সারা বিশ্বের সংবাদকর্মী ও বিশ্ব বিবেক প্রখ্যাত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজ বা হত্যাকান্ড নিয়ে আলোড়িত ও সোচ্ছার সমালোচনায় মূখর । সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক খাসোগি গ্রেফতার বা নির্যাতনের ভয়ে এক বছর পূর্বে সৌদি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে সেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন । তিঁনি ওয়াশিংটন পোস্টে নিয়মিত কলাম লিখতেন ।
প্রখ্যাত এ সাংবাদিক নিখোঁজ ইস্যুতে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সন্মেলন বর্জন করার কথা ভাবছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র । ইতিমধ্যে এ সন্মেলন থেকে নাম প্রত্যাহারের সিদ্বান্ত নিয়েছে বেশ কতগুলি আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও ব্যাবসায়ী গ্রুপ । উক্ত সন্মেলনের আয়োজক সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ।
জামাল খাসোগি গত ২ অক্টোবর ২০১৮ ইং তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ঢোকেন তার বিয়ের কাগজ পত্র সংগ্রহের জন্য । এর ১ সপ্তাহ পূর্বে বিয়ের কাগজ পত্র কনস্যুলেটে জমা দেওয়ার সময় খাসোগিকে কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছিল ১ সপ্তাত পর কাগজ পত্র সংগ্রহের জন্য ।
নিউইয়র্ক টাইমস এর খবরে বলা হয়েছে , সৌদি ক্রাউন্স প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান জামাল খাসোগিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অপহরনের অনুমোদন দেন । সিএনএন এর খবরেও এ রকম দাবী করা হয়েছে । তবে সৌদি সরকার এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি ।
বিভিন্ন খবরে বলা হয়েছে , ঘটনার দিন সৌদি থেকে দু’টি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভিতরে জামাল খাসোগি হত্যায় অংশ নেয় । প্রথমে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নির্যাতন করা হয় । হত্যা কান্ডের পর দলটি দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে ।
অবাগ কান্ড হল , ডিজিটালের কৃপায় এ হত্যা কান্ডের সব আলামত রেকর্ড হয়েছে অ্যাপলের আইক্লাউডে । আতংকিত জামাল খাসোগি যখন কনস্যুলেটে প্রবেশ করছিলেন , তখন তার হাতে থাকা আই ফোনের ” অ্যাপেল ওয়াচ ” এর রেকর্ডার চালু করে রাখায় এটি সম্ভব হয়েছে ।
সিএনএন , ইন্ডিপেনডেন্ট ও নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে , নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে বন্দী , নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা নিজেই রেকর্ড করে সাংবাদিক জগতে অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন । পরে এ রেকর্ড তাঁর ব্যবহৃত আইফোন ও তথ্য সংগ্রহের অন লাইন ষ্টোরেজ আই ক্লাউডে জমা হয় । এ ডায়নামিক সাংবাদিক জামাল খাসোগি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের সময় তাঁর মোবাইল বাইরে অবস্তান রত তাঁর নতুন বাগদত্তার কাছে রেখে যান ।
জামাল খাসোগী
হত্যাকান্ডের ব্যাপারে ইতিমধ্যে জোড় তদন্ত আরাম্ভ করেছে তুরস্ক সরকার – সহযোগিতা করছে বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র । এ হত্যাকান্ডের প্রকৃত হুকুমদাতা ও খুনিরা বেরিয়ে আসবে এ আশা করছি ।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামনিস্ট খাশুগজি গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসুলেটে নিজের বিয়ে উপলক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। বাগদত্তা তুরস্কের নাগরিক হাতিস চেঙ্গিসকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তিনি কনসুলেট ভবনে প্রবেশের পর আর বেরিয়ে আসেননি।
তুরস্ক সরকার শুরু থেকেই খাশুগজি নিখোঁজ কাণ্ডে সৌদি আরবের হাত আছে বলে দাবি করে এসেছে। তারা বলেছিল, খাশুগজিকে সৌদি কনসুলেটের ভেতর নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে এবং এর প্রমাণ তাদের হাতে আছে।
সৌদি আরব শুরুতে খাশুগজি কিছুক্ষণ পর কনসুলেট থেকে বেরিয়ে গেছেন বলে দাবি করলেও এক পর্যায়ে তাকে কনসুলেট ভবনের ভেতর হত্যার কথা স্বীকার করে। তারা প্রথমে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে বলে, কনসুলেটের ভেতর ধস্তাধস্তিতে খাশুগজি খুন হন।
সৌদি আরবের এ ব্যাখ্যায় আন্তর্জাতিক মহল সন্তুষ্ট না হওয়ায় সৌদি আরব এরপর আরো কয়েকবার খুনের ঘটনাটি নিয়ে তাদের বিবৃতি পাল্টেছে। শেষমেশ খাশুগজিকে ভুল করে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ক্রাউন প্রিন্স সালমান কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছে তারা।
আব্দুর রউফ মাওলা
সম্পাদক, মাসিক মরুলেখা – কুয়েত
সভাপতি, ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ফোরাম – ( IMF ) কুয়েত ।