মাঠ ও মাঠের বাইরে বিতর্কিত বসুন্ধরা কিংস।

বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের ‘রাজা’ খ্যাত বসুন্ধরা কিংস এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগের গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষ করে শূন্য হাতে দেশে ফিরেছে। গত ২১ অক্টোবর কুয়েতে এসে দশ দিনের সফরে ওমানের আল-সিব, লেবাননের আল-আনসার এবং স্বাগতিক কুয়েত এসসি-এর বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ খেলেছে দলটি। প্রবাদ আছে, ‘নিজ দেশে দাদাগিরি, পরদেশে গরীবি’—বাংলাদেশের ফুটবলে কিংসের দাপট প্রশ্নাতীত হলেও, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের পারফরম্যান্স সেই প্রবাদকেই যেন সত্যি প্রমাণ করল। টানা তিন হারে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছে মারিও গোমেজের শিষ্যদের।
২৫ অক্টোবর কুয়েতের জাবের আল-মোবারক আল-হামেদ স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচে ওমানের আল-সিব ক্লাবের বিপক্ষে প্রায় তিন হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী দর্শকের বিপুল সমর্থন নিয়ে মাঠে নামে কিংস। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়েও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। এই ম্যাচে রক্ষণভাগের সামান্য ভুলেই জয় হাতছাড়া হয় বলে অনেকে মনে করেন।
পরের ম্যাচ, ২৮ অক্টোবর লেবাননের আল-আনসার-এর বিপক্ষে কিংস যেন দাঁড়াতেই পারেনি। প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হতে হয় বাংলাদেশের এই সেরা ক্লাবটিকে। ০-৩ গোলের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
শেষ ম্যাচে ৩১ অক্টোবর স্বাগতিক কুয়েত এসসি-এর সঙ্গেও কিংসের ভাগ্য বদলায়নি। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই গোল হজম করার পর তারা ০-২ গোলে পরাজিত হয়। কুয়েত এসসি-র বিপক্ষে এই হার কিংসের হতাশা আরও বাড়ায়। তিন ম্যাচে গোল করেছে মাত্র দুটি, আর হজম করেছে মোট আটটি।
সামগ্রিকভাবে, আরব দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি আছে, এমন মন্তব্যই করছেন ফুটবল বিশ্লেষক ও প্রবাসীরা। কিংসের খেলায় আক্রমণাত্মক ফুটবলের অভাবও ছিল স্পষ্ট।
প্রথম ম্যাচে স্টেডিয়ামে এন্ট্রি ফ্রি থাকায় প্রবাসীরা ব্যাপক সংখ্যায় উপস্থিত হলেও, পরের দুটি ম্যাচে হতাশাজনক দর্শক উপস্থিতি দেখা যায়। প্রথম ম্যাচের আগে বসুন্ধরা কিংস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ঘোষণা করেছিল যে, তারা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করে কুয়েত প্রবাসীদের জন্য খেলা দেখার সুযোগটি বিনামূল্যে করে দিয়েছে।
কিন্তু পরের দুটি ম্যাচের জন্য যখন টিকিট মূল্য দুই দিনার নির্ধারণ করা হয়, তখন প্রবাসীদের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে। অনেকে মন্তব্য করেন, কিংস দল এই সুযোগকে নিজেদের ক্রেডিট হিসেবে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, যা শেষ দুটি ম্যাচে আর ধরে রাখতে পারেনি।
অনেকের মতে, কিংসের নাম-সুনাম বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল পর্যন্তই সীমাবদ্ধ, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একেবারেই গুরুত্বহীন প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে, কুয়েতে থাকাকালীন বসুন্ধরা কিংস দলটি মাঠের বাইরের কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ সাংবাদিক সংগঠন, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েত অভিযোগ করেছে যে, নানা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কিংস কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনকি খেলা কভার করার জন্য সাংবাদিকদের মিডিয়া কার্ডও সংগ্রহ করে দেওয়া হয়নি।
সাংবাদিকদের অভিযোগ, কিংস কুয়েতে আসার আগে প্রেসক্লাবকে ইমেইল পাঠিয়ে তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কুয়েতে এসে তারা সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করে।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব কুয়েতের সাংবাদিকরা বসুন্ধরা কিংস এর ম্যানেজার এস এম ওয়াসিমুজ্জামান এবং সহকারী কোচ মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন রক্সি-এর বিরুদ্ধে বাফুফে-কে ইমেইল এর মাধ্যমে অভিযোগও জানিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, বসুন্ধরা কিংসের কুয়েত সফর মাঠে ও মাঠের বাইরে নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছে। ফুটবলে কেবল দেশে দাপট দেখালেই চলে না, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো পারফরম্যান্স এবং পেশাদার আচরণও অত্যন্ত জরুরি। অনেক প্রবাসীর মতে, এই তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে দেশের বাইরে খেলার সময় দলটিকে পারফরম্যান্স ও সাংগঠনিক উভয় ক্ষেত্রেই আরও অনেক বেশি পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা দেখাতে হবে।
আ হ জুবেদ (সম্পাদক, অগ্রদৃষ্টি)











