Menu |||

বিরামহীনভাবে সোশ্যাল মাধ্যম গুলো পা বাড়াচ্ছে কোন পথে?

অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ  ফেসবুক পোস্ট! টুইট! ইনস্টাগ্র্যাম! সোশ্যাল মিডিয়ার এইসব শব্দ অনলাইনে মূলধারার মিডিয়াতেও খুব শোনা যায়। ব্যবহারও চলে। ফেসবুকে কোন ভিডিও কিংবা ছবি ভাইরাল হয়ে ছড়ালো, কত কমেন্ট পড়লো, কত লাইক, কত শেয়ার হলো সে নিয়েও রিপোর্ট হয়। কেউ কেউ আবার ফেসবুকে লিখতেই পছন্দ করেন। তাদের ফেসবুক ভক্তকুল তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি হিসেবে নাম ছড়ায়। যারা আগে থেকেই সেলিব্রেটি রাজনীতিতে কিংবা শো-বিজে! তারাও পোস্ট দেন। তথ্য দেন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া তাদের সেই পোস্টকে পুঁজি করে খবর বানায়। সেই খবর আবার ফেসবুকেই পোস্ট হয়। সেই খবরেও লাইক পড়ে, শেয়ার হয়। সেলিব্রেটি ছাড়াও সাধারণ কেউও ভিন্নরকম কিছু ‘সামথিং অড, সামথিং ক্রেজি, সামথিং অসাম’ বিষয়েও পোস্ট দিতে পারেন। সেটাও ফেসবুকে টুইটারে ভাইরাল হয়ে ছড়ায়। তা থেকেও নিউজ হয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যম এখন এই মূলধারার মাধ্যমের কনটেন্ট আর ইস্যু যোগানিয়া এক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে- এসব কনটেন্টের ওপর ভর করে মূলধারা কী তার চরিত্র হারাচ্ছে?

সাম্প্রতিক সময়ের একটি ফেসবুক পোস্টের কথা বলা যেতে পারে। এটা আফ্রিকার কোনও একটি দেশের। একটি ছোট্ট শিশু চার হাত পা মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়ে স্রেফ কুকুর ছানার মতো মুখ দিয়ে একটি বাটিতে রাখা কিছু একটা খাবার খাচ্ছে। তারই ছবি তুলে শিশুটির মা তুলে দেন ফেসবুকে। ভয়াবহ এক শিশু নিপীঁড়ণ। যা ভাইরাল হয়ে ছড়ালো। আর সে ছবি ও নিপীঁড়ণের বিষয়টি খবর হয়ে ছড়ালো সংবাদমাধ্যমগুলোতে। কেবল অনলাইনগুলোই নয় অফ লাইনের সংবাদমাধ্যমগুলোও বাদ গেলো না।

আরেকটি ঘটনা ফিলিপাইনের। সেখানে ম্যানিলা থেকে এক থাই নাগরিককে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কারণ তার ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট ছিলো যা ফিলিপিনোদের জন্য অবমাননাকর। আর যায় কোথায়! ফেসবুকের সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে ছড়ালো। অনলাইন থেকে শুরু করে সনাতনি (প্রিন্ট) সংবাদমাধ্যমগুলোও একে তার ইস্যু হিসেবে নিয়ে নিলো। দেশটির প্রধান প্রধান সেলিব্রেটি, তারকার টুইটার, ইনস্টাগ্র্যাম ভরে ফেললেন তাদের ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য দিয়ে। আর তাদের সেই বক্তব্যও আবার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার খবরে স্থান পেলো।

দূর দেশের কেনো। নিজেদের উদাহরণ এমন রয়েছে ভুরি ভুরি। বাংলাদেশে ফেসবুকটাই বেশি পরিচিত। আর এতেই বেশি বেশি পোস্ট হয়। আর সেই পোস্ট থেকে খবর হয়। সেই খবর মূলধারার অনলাইন থেকে শুরু করে অফলাইনে টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ফেসবুক সেলিব্রেটির কথা আগেই বলেছি। এর বাইরেও অনেকে রয়েছেন যারা ফেসবুকেই লেখেন এবং তা থেকেই মূলধারার মিডিয়ায় খবর হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে। এখন তারা নিয়মিত ফেসবুকেরই লেখক। আর কনটেন্ট কাঙ্গাল মূলধারার সংবাদমাধ্যম তা থেকেই খবর বানায়। প্রচার বাড়ায়। এই ফেবু লেখকরা আর মূলধারার জন্য লেখা তৈরির কথা ভাবেনও না। একটি দুটি প্রধানসারির সংবাদপত্র এখন তাদের সনাতনি প্রকাশনায়ও টেনে নিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার এই কনটেন্ট ‘সোশ্যাল মিডিয়া থেকে’ এমন কলাম চালু করে।

তাহলে বিতর্কতো এসেই গেলো- কে এগিয়ে? মূলধারা নাকি সামাজিক মাধ্যম!
টেলিভিশন, রেডিও আর প্রিন্ট মিডিয়াই এতদিন ছিলো গণমানুষের কাছে যাওয়ার মাধ্যম। এতেই উঠে আসতো কোনও ব্যক্তির ভাষ্য, গোষ্ঠীর ভাষ্য, কিংবা কর্পোরেশনেরও ভাষ্য। হোক সে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক। কিন্তু সনাতনি এসব মিডিয়া যে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে আর নিউ মিডিয়া হিসেবে সামনে আসছে অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম তা এখন বিতর্কেরও অতীত। এবং চূড়ান্তই এক বাস্তবতা। নতুন এই ধারায় যোগ হয়েছে সামাজিক মাধ্যমও। যোগ হয়েছে বলা ভুল হবে, বলতে হবে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে রয়েছে এই মাধ্যম। যা এখন প্রধানতম হওয়ার দৌড়ে। আর তাতে মূলধারার অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম যে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়ছে, কিংবা অন্তত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা উপরের উদাহরণগুলো থেকে পরিষ্কার।

এতে করে পাল্টে যাচ্ছে সাংবাদিকতা চর্চার ধরণ। সামাজিক মাধ্যম ও নেটওয়ার্কগুলোর দৌরাত্মে এক ধরনের নতুন ধারার সাংবাদিকতার চর্চা মূলধারার সংবাদমাধ্যগুলোও করতে বাধ্য হচ্ছে। আর তাতে প্রশ্ন উঠে গেছে, প্রাথমিক নিউজ এজেন্ডা আজ কে প্রথম সেট করছে, সামাজিক মাধ্যম, নাকি মূলধারার সংবাদমাধ্যম?

প্রশ্ন যখন উঠেছে। তা নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। উত্তরও মিলছে। আইসেনসিয়া নামের একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইন্টলিজেন্স গ্রুপ গোটা বিশ্বেই খবরের উৎস আর ম্যাস মিডিয়া ও স্যোশাল মিডিয়ার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। ওরা গোটা তিনেক বড় দাগের ফাইন্ডিংস দিয়েছে-

এক. ওদের মতে, এই যে ২৪ ঘণ্টার সংবাদমাধ্যম বা সংবাদচক্র তা স্রেফ এক মোহ। সংবাদের কোনও ‘চক্র’ নেই। আজকাল আমরা আসলে খবরের আবহেই বাস করি। খবর আর তথ্য কখনো এঁকেবেঁকে একে অন্যকে এড়িয়ে যায়, কখনো পরষ্পরকে ছেদ করে, কখনো মুখোমুখি ধাক্কা খায়, কখনো ঘর্ষণ লাগে আবার কখনো মিলিত হয়।

দুই: কনটেন্ট যারা তৈরি করেন তারা সব প্ল্যাটফর্মেই কাজ করতে পারেন। ফলে কনটেন্ট আসলে সনাতনী আর নতুন মিডিয়ার জন্য ভিন্ন কিছু নয়। তবে পেশাদার সংবাদকর্মীর তৈরি কনটেন্ট আর সাধারণ নাগরিকের তৈরি কনটেন্ট পুরোপুরিই আলাদা। নাগরিকের কনটেন্ট অবশ্যই সংবাদ আইটেম হবে না। সেলিব্রেটির পোস্টও সংবাদ আইটেম হবে না। তা হতে পারে কেবলই সংবাদের উৎস।

তিন. প্রসারের সাথে সাথে ‘নিউজ পেগ’ (News Peg) হিসেবে হলেও এমন সংবাদ অনেকই পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ফলে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের নির্ভরতা বাড়ছেই।

পুরো বিষয়টির একটা বাণিজ্যিক দিকও রয়েছে। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখানো হয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা কর্পোরেশনগুলোর মাঝে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ওই জরিপ বলছে বিশ্বের ৮৩ শতাংশ কোম্পানিই এখন সামাজিক মাধ্যমে সংযুক্ত। তারা ব্যাপকভাবে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং করছে, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহার করছে, ওয়েবসাইট খুলছে, ভিডিও শেয়ারিং করছে। এদের ফেসবুক পেজ রয়েছে, টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট, কর্পোরেট ব্লগও রয়েছে। একটি শ্বেতপত্রে আইবিএম নিজেকে একটি ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বলেই ঘোষণা দিয়েছে।

ওই যে নির্ভরতার কথা বলেছি, তার কিছু কারণও রয়েছে। ২০০৯ সালে ইউএস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট হাডসন নদীতে ক্র্যাশ-ল্যান্ডিংয়ে বাধ্য হয়। আর প্রাথমিক খবরটি ছড়ায় নদীতে একটি ফেরি থেকে এক নারী যাত্রীর মোবাইল ফোনে তোলা ছবি থেকে। টুইটপিকেই প্রথম ছবিটি তোলেন তিনি। সেই ছবিই পরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে একমাত্র ভরসার হয়ে ওঠে।

২০০৯ সালে পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর খবরটি প্রথম প্রকাশ পায় সামাজিক নিউজ ওয়েবসাইট টিএমজেড-এ। আর সেখান থেকে টুইটার, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের কাছে পৌঁছায়। সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক পেছনে পড়ে থাকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো। ২০১২ সালে সঙ্গীত শিল্পী হুইটনি হিউস্টনের মৃত্যুর খবর টুইটারে প্রকাশিত হওয়ার অন্তত ২৭ মিনিট পর কোনও একটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।

আর ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর খবর হয়তো অজানাই থেকে যেতো, নয়তো যুক্তরাষ্ট্র তার সুবিধামতো সময়েই প্রকাশ করতো যদি না অ্যাবোটাবাদে লাদেনের গোপন আস্তানার এক প্রতিবেশি মধ্যরাতের ওই অভিযানে সৃষ্ট শোরগোলের কথা টুইট না করতেন।

দূর দেশ আর দূরের উদাহরণে কেন যাচ্ছি, সদ্য তাজা ঘটনা তনু হত্যার কথা অকপটেই স্বীকার করে নিতে হবে, সামাজিক মাধ্যমেই এই ঘটনা প্রথম আসে। মূল ধারার মিডিয়াতে তা গুরুত্ব পায় অনেক পরে। একথা বললেও বেশি বলা হবে না, অনেকটা সামাজিক মাধ্যমের চাপেই মূলধারার মাধ্যমগুলো এই খবরের দিকে ঝোঁকে।

তিউনেশিয়া, মিশর, ইরান ও সিরিয়া জুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ সাফল্যের পেছনে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা দুনিয়াজুড়ে স্বীকৃত। আর বাংলাদেশে ‘গণজাগরণ’ নামে যে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ আন্দোলন হয়ে গেছে তারও প্রাথমিক ডাক দেওয়া হয়েছিলো সামাজিক মাধ্যমে।

তাহলে সেই এজেন্ডা সেটিংয়ের কথাই আসে। একটা সময় সনাতনি মিডিয়াকেই সমাজের মূল এজেন্ডা সেটার বা ট্রেন্ড সেটার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মিডিয়া যা তুলে আনতো তা দিয়েই সমাজ পাল্টাতো কিংবা পট পরিবর্তন হতো। সেটা খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০১২ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার (PEW) নামের একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থা ‘স্টেট অব নিউজ মিডিয়া’ শিরোনামের রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখানো হয়, টেলিভিশনই খবর পরিবেশনায় রাজত্ব করে চলেছে। তখনও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই ভার্চুয়াল জগতে খবরের সন্ধান কম করতেন। আর যদি করতেনও, তা ‘কি ওয়ার্ড’ সার্চ করে কিংবা ‘নিউজ এগ্রেগেশন’ সাইটগুলোতে ঢুঁ মেরে। নিউজ সাইটে সরাসরি ব্রাউজিং তাদের অভ্যাস হয়ে ওঠেনি তখনও। আর ফেসবুক টুইটারও তাদের জন্য খবর পাওয়ার জায়গা ছিলো না। কিন্তু এর মাত্র এক বছর পর ২০১৩ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার গবেষণা করে দেখলো পাল্টে গেছে অনেক কিছু। দেখা গেলো সনাতনি সংবাদমাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের অনীহা। খবর পড়তে, দেখতে কিংবা শুনতে তাদের সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা রেডিও প্রতি ঝোঁক নেই। অনলাইনেই তারা খবর জানছেন। ব্রেকিং নিউজ হিসেবে যখনকার ঘটনা তখনই তাদের হাতে ধরা দিচ্ছে। ফলে ওই সব সনাতনি মিডিয়াতে নেমে আসলো খরা। সঙ্গে খাড়াও নামলো। শুরু হলো ব্যাপক ছাঁটাই। ফলে যা হবার তাই হলো। এই সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সংবাদের সংখ্যা ও মান উভয় বিবেচনাতেই পিছিয়ে পড়তে লাগলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, তারা জরিপে দেখেছেন প্রতি তিন জন আমেরিকানের মধ্যে একজনই তাদের প্রয়োজনের খবরগুলো এসব মিডিয়াতে পাচ্ছেন না বলেই বর্জন করেছেন।

সুযোগটা নিতে পারতো মূল ধারার অনলাইন মিডিয়া। কিন্তু পারেনি। ব্রেকিং নিউজ, বেশি বেশি নিউজ আইটেম, বিষয় বৈচিত্র দিয়ে সে সুযোগকে প্রসারিত ও আর দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে না করতেই সামাজিক মাধ্যম থেকে একটা চাপ আসতে শুরু করে। খবরের বিবেচনায় সামাজিক মাধ্যমের ভিতটি কিন্তু মৌলিকত্বহীন আর পরজীবী। এর নিজের কিছু নেই। মুল ধারার সংবাদমাধ্যম থেকে তুলে এনে নিজের নেটওয়ার্কে ছড়ানোই প্রধান কাজ। এখনো যে সে চরিত্রের বাইরে তা নয়। কারণ সারাদিন যত খবর প্রকাশিত ও প্রচার হয় তার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাগই সামাজিক মাধ্যম প্রথম সামনে এনেছে কিংবা আনে। মূল কাজটি মূল ধারার সংবাদমাধ্যই করে। তবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায় যে কোনও মূলধারার সংবাদমাধ্যমের চেয়ে এখন এগিয়ে এসব সামাজিক মাধ্যম। বাংলাদেশেও অবধারিতভাবেই তাই। আর বিবেচনার ও উদ্বেগের বিষয়টিও সেখানেই। আরও একটি উদ্বেগ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়ায় এর সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না।

এখানে বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে ইস্যু গ্রহণ। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক সংবাদমাধ্যম যে কোনও ইস্যুকে একটু দ্রুতই তুলে নিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তার দায়বদ্ধতা কম। মূলধারার দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাকে বুঝে শুনে এগুতে হয়। রয়টার্স ইন্সটিটউটের একটি তথ্য রয়েছে। এটিও গবেষণা লব্দ। ওরা বলছে, মূল ধারার সংবাদ মাধ্যম ইস্যু গ্রহণে সামাজিক মাধ্যমের চেয়ে পিছিয়ে। আবার ওদের চেয়ে আগেভাগেই সে ইস্যু ছেড়েও দেয়। হুমকিটাও সেখানেই।

আগেই বলেছি, এই সেদিনও যেখানে টেলিভিশন ট্রেন্ড সেটার ছিলো, এখন আর তা নেই। এখন অনলাইন মিডিয়া ট্রেন্ড সেট করে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম বাংলাদেশের প্রধান অনলাইন সংবাদমাধ্যম। অনলাইনে যাদের বিচরণ তারা এই সংবাদমাধ্যমটিকে ব্রেকিং নিউজে সবচেয়ে এগিয়ে রাখেন। তারা জানেন বাংলানিউজই তাদের আগে খবর দেবে। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও ঘটে। দিনে সংঘঠিত যে কোনও ইভেন্ট বা ঘটনায় বাংলানিউজসহ অন্যান্য প্রধান অনলাইনগুলো খবরের অ্যাঙ্গেল সেটিংয়েও কাজ করে। মূলধারার অনলাইন যেভাবে যেই অ্যাঙ্গেলে খবর পরিবেশন করে, সনাতনি সংবাদমাধ্যমগুলো, টেলিভিশনগুলো সেই অ্যাঙ্গলকে অনুসরণ করেই রিপোর্ট দিতে থাকে। এর দুটি কারণ:

এক: তৈরি খবরটি সংবাদমাধ্যমগুলো পেয়ে যায় ফলে তারা নতুন কোনও কিছু খোঁজার চেষ্টাটাই করে না। এমনকি টেলিভিশনের পুরো স্ক্রিপ্ট অনলাইনে প্রকাশিত খবরের আদলে থাকে।

দুই: অনলাইনে খবরগুলো যেহেতু লেখা হয়ে যায়, সংবাদপত্রের রিপোর্টাররা সেটাই কপি করে নেন। তারা নতুন করে লেখার কষ্টটুকু করতে চান না।

এতো গেলো সনাতনি মিডিয়ার কথা। অনলাইনেই যে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম রয়েছে তারাও মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে কপি পেস্ট পদ্ধতিতে প্রকাশ করে। একটি খবর প্রকাশিত হওয়ার পরমূহূর্তেই তা শত শত অনলাইনে হুবহু দেখা যায়।

এরও দুটি দিক রয়েছে। প্রধানত এতে সাংবাদিকতা পেশাদারীত্ব হারাচ্ছে। কপিরাইট বিষয়টি পুরোপুরি ভুলণ্ঠিত হচ্ছে এসব তথাকথিত অনলাইন সংবাদমাধ্যমের হাতে।

আর অন্য দিকটি হচ্ছে ওই সংবাদটিতে যে বিষয় ও অ্যাঙ্গেল তুলে ধরা হয়েছে তাই শত শত কপি হয়ে নতুন নতুন সাইটে স্থান পেয়ে তা বহুগুণে ছড়াচ্ছে। ফলে দিনের খবরের অ্যাঙ্গেল সেটিং হয়ে যায় মূল ধারার অনলাইন সংবাদ মাধ্যাম থেকেই।

এত কিছুর পরেও এজেন্ডা সেটিংয়ে সামাজিক মাধ্যমের নাম সামনে আসে। কেন?

বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সামাজিক মাধ্যম তাদের নিজেদের এজেন্ডা সেট করে, আর তাই পরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের এজেন্ডা হয়ে ওঠে। কারণ একটাই ক্রমবর্ধমান হারে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলোকে খবরের উৎস হিসেবে নেওয়া ও তা থেকে খবর তৈরি করা। কেউ কেউতো স্যোশাল মিডিয়াকে অনেক খবরের ‘সুতিকাগার’ বলতেও ছাড়ছেন না। পক্ষান্তরে বরং সামাজিক মিডিয়াকে দেখা যায়, তারা আর মূলধারার মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে না। বিশেষ করে স্থানীয় কোনও বিষয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের কনটেন্ট তৈরি করছে এবং তা পোস্ট দিচ্ছে। ব্লগারদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। তারা যেনো সংবাদমাধ্যমকেই বরং কম বিশ্বাস করছে। বাংলাদেশেও আমরা এমন ব্লগার দুই-চারজন দেখতে পাচ্ছি যারা নিজেরাই কোনও বিশেষ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খু জেনে তবে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন কিংবা নিজের ব্লগে লিখছেন। নিউজ পেগ হিসেবে সেগুলোই লুফে নিচ্ছে অনলাইন-অফলাইনের সংবাদমাধ্যমগুলো। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগুলো নিয়েও গবেষণা হয়েছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের কথা আগেই বলেছি। ওদের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে কখনো কখনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হচ্ছে তার থেকে ভিন্ন কথা ভিন্ন আঙ্গিক উঠে আসছে স্যোশাল মিডিয়ায়।

এতে করে সামাজিক মাধ্যম যে জনবান্ধব আর উপকারী বন্ধু হয়ে উঠছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফেসবুকতো তার ব্যবহারকারীদের যেমন বন্ধু সম্বোধন করছে তেমনি একজনের সঙ্গে অন্যজনের বন্ধুত্ব পাতিয়েও দিচ্ছে। এরও একটা মনস্তাত্বিক প্রভাব রয়েছে। ফেসবুকে যোগাযোগে প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়াচ্ছে। তবে সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য হচ্ছে এই বন্ধুত্ব তাদের মধ্যে তথ্য দেওয়া নেওয়া, কোনও তথ্য বা খবরে তাদের মধ্যে ভাব বিনিময় আর তথ্য অনুধাবনেও তাদের মধ্যে সমমনা মনোভাব খুব সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তারা একই খবরে অনেকটা একইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। আর ফেসবুক টুইটার, ইনস্টাগ্র্যাম হয়ে উঠছে তাদের প্রাণের সখা। সেখানেই দিনের শুরু সেখানেই রাতের শেষ। ফলে খবর খুঁজতে আর তারা খবরের ওয়েব সাইটে যাচ্ছে না। সেখানেই পড়ে নিচ্ছে যা কিছু জানতে চায় তা।

একবার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিলো সে বাংলানিউজ পড়ে। কৌতুহল হলে জানতে চাইলাম- তাই বুঝি? কখন পড়ো? কিভাবে পড়ো? শিক্ষার্থীটি বললো- ‘কেনো স্যার ফেসবুকে পড়ি!’

ফেসবুকে তো পাওয়াই যায়। কারণ বাংলানিউজ নিজেই ফেসবুক টুইটারে নিজের পাতা খুলে তাতে পোস্ট দিচ্ছে তাতে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। যারা নিয়মিতই পাচ্ছে এই সব খবরের পোস্ট। সুতরাং সেখানেই বাংলানিউজের খবর পাঠ বিষ্ময়ের কিছু নয়।

ব্যবহারকারীর মনোভাব যখন এভাবে তৈরি তখন সামাজিক মাধ্যমগুলো নিচ্ছে নিজেদেরই নিউজফিড দেওয়ার উদ্যোগ। এই দৌড়ে আবার ফেসবুক সবচেয়ে এগিয়ে। এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা নিজেরাই তৈরি করবে নিউজ ফিড। এটাই উদ্বেগের।

সামাজিক মাধ্যমকে খবরের উৎস হিসেবে বেশি বেশি মেনে নেওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি ভরসার স্থল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যুবশ্রেণির মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তবে মূলধারার সংবাদমাধ্যম এখান থেকে উপকারও পাচ্ছে। কারণ তাদের প্রকাশিত নিউজ, ছবি, ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে অনেক লাইক, শেয়ার আর তাতে পাঠকও বাড়ছে।

কিন্তু এই অগ্রগতি আত্মঘাতি! পরনির্ভরতার মতোই ক্ষতিকর! বরং অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমেক মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখতে হবে। তৈরি করতে হবে নিজের পাঠক। যারা নিজেদের ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) ধরে ব্রাউজ করে তবেই সাইটে ঢুকবে। পাঠ করবে। তারাই তাদের ফেসবুকে, টুইটারে তার শেয়ার দেবে, লাইক দেবে, মন্তব্য করবে। সেখান থেকে ভাইরাল হবে মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমেরই কোনও খবর। কে খবরটি ব্রেক করছে সে প্রতিযোগিতা মূলধারারই আরেকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে- ফেসবুক বা টুইটারের সঙ্গে নয়। আর মত প্রকাশের কথা যদি আসে, সে সুযোগও মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যমে পুরোপুরি রয়েছে। সেখানেও রয়েছে মন্তব্য দেওয়ার প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ। তবে তা নিশ্চয়ই একটি দায়িত্বশীল মডারেশনের মাধ্যমে। কারণ সবশেষে কিংবা সবার আগেই যে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা। যা মূলধারার সংবাদমাধ্যমেরই রয়েছে।
আর তারও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে প্রভাব। সমাজকে প্রভাবিত করার বিচারে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের তুলনা করার সময়টি এখনো আসেনি। খবরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমই রাজত্ব করবে এটাই সারকথা।

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» কুয়েতে মুরাদুল হক চৌধুরীকে সম্মাননা

» তাপপ্রবাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭ দিন বন্ধ ঘোষণা

» মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্ট সেবা উদ্বোধন

» কুয়েতে সংবর্ধিত হলেন মুরাদুল হক চৌধুরী

» সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঝড়বৃষ্টিতে মৃত বেড়ে ৪

» তাপদাহ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অ্যাসেম্বলি বন্ধের নির্দেশ

» কুয়েতে প্রবাসী নারীদের সংগঠন উদযাপন করেছে পহেলা বৈশাখ

» কুয়েত বাংলাদেশ কমিউনিটির ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত

» কুয়েতে বাংলাদেশ ভবনে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে প্রবাসীদের শুভেচ্ছা বিনিময়

» মালয়েশিয়ার মিনি ঢাকায় ‘রেস্টুরেন্ট মনির ভাই’ উদ্বোধন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

বিরামহীনভাবে সোশ্যাল মাধ্যম গুলো পা বাড়াচ্ছে কোন পথে?

অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ  ফেসবুক পোস্ট! টুইট! ইনস্টাগ্র্যাম! সোশ্যাল মিডিয়ার এইসব শব্দ অনলাইনে মূলধারার মিডিয়াতেও খুব শোনা যায়। ব্যবহারও চলে। ফেসবুকে কোন ভিডিও কিংবা ছবি ভাইরাল হয়ে ছড়ালো, কত কমেন্ট পড়লো, কত লাইক, কত শেয়ার হলো সে নিয়েও রিপোর্ট হয়। কেউ কেউ আবার ফেসবুকে লিখতেই পছন্দ করেন। তাদের ফেসবুক ভক্তকুল তৈরি হয়। সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি হিসেবে নাম ছড়ায়। যারা আগে থেকেই সেলিব্রেটি রাজনীতিতে কিংবা শো-বিজে! তারাও পোস্ট দেন। তথ্য দেন। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া তাদের সেই পোস্টকে পুঁজি করে খবর বানায়। সেই খবর আবার ফেসবুকেই পোস্ট হয়। সেই খবরেও লাইক পড়ে, শেয়ার হয়। সেলিব্রেটি ছাড়াও সাধারণ কেউও ভিন্নরকম কিছু ‘সামথিং অড, সামথিং ক্রেজি, সামথিং অসাম’ বিষয়েও পোস্ট দিতে পারেন। সেটাও ফেসবুকে টুইটারে ভাইরাল হয়ে ছড়ায়। তা থেকেও নিউজ হয় মূলধারার সংবাদমাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যম এখন এই মূলধারার মাধ্যমের কনটেন্ট আর ইস্যু যোগানিয়া এক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে- এসব কনটেন্টের ওপর ভর করে মূলধারা কী তার চরিত্র হারাচ্ছে?

সাম্প্রতিক সময়ের একটি ফেসবুক পোস্টের কথা বলা যেতে পারে। এটা আফ্রিকার কোনও একটি দেশের। একটি ছোট্ট শিশু চার হাত পা মেঝেতে ছড়িয়ে দিয়ে স্রেফ কুকুর ছানার মতো মুখ দিয়ে একটি বাটিতে রাখা কিছু একটা খাবার খাচ্ছে। তারই ছবি তুলে শিশুটির মা তুলে দেন ফেসবুকে। ভয়াবহ এক শিশু নিপীঁড়ণ। যা ভাইরাল হয়ে ছড়ালো। আর সে ছবি ও নিপীঁড়ণের বিষয়টি খবর হয়ে ছড়ালো সংবাদমাধ্যমগুলোতে। কেবল অনলাইনগুলোই নয় অফ লাইনের সংবাদমাধ্যমগুলোও বাদ গেলো না।

আরেকটি ঘটনা ফিলিপাইনের। সেখানে ম্যানিলা থেকে এক থাই নাগরিককে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কারণ তার ফেসবুকে এমন কিছু পোস্ট ছিলো যা ফিলিপিনোদের জন্য অবমাননাকর। আর যায় কোথায়! ফেসবুকের সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে ছড়ালো। অনলাইন থেকে শুরু করে সনাতনি (প্রিন্ট) সংবাদমাধ্যমগুলোও একে তার ইস্যু হিসেবে নিয়ে নিলো। দেশটির প্রধান প্রধান সেলিব্রেটি, তারকার টুইটার, ইনস্টাগ্র্যাম ভরে ফেললেন তাদের ঘৃণা ছড়ানো বক্তব্য দিয়ে। আর তাদের সেই বক্তব্যও আবার মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার খবরে স্থান পেলো।

দূর দেশের কেনো। নিজেদের উদাহরণ এমন রয়েছে ভুরি ভুরি। বাংলাদেশে ফেসবুকটাই বেশি পরিচিত। আর এতেই বেশি বেশি পোস্ট হয়। আর সেই পোস্ট থেকে খবর হয়। সেই খবর মূলধারার অনলাইন থেকে শুরু করে অফলাইনে টেলিভিশন, রেডিও, সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। ফেসবুক সেলিব্রেটির কথা আগেই বলেছি। এর বাইরেও অনেকে রয়েছেন যারা ফেসবুকেই লেখেন এবং তা থেকেই মূলধারার মিডিয়ায় খবর হয়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে। এখন তারা নিয়মিত ফেসবুকেরই লেখক। আর কনটেন্ট কাঙ্গাল মূলধারার সংবাদমাধ্যম তা থেকেই খবর বানায়। প্রচার বাড়ায়। এই ফেবু লেখকরা আর মূলধারার জন্য লেখা তৈরির কথা ভাবেনও না। একটি দুটি প্রধানসারির সংবাদপত্র এখন তাদের সনাতনি প্রকাশনায়ও টেনে নিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার এই কনটেন্ট ‘সোশ্যাল মিডিয়া থেকে’ এমন কলাম চালু করে।

তাহলে বিতর্কতো এসেই গেলো- কে এগিয়ে? মূলধারা নাকি সামাজিক মাধ্যম!
টেলিভিশন, রেডিও আর প্রিন্ট মিডিয়াই এতদিন ছিলো গণমানুষের কাছে যাওয়ার মাধ্যম। এতেই উঠে আসতো কোনও ব্যক্তির ভাষ্য, গোষ্ঠীর ভাষ্য, কিংবা কর্পোরেশনেরও ভাষ্য। হোক সে ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক। কিন্তু সনাতনি এসব মিডিয়া যে দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে আর নিউ মিডিয়া হিসেবে সামনে আসছে অনলাইনভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম তা এখন বিতর্কেরও অতীত। এবং চূড়ান্তই এক বাস্তবতা। নতুন এই ধারায় যোগ হয়েছে সামাজিক মাধ্যমও। যোগ হয়েছে বলা ভুল হবে, বলতে হবে অন্যতম অনুসঙ্গ হয়ে রয়েছে এই মাধ্যম। যা এখন প্রধানতম হওয়ার দৌড়ে। আর তাতে মূলধারার অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম যে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়ছে, কিংবা অন্তত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা উপরের উদাহরণগুলো থেকে পরিষ্কার।

এতে করে পাল্টে যাচ্ছে সাংবাদিকতা চর্চার ধরণ। সামাজিক মাধ্যম ও নেটওয়ার্কগুলোর দৌরাত্মে এক ধরনের নতুন ধারার সাংবাদিকতার চর্চা মূলধারার সংবাদমাধ্যগুলোও করতে বাধ্য হচ্ছে। আর তাতে প্রশ্ন উঠে গেছে, প্রাথমিক নিউজ এজেন্ডা আজ কে প্রথম সেট করছে, সামাজিক মাধ্যম, নাকি মূলধারার সংবাদমাধ্যম?

প্রশ্ন যখন উঠেছে। তা নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। উত্তরও মিলছে। আইসেনসিয়া নামের একটি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ইন্টলিজেন্স গ্রুপ গোটা বিশ্বেই খবরের উৎস আর ম্যাস মিডিয়া ও স্যোশাল মিডিয়ার মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। ওরা গোটা তিনেক বড় দাগের ফাইন্ডিংস দিয়েছে-

এক. ওদের মতে, এই যে ২৪ ঘণ্টার সংবাদমাধ্যম বা সংবাদচক্র তা স্রেফ এক মোহ। সংবাদের কোনও ‘চক্র’ নেই। আজকাল আমরা আসলে খবরের আবহেই বাস করি। খবর আর তথ্য কখনো এঁকেবেঁকে একে অন্যকে এড়িয়ে যায়, কখনো পরষ্পরকে ছেদ করে, কখনো মুখোমুখি ধাক্কা খায়, কখনো ঘর্ষণ লাগে আবার কখনো মিলিত হয়।

দুই: কনটেন্ট যারা তৈরি করেন তারা সব প্ল্যাটফর্মেই কাজ করতে পারেন। ফলে কনটেন্ট আসলে সনাতনী আর নতুন মিডিয়ার জন্য ভিন্ন কিছু নয়। তবে পেশাদার সংবাদকর্মীর তৈরি কনটেন্ট আর সাধারণ নাগরিকের তৈরি কনটেন্ট পুরোপুরিই আলাদা। নাগরিকের কনটেন্ট অবশ্যই সংবাদ আইটেম হবে না। সেলিব্রেটির পোস্টও সংবাদ আইটেম হবে না। তা হতে পারে কেবলই সংবাদের উৎস।

তিন. প্রসারের সাথে সাথে ‘নিউজ পেগ’ (News Peg) হিসেবে হলেও এমন সংবাদ অনেকই পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। ফলে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমের নির্ভরতা বাড়ছেই।

পুরো বিষয়টির একটা বাণিজ্যিক দিকও রয়েছে। সাম্প্রতিক এক আন্তর্জাতিক জরিপে দেখানো হয়েছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তথা কর্পোরেশনগুলোর মাঝে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে। ওই জরিপ বলছে বিশ্বের ৮৩ শতাংশ কোম্পানিই এখন সামাজিক মাধ্যমে সংযুক্ত। তারা ব্যাপকভাবে অনলাইন ভিডিও কনফারেন্সিং করছে, সামাজিক নেটওয়ার্কগুলো ব্যবহার করছে, ওয়েবসাইট খুলছে, ভিডিও শেয়ারিং করছে। এদের ফেসবুক পেজ রয়েছে, টুইটার অ্যাকাউন্ট রয়েছে, ইউটিউবে অ্যাকাউন্ট, কর্পোরেট ব্লগও রয়েছে। একটি শ্বেতপত্রে আইবিএম নিজেকে একটি ‘সোশ্যাল বিজনেস’ বলেই ঘোষণা দিয়েছে।

ওই যে নির্ভরতার কথা বলেছি, তার কিছু কারণও রয়েছে। ২০০৯ সালে ইউএস এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট হাডসন নদীতে ক্র্যাশ-ল্যান্ডিংয়ে বাধ্য হয়। আর প্রাথমিক খবরটি ছড়ায় নদীতে একটি ফেরি থেকে এক নারী যাত্রীর মোবাইল ফোনে তোলা ছবি থেকে। টুইটপিকেই প্রথম ছবিটি তোলেন তিনি। সেই ছবিই পরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে একমাত্র ভরসার হয়ে ওঠে।

২০০৯ সালে পপ সম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর খবরটি প্রথম প্রকাশ পায় সামাজিক নিউজ ওয়েবসাইট টিএমজেড-এ। আর সেখান থেকে টুইটার, ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ভক্তের কাছে পৌঁছায়। সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক পেছনে পড়ে থাকে মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো। ২০১২ সালে সঙ্গীত শিল্পী হুইটনি হিউস্টনের মৃত্যুর খবর টুইটারে প্রকাশিত হওয়ার অন্তত ২৭ মিনিট পর কোনও একটি মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করতে সক্ষম হয়।

আর ২০১১ সালে পাকিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর খবর হয়তো অজানাই থেকে যেতো, নয়তো যুক্তরাষ্ট্র তার সুবিধামতো সময়েই প্রকাশ করতো যদি না অ্যাবোটাবাদে লাদেনের গোপন আস্তানার এক প্রতিবেশি মধ্যরাতের ওই অভিযানে সৃষ্ট শোরগোলের কথা টুইট না করতেন।

দূর দেশ আর দূরের উদাহরণে কেন যাচ্ছি, সদ্য তাজা ঘটনা তনু হত্যার কথা অকপটেই স্বীকার করে নিতে হবে, সামাজিক মাধ্যমেই এই ঘটনা প্রথম আসে। মূল ধারার মিডিয়াতে তা গুরুত্ব পায় অনেক পরে। একথা বললেও বেশি বলা হবে না, অনেকটা সামাজিক মাধ্যমের চাপেই মূলধারার মাধ্যমগুলো এই খবরের দিকে ঝোঁকে।

তিউনেশিয়া, মিশর, ইরান ও সিরিয়া জুড়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ সাফল্যের পেছনে সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা দুনিয়াজুড়ে স্বীকৃত। আর বাংলাদেশে ‘গণজাগরণ’ নামে যে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ আন্দোলন হয়ে গেছে তারও প্রাথমিক ডাক দেওয়া হয়েছিলো সামাজিক মাধ্যমে।

তাহলে সেই এজেন্ডা সেটিংয়ের কথাই আসে। একটা সময় সনাতনি মিডিয়াকেই সমাজের মূল এজেন্ডা সেটার বা ট্রেন্ড সেটার হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মিডিয়া যা তুলে আনতো তা দিয়েই সমাজ পাল্টাতো কিংবা পট পরিবর্তন হতো। সেটা খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। ২০১২ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার (PEW) নামের একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা সংস্থা ‘স্টেট অব নিউজ মিডিয়া’ শিরোনামের রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে দেখানো হয়, টেলিভিশনই খবর পরিবেশনায় রাজত্ব করে চলেছে। তখনও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই ভার্চুয়াল জগতে খবরের সন্ধান কম করতেন। আর যদি করতেনও, তা ‘কি ওয়ার্ড’ সার্চ করে কিংবা ‘নিউজ এগ্রেগেশন’ সাইটগুলোতে ঢুঁ মেরে। নিউজ সাইটে সরাসরি ব্রাউজিং তাদের অভ্যাস হয়ে ওঠেনি তখনও। আর ফেসবুক টুইটারও তাদের জন্য খবর পাওয়ার জায়গা ছিলো না। কিন্তু এর মাত্র এক বছর পর ২০১৩ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার গবেষণা করে দেখলো পাল্টে গেছে অনেক কিছু। দেখা গেলো সনাতনি সংবাদমাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে বড় ধরনের অনীহা। খবর পড়তে, দেখতে কিংবা শুনতে তাদের সংবাদপত্র, টেলিভিশন কিংবা রেডিও প্রতি ঝোঁক নেই। অনলাইনেই তারা খবর জানছেন। ব্রেকিং নিউজ হিসেবে যখনকার ঘটনা তখনই তাদের হাতে ধরা দিচ্ছে। ফলে ওই সব সনাতনি মিডিয়াতে নেমে আসলো খরা। সঙ্গে খাড়াও নামলো। শুরু হলো ব্যাপক ছাঁটাই। ফলে যা হবার তাই হলো। এই সংবাদমাধ্যমগুলো তাদের সংবাদের সংখ্যা ও মান উভয় বিবেচনাতেই পিছিয়ে পড়তে লাগলো। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই গবেষণা সংস্থাটি বলেছে, তারা জরিপে দেখেছেন প্রতি তিন জন আমেরিকানের মধ্যে একজনই তাদের প্রয়োজনের খবরগুলো এসব মিডিয়াতে পাচ্ছেন না বলেই বর্জন করেছেন।

সুযোগটা নিতে পারতো মূল ধারার অনলাইন মিডিয়া। কিন্তু পারেনি। ব্রেকিং নিউজ, বেশি বেশি নিউজ আইটেম, বিষয় বৈচিত্র দিয়ে সে সুযোগকে প্রসারিত ও আর দৃঢ় অবস্থানে নেওয়ার প্রক্রিয়াটি শুরু করতে না করতেই সামাজিক মাধ্যম থেকে একটা চাপ আসতে শুরু করে। খবরের বিবেচনায় সামাজিক মাধ্যমের ভিতটি কিন্তু মৌলিকত্বহীন আর পরজীবী। এর নিজের কিছু নেই। মুল ধারার সংবাদমাধ্যম থেকে তুলে এনে নিজের নেটওয়ার্কে ছড়ানোই প্রধান কাজ। এখনো যে সে চরিত্রের বাইরে তা নয়। কারণ সারাদিন যত খবর প্রকাশিত ও প্রচার হয় তার ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ভাগই সামাজিক মাধ্যম প্রথম সামনে এনেছে কিংবা আনে। মূল কাজটি মূল ধারার সংবাদমাধ্যই করে। তবে জনপ্রিয়তার বিবেচনায় যে কোনও মূলধারার সংবাদমাধ্যমের চেয়ে এখন এগিয়ে এসব সামাজিক মাধ্যম। বাংলাদেশেও অবধারিতভাবেই তাই। আর বিবেচনার ও উদ্বেগের বিষয়টিও সেখানেই। আরও একটি উদ্বেগ হচ্ছে সামাজিক মিডিয়ায় এর সংখ্যা বাড়ছে বৈ কমছে না।

এখানে বিষয় হিসেবে সামনে এসেছে ইস্যু গ্রহণ। মূলধারার সংবাদমাধ্যমের চেয়ে সামাজিক সংবাদমাধ্যম যে কোনও ইস্যুকে একটু দ্রুতই তুলে নিচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে তার দায়বদ্ধতা কম। মূলধারার দায়বদ্ধতা রয়েছে। তাকে বুঝে শুনে এগুতে হয়। রয়টার্স ইন্সটিটউটের একটি তথ্য রয়েছে। এটিও গবেষণা লব্দ। ওরা বলছে, মূল ধারার সংবাদ মাধ্যম ইস্যু গ্রহণে সামাজিক মাধ্যমের চেয়ে পিছিয়ে। আবার ওদের চেয়ে আগেভাগেই সে ইস্যু ছেড়েও দেয়। হুমকিটাও সেখানেই।

আগেই বলেছি, এই সেদিনও যেখানে টেলিভিশন ট্রেন্ড সেটার ছিলো, এখন আর তা নেই। এখন অনলাইন মিডিয়া ট্রেন্ড সেট করে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম বাংলাদেশের প্রধান অনলাইন সংবাদমাধ্যম। অনলাইনে যাদের বিচরণ তারা এই সংবাদমাধ্যমটিকে ব্রেকিং নিউজে সবচেয়ে এগিয়ে রাখেন। তারা জানেন বাংলানিউজই তাদের আগে খবর দেবে। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয়ও ঘটে। দিনে সংঘঠিত যে কোনও ইভেন্ট বা ঘটনায় বাংলানিউজসহ অন্যান্য প্রধান অনলাইনগুলো খবরের অ্যাঙ্গেল সেটিংয়েও কাজ করে। মূলধারার অনলাইন যেভাবে যেই অ্যাঙ্গেলে খবর পরিবেশন করে, সনাতনি সংবাদমাধ্যমগুলো, টেলিভিশনগুলো সেই অ্যাঙ্গলকে অনুসরণ করেই রিপোর্ট দিতে থাকে। এর দুটি কারণ:

এক: তৈরি খবরটি সংবাদমাধ্যমগুলো পেয়ে যায় ফলে তারা নতুন কোনও কিছু খোঁজার চেষ্টাটাই করে না। এমনকি টেলিভিশনের পুরো স্ক্রিপ্ট অনলাইনে প্রকাশিত খবরের আদলে থাকে।

দুই: অনলাইনে খবরগুলো যেহেতু লেখা হয়ে যায়, সংবাদপত্রের রিপোর্টাররা সেটাই কপি করে নেন। তারা নতুন করে লেখার কষ্টটুকু করতে চান না।

এতো গেলো সনাতনি মিডিয়ার কথা। অনলাইনেই যে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম রয়েছে তারাও মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো থেকে কপি পেস্ট পদ্ধতিতে প্রকাশ করে। একটি খবর প্রকাশিত হওয়ার পরমূহূর্তেই তা শত শত অনলাইনে হুবহু দেখা যায়।

এরও দুটি দিক রয়েছে। প্রধানত এতে সাংবাদিকতা পেশাদারীত্ব হারাচ্ছে। কপিরাইট বিষয়টি পুরোপুরি ভুলণ্ঠিত হচ্ছে এসব তথাকথিত অনলাইন সংবাদমাধ্যমের হাতে।

আর অন্য দিকটি হচ্ছে ওই সংবাদটিতে যে বিষয় ও অ্যাঙ্গেল তুলে ধরা হয়েছে তাই শত শত কপি হয়ে নতুন নতুন সাইটে স্থান পেয়ে তা বহুগুণে ছড়াচ্ছে। ফলে দিনের খবরের অ্যাঙ্গেল সেটিং হয়ে যায় মূল ধারার অনলাইন সংবাদ মাধ্যাম থেকেই।

এত কিছুর পরেও এজেন্ডা সেটিংয়ে সামাজিক মাধ্যমের নাম সামনে আসে। কেন?

বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সামাজিক মাধ্যম তাদের নিজেদের এজেন্ডা সেট করে, আর তাই পরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের এজেন্ডা হয়ে ওঠে। কারণ একটাই ক্রমবর্ধমান হারে সামাজিক মাধ্যমের পোস্টগুলোকে খবরের উৎস হিসেবে নেওয়া ও তা থেকে খবর তৈরি করা। কেউ কেউতো স্যোশাল মিডিয়াকে অনেক খবরের ‘সুতিকাগার’ বলতেও ছাড়ছেন না। পক্ষান্তরে বরং সামাজিক মিডিয়াকে দেখা যায়, তারা আর মূলধারার মিডিয়ার দিকে ঝুঁকছে না। বিশেষ করে স্থানীয় কোনও বিষয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের কনটেন্ট তৈরি করছে এবং তা পোস্ট দিচ্ছে। ব্লগারদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। তারা যেনো সংবাদমাধ্যমকেই বরং কম বিশ্বাস করছে। বাংলাদেশেও আমরা এমন ব্লগার দুই-চারজন দেখতে পাচ্ছি যারা নিজেরাই কোনও বিশেষ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খু জেনে তবে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন কিংবা নিজের ব্লগে লিখছেন। নিউজ পেগ হিসেবে সেগুলোই লুফে নিচ্ছে অনলাইন-অফলাইনের সংবাদমাধ্যমগুলো। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এগুলো নিয়েও গবেষণা হয়েছে।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের কথা আগেই বলেছি। ওদের একটি গবেষণায় দেখানো হয়েছে কখনো কখনো মূলধারার সংবাদমাধ্যমে যা প্রকাশিত হচ্ছে তার থেকে ভিন্ন কথা ভিন্ন আঙ্গিক উঠে আসছে স্যোশাল মিডিয়ায়।

এতে করে সামাজিক মাধ্যম যে জনবান্ধব আর উপকারী বন্ধু হয়ে উঠছে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফেসবুকতো তার ব্যবহারকারীদের যেমন বন্ধু সম্বোধন করছে তেমনি একজনের সঙ্গে অন্যজনের বন্ধুত্ব পাতিয়েও দিচ্ছে। এরও একটা মনস্তাত্বিক প্রভাব রয়েছে। ফেসবুকে যোগাযোগে প্রেম বিয়ে পর্যন্ত গড়াচ্ছে। তবে সেটা আলোচ্য বিষয় নয়। আলোচ্য হচ্ছে এই বন্ধুত্ব তাদের মধ্যে তথ্য দেওয়া নেওয়া, কোনও তথ্য বা খবরে তাদের মধ্যে ভাব বিনিময় আর তথ্য অনুধাবনেও তাদের মধ্যে সমমনা মনোভাব খুব সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে তারা একই খবরে অনেকটা একইভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। আর ফেসবুক টুইটার, ইনস্টাগ্র্যাম হয়ে উঠছে তাদের প্রাণের সখা। সেখানেই দিনের শুরু সেখানেই রাতের শেষ। ফলে খবর খুঁজতে আর তারা খবরের ওয়েব সাইটে যাচ্ছে না। সেখানেই পড়ে নিচ্ছে যা কিছু জানতে চায় তা।

একবার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলছিলো সে বাংলানিউজ পড়ে। কৌতুহল হলে জানতে চাইলাম- তাই বুঝি? কখন পড়ো? কিভাবে পড়ো? শিক্ষার্থীটি বললো- ‘কেনো স্যার ফেসবুকে পড়ি!’

ফেসবুকে তো পাওয়াই যায়। কারণ বাংলানিউজ নিজেই ফেসবুক টুইটারে নিজের পাতা খুলে তাতে পোস্ট দিচ্ছে তাতে কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে। যারা নিয়মিতই পাচ্ছে এই সব খবরের পোস্ট। সুতরাং সেখানেই বাংলানিউজের খবর পাঠ বিষ্ময়ের কিছু নয়।

ব্যবহারকারীর মনোভাব যখন এভাবে তৈরি তখন সামাজিক মাধ্যমগুলো নিচ্ছে নিজেদেরই নিউজফিড দেওয়ার উদ্যোগ। এই দৌড়ে আবার ফেসবুক সবচেয়ে এগিয়ে। এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তারা নিজেরাই তৈরি করবে নিউজ ফিড। এটাই উদ্বেগের।

সামাজিক মাধ্যমকে খবরের উৎস হিসেবে বেশি বেশি মেনে নেওয়ার প্রবণতার পাশাপাশি ভরসার স্থল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে যুবশ্রেণির মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তবে মূলধারার সংবাদমাধ্যম এখান থেকে উপকারও পাচ্ছে। কারণ তাদের প্রকাশিত নিউজ, ছবি, ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে অনেক লাইক, শেয়ার আর তাতে পাঠকও বাড়ছে।

কিন্তু এই অগ্রগতি আত্মঘাতি! পরনির্ভরতার মতোই ক্ষতিকর! বরং অনলাইনে সামাজিক মাধ্যমেক মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমের প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখতে হবে। তৈরি করতে হবে নিজের পাঠক। যারা নিজেদের ইউআরএল (ইউনিফর্ম রিসোর্স লোকেটর) ধরে ব্রাউজ করে তবেই সাইটে ঢুকবে। পাঠ করবে। তারাই তাদের ফেসবুকে, টুইটারে তার শেয়ার দেবে, লাইক দেবে, মন্তব্য করবে। সেখান থেকে ভাইরাল হবে মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমেরই কোনও খবর। কে খবরটি ব্রেক করছে সে প্রতিযোগিতা মূলধারারই আরেকটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে- ফেসবুক বা টুইটারের সঙ্গে নয়। আর মত প্রকাশের কথা যদি আসে, সে সুযোগও মূলধারার অনলাইন সংবাদমাধ্যমে পুরোপুরি রয়েছে। সেখানেও রয়েছে মন্তব্য দেওয়ার প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ। তবে তা নিশ্চয়ই একটি দায়িত্বশীল মডারেশনের মাধ্যমে। কারণ সবশেষে কিংবা সবার আগেই যে প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তা হচ্ছে গ্রহণযোগ্যতা, নির্ভরযোগ্যতা। যা মূলধারার সংবাদমাধ্যমেরই রয়েছে।
আর তারও চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হচ্ছে প্রভাব। সমাজকে প্রভাবিত করার বিচারে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমের তুলনা করার সময়টি এখনো আসেনি। খবরে মূলধারার সংবাদমাধ্যমই রাজত্ব করবে এটাই সারকথা।

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



আজকের দিন-তারিখ

  • বৃহস্পতিবার (রাত ২:০৩)
  • ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৫ই শাওয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
  • ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)

Exchange Rate

Exchange Rate EUR: বৃহঃ, ২৫ এপ্রি.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 / +8801920733632

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।