অত্যধিক ব্যবহার করেন।
তবে এই অভিযোগের তীব্র বিরোধিতা করেন প্রবাসী সাংবাদিক এবং জনপ্রিয় সোশ্যাল এক্টিভিস্ট ও সমাজকর্মী মহসিন পারভেজ। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “দালালকে দালালই তো বলতে হবে, তার পরিচয় তো তাই।” তিনি আরও জানান যে, যখন কুয়েতের স্থানীয় গণমাধ্যম কোনো ব্যক্তিকে তার কাজের জন্য ‘ভিসা দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জন্যও সেই পরিচয় ব্যবহার করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।
কুয়েতে ভিসা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত দালালরা প্রায়শই নিজেদের এই পরিচয়কে এক ধরনের অভিশাপ বলে মনে করেন। তাদের কাছে, এই শব্দটি তাদের পেশার সম্মানহানি করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভিসা কেনাবেচার এই চক্রে জড়িত থাকার কারণে সমাজের চোখে তাদের ভাবমূর্তি বরাবরই নেতিবাচক।
অনেক প্রবাসী মনে করেন, যারা ‘দালাল’ শব্দটি ব্যবহার না করার পক্ষে কথা বলেন, তারা প্রকৃতপক্ষে ভিসা দালালদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন। তাদের মতে, কোনো ব্যক্তি যদি ভিসা দালালের বিরুদ্ধে লেখালেখি বা সংবাদ প্রকাশে ক্ষুব্ধ হন, তবে তা স্পষ্টতই প্রমাণ করে যে তিনি ওইসব দালালদের কাছ থেকে কোনো না কোনো সুবিধা গ্রহণ করেন। এই ধরনের ব্যক্তিদের বক্তব্য দালালদের অবৈধ ব্যবসার পক্ষে একটি পরোক্ষ সমর্থন ছাড়া আর কিছুই নয়।
ভিসা দালালদের দৌরাত্ম্যের কারণে অনেক নিরীহ এবং সরলমনা বাংলাদেশি প্রবাসী প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়, কিন্তু বাস্তবে তারা বৈধ কর্মসংস্থান বা প্রত্যাশিত বেতন পান না। এই কারণে, বহু প্রবাসী কর্মীর জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে।
সামাজিক এবং অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে, ভিসা দালালদের কার্যকলাপ একটি গুরুতর সমস্যা। এই চক্র ভাঙতে এবং প্রতারিত প্রবাসীদের রক্ষা করতে প্রয়োজন কঠোর ব্যবস্থা। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং দালালদের মুখোশ উন্মোচন করতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা এসব অবৈধ কাজের মধ্যস্থতা করে, তাদের সঠিক পরিচয়ে প্রকাশ করা শুধু সাংবাদিকতার নৈতিক দায়িত্বই নয়, বরং সমাজকে সঠিক তথ্য জানানোরও একটি অপরিহার্য অংশ। তাই, ‘দালাল’ শব্দটির ব্যবহার কোনো গালি নয়, বরং একটি বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন।