
আহমদীর ছায়ায় জনতা মার্কেটের কোলাহল, আল-কুতের আধুনিকতা
কুয়েতের আহমদি গভর্নরেটের অধীনে থাকা ফাহাহিল শহরটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে কেবল একটি কর্মস্থল নয়, এটি যেন দূর পরবাসে তাদের একটি নিজস্ব ঠিকানা। তেল-সমৃদ্ধ কুয়েতে বিভিন্ন পেশার পাশাপাশি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও বাংলাদেশিরা ফাহাহিল ও এর আশপাশের অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। কর্মসংস্থান এবং সামাজিক সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে এই শহরের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
প্রবাসীদের মিলনস্থল: জনতা মার্কেট এলাকা
ফাহাহিল শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত জনতা সুপার মার্কেট এলাকাটি ফাহাহিল ছাড়িয়ে গোটা কুয়েতের প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে একটি পরিচিত নাম। কোনো পরিচিতজনকে খুঁজে বের করা, সাক্ষাৎ করা বা দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্য ‘জনতা’ প্রবাসীদের প্রথম ও প্রধান পছন্দ। বিশেষ করে কুয়েতের দূরবর্তী এলাকা, যেমন ওয়াফরা থেকেও বহু বাংলাদেশি প্রবাসী এখানে আসেন তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও দেশীয় পণ্য সামগ্রী কিনতে। জনতা মার্কেট এলাকা প্রবাসী জীবনের আবেগ ও বাস্তবতার এক অনন্য মিশ্রণ।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা এখানে বিভিন্ন ধরনের কাজে নিয়োজিত। তাদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণের ক্ষেত্রগুলির মধ্যে অন্যতম হলো টেইলারিং শিল্প। ফাহাহিলে বহু সংখ্যক প্রবাসী এই পেশায় জড়িত এবং তাদের নিজস্ব টেইলারিং শপও রয়েছে। এছাড়াও, রয়েছে নিত্যপণ্যের দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
ফাহাহিলের রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ক্রীড়া সংগঠনগুলি নিয়মিত নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যা তাদের মধ্যে বন্ধন সুদৃঢ় করে এবং দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখে।
ফাহাহিলের পুরনো ঐতিহ্য ও নতুন দিনের উদ্যোক্তা
ফাহাহিলের কিছু পুরনো স্থাপনা এই শহরের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— গ্লাস বিল্ডিং, দাব্বুস বিল্ডিং, ফাহাহিল ট্রাভেলস এবং অবশ্যই জনতা মার্কেট। এই স্থাপনাগুলি বহু বছর ধরে প্রবাসীদের সেবা দিয়ে আসছে।
ফাহাহিলের অর্থনীতিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের অবদান সুদূরপ্রসারী। প্রবীণ দুজন ব্যবসায়ীর কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন আলহাজ্ব আবুল কাশেম, যিনি জনতা গ্রুপেরও স্বত্তাধিকারী। অন্যজন হলেন হোসেন আহমদ, যিনি ফাহাহিল ট্রাভেলসের মতো একটি পরিচিত প্রতিষ্ঠানের মালিক। আলহাজ্ব আবুল কাশেম এর মতো উদ্যোক্তারা কেবল নিজেদের ব্যবসাই বাড়াননি, বরং শত শত প্রবাসীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে কুয়েতের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
আধুনিকতার ছোঁয়া: আল-কুত মল
ফাহাহিল শহরের আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে দৃষ্টিনন্দন আল-কুত মল। কুয়েতের অন্যতম এই আধুনিক মলটি শহরের মান ও সৌন্দর্যকে বহু গুণে বাড়িয়েছে। সমুদ্রের পাশে অবস্থিত এই মলটি কেবল কেনাকাটার স্থান নয়, এটি প্রবাসীদের বিনোদন ও অবকাশ যাপনের একটি প্রিয় কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত।
ফাহাহিল তাই কেবল ইট-কাঠের একটি শহর নয়, এটি প্রবাসী বাংলাদেশি সমাজের কর্মতৎপরতা, উদ্যম এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। কর্মের সন্ধানে আসা হাজার হাজার প্রবাসীর স্বপ্ন ও প্রচেষ্টার ছাপ স্পষ্ট এই শহরের আনাচে-কানাচে। কুয়েতের অর্থনীতিতে তাদের অবদান যেমন প্রশংসনীয়, তেমনি তাদের সামাজিক বন্ধন ও উদ্দীপনাও অনুপ্রেরণামূলক।

আ হ জুবেদ (সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি)