Menu |||

থাই গুহায় উদ্ধার অভিযান শুরু: ঝুঁকি কতোটা?

থাইল্যান্ডের যে গুহায় ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছে সেখানে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গুহার ভেতর থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যেতে পারে।

এই গুহাটি সাপের মতো এমনভাবে পেঁচানো এবং এর ভেতরে এতো ফাটল আছে যা উদ্ধারকারীদের জন্যে যেকোন সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

থাম লুয়াং নামের এই গুহাটির কোথাও কোথাও ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, কোথাও কোথাও অত্যন্ত সরু আবার কোথাও কোথাও সেটি পানিতে পূর্ণ হয়ে আছে।

গুহাটির ভেতর থেকে বাচ্চাদের বের করে আনার কাজটা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে সেটা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একজন উদ্ধারকারী ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনায়।

থাই নৌবাহিনীর সাবেক একজন অভিজ্ঞ ডুবুরি তিন দিন আগে গুহার ভেতরে বাচ্চাদের কাছে অক্সিজেনের ট্যাঙ্ক পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় মারা যান।

বাচ্চাদের এই দলটি তাদের কোচকে সাথে নিয়ে গুহার ভেতরে দেখতে গিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ের কবলে পড়ে বন্যার পানিতে তারা ভেতরে আটকা পড়ে যায়। এক সপ্তাহেরও বেশি তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ন’দিন পর জানা যায় যে তারা জীবিত আছে।

তারপর থেকেই কাজ চলছে তাদেরকে কিভাবে সেখান থেকে বের করে আনা যায় সেটা নিয়ে।

শুরুর দিকে অনেকে বলেছেন, উদ্ধারকাজ শেষ হতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যাতে পারে। কারণ হয় বাচ্চাদের ডাইভ করা শেখাতে হবে, অথবা গুহার ভেতরে পানি সরে যাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে, কিম্বা ভেতর থেকে সব পানি বাইরে পাম্প করে ফেলে দিতে হবে।

ডাইভ করে আসতে পারবে?

গুহার ভেতরে অনেক জায়গা পানিতে ভরে আছে। এসব জায়গা পার হয়ে বাচ্চাদের কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছেন উদ্ধারকারী ডুবুরিরা। এসময় তাদের সাথে ছিল নিশ্বাস নেওয়ার বিশেষ যন্ত্র। বাচ্চাদেরকে বের করে আনতে গেলে তাদেরকেও সেখান থেকে ঠিক একইভাবে বেরিয়ে আসতে হবে।

থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রাউত উংসোয়ান বলেছেন, উদ্ধারকারীরা বাচ্চাদেরকে এখন সাঁতার কাটা ও ডুব দেওয়া শেখাচ্ছেন।

উদ্ধারকারীরা আশা করছেন যে তারা বাচ্চাদের কাছে পুরো মুখ ঢেকে রাখার মাস্ক, ডুব দেওয়ার সময় ব্যবহার করার জন্যে অক্সিজেনের বোতল ইত্যাদি জিনিস পৌঁছে দিতে পারবেন। একই সঙ্গে গুহার ভেতরের অন্ধকার দূর করতে তারা ব্যাবহার করবেন গ্লো স্টিকের মতো জিনিস। ভেতরে ডাইভিং লাইন (দড়ি) ফেলতে হবে যা ধরে ধরে বাচ্চারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

তবে কোন কোন উদ্ধারকাজ বিশেষজ্ঞের মতে এই ডাইভিং অপশন বাচ্চাদের জন্যে খুব বিপদজনকও হতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনে যারা ডাইভ বিশেষজ্ঞ আছেন তারা বলছেন, আরো বৃষ্টিপাতের আগেই বাচ্চাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনতে হবে। কেননা বৃষ্টি বেড়ে গেলে গুহার ভেতরে আরো পানি বেড়ে যাবে আর তখন বাচ্চাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

কেইভ ডাইভিং গ্রুপের চেয়ারম্যান মার্টিন গ্রাস বলেছেন, বাচ্চাদেরকে পুরো মুখের মাস্ক, সাঁতার কাটার জন্যে হাল্কা কাপড়চোপড় দিতে হবে। তাদেরকে শেখাতে হবে কিভাবে ডাইভিং ফ্লিপার বা ফিন্স ব্যবহার করতে হয়।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বাচ্চারা এতো ছোট তারা কি তাদের সাথে বাতাসের ডাইভিং বোতল বহন করতে পাারবে? মি. গ্রাস বলছেন, এটা নির্ভর করছে বাচ্চাদের শরীর কতোটা বড় তার উপর। তিনি বলছেন, বাচ্চারা না পারলে উদ্ধারকারী ডুবুরি তার পাশাপাশি সাঁতার কাটার সময় এটি বহন করতে পারে।

“প্রত্যেকটি বাচ্চার সাথে অন্তত একজন কি দুজন উদ্ধারকারী ডুবুরি থাকতে হবে। এসময় বাচ্চারা যাতে আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে সেটা তারা নিশ্চিত করবেন,” বলেন তিনি।

এসময় বাচ্চাদেরকে ডুবুরিদের শরীরের সাথেও দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে যাতে তারা গুহার ভেতরে দ্রুত গতিতে বয়ে যাওয়া ঘোলা পানিতে হারিয়ে না যায়।

মি. গ্রাস বলেন, “এখানে একটা বাড়তি সুবিধা হচ্ছে যে বাচ্চারা খুব কম বয়সের। কেউ যখন ছোট থাকে তারা এধরনের জিনিসকে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে নেয়।”

 

বাচ্চারা হয়তো পানির নিচে একটানা দশ থেকে ১৫ মিনিট থাকতে পারবে। তাই দেখতে হবে গুহার কোথায়া কোথায় কতোটুকু রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।

বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে সেখান থেকে আবার গুহার মুখে ফিরে আসতে বাচ্চাদের সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা। তার মধ্যে ৬ ঘণ্টা লেগেছে বাচ্চাদের কাছে যেতে আর পাঁচ ঘণ্টা ফিরে আসতে।

গুহার ভেতর থেকে যখন পানি পাম্প করে বের করে আনার কাজ চলছে তখন মি. গ্রাসের অভিমত হলো বাচ্চাদেরকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে বের করে আনা।

“বর্ষাকাল যখন আসছে, তখন কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে আসলে পানির উচ্চতা আরো কতোটা বেড়ে যেতে পারে।”

অপেক্ষা করা

আরেকটা উপায় হচ্ছে বাচ্চাদের গুহার ভেতরে অপেক্ষা করা। কারণ পাম্প করে পানি গুহার বাইরে ফেলা হচ্ছে। পানির স্তর যখন নিচে নেমে যাবে তখন তারা নিজেরাই পায়ে হেঁটে নিরাপদে বের হয়ে আসতে হবে।

কিন্তু এই সময় ধরে তাদের কাছে নিয়মিত খাবার দাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে।

চব্বিশ ঘণ্টা ধরে পানি পাম্প করার কাজ চলছে। বের করে আনা হচ্ছে লাখ লাখ লিটার পানি। বলা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ঘণ্টায় এক সেন্টিমিটার করে পানি কমছে।

 

কিন্তু পানি যতোই বের করে আনা হচ্ছে, ঠিক ততোই পানি পাহাড়ের বিভিন্ন নালা দিয়ে গুহার ভেতরে এসে পড়ছে। আর সবচেয়ে বড় ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে বাচ্চারা এখন যেখানে আছে সেই জায়গাটিও প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।

গুহাটি যে প্রদেশের সেখানকার গভর্নর নারংসাক ওসোতানাকরণ বলেছেন, “তাদেরকে এখন পানির সাথে প্রতিযোগিতা করে লড়তে হচ্ছে।”

“আমাদের জন্যে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো আবহাওয়া। আমরা হিসেব করে দেখছি বৃষ্টির আগে আমাদের হাতে কতো দিন, আর কতো ঘণ্টা সময় আছে,” বলেন তিনি।

পাহাড়ে ছিদ্র করা

গুহার ভেতরে পাহাড়ের গায়ে ছিদ্র করে কর্তৃপক্ষ তার ভেতর থেকে পানি বের করে আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাহাড়টি এতো কঠিন ও শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

কেউ কেউ বলেছেন, ছিদ্র করে সেখান থেকে বাচ্চাদেরকে হেলিকপ্টারে করে বের করে নিয়ে আসা যায় কিনা।

কিন্তু এটা করতে হলে তার আগে গুহার উপরে নতুন নতুন রাস্তা বানাতে হবে। ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ড্রিলিং করার যন্ত্রপাতি। কিন্তু তার জন্যে অনেক সময়ের প্রয়োজন।

 

এছাড়াও ওই পাহাড়ের গঠন জরিপ করে দেখতে হবে। তাছাড়া সেখানে গর্ত করা সম্ভব হবে না। তাছাড়াও দেখতে হবে কোথায় কতোটুকু গর্ত করলে বাচ্চাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। সেখানে গর্ত করা যাবে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

গুহার ভেতরে কী বিপদ

আটকে পড়া বাচ্চাদের বয়স ১১ থেকে ১৬। তাদের কোচের বয়স ২৫। তারা সেখানে আছে পাথরের তৈরি সংকীর্ণ একটি জায়গায়। সেখানকার পরিবেশ ভেজা। হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তাদেরকে শুষ্ক এবং উষ্ণ রাখতে হবে।

উপর থেকে পাথর পড়ার ঝুঁকিও আছে। তবে সবচেয়ে বড়ো উদ্বেগ হচ্ছে পানির স্তর বেড়ে যাওয়া। ঝড়বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যেতে পারে। প্রবেশ মুখের কাছে পানি বেড়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ভেতরে বাতাসের সরবরাহ।

বাচ্চারা যেখানে আছে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়েও আছে উদ্বেগ। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানকার বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ২১% থেকে ১৫%-এ নেমে গেছে।

উদ্ধারকারীরা ইতোমধ্যে তাদের কাছে অক্সিজেনের ১০০টি ট্যাঙ্ক পৌঁছে দিয়েছেন।

 

তাদেরকে কী সাহায্য দেওয়া হচ্ছে

সবার আগে খাবার। তারপর ওষুধপত্র। নিরাপদ খাবার পানি এবং প্যারাসিটামল।

উদ্ধারকারীরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন শিশুদের শারীরিক পুষ্টির উপর। আগামী সাত দিন এই বাচ্চারা প্রতিদিন যা গ্রহণ করবে তার মধ্যে আছে:

  • ভিটামিন মেশানো মিনারেল ওয়াটার- একেকজন ১ হাজার মিলি করে
  • ওষুধ মিশ্রিত তরল খাবার- একেকজন ১ হাজার মিলি করে

কর্মকর্তারা বলছেন, এই দলের বেশিরভাগ শিশুই সুস্থ আছে। তবে তাদের কেউ কেউ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের সাথে একজন ডাক্তার এবং একজন নার্সও আছেন। তাদেরকে সরিয়ে আনার জন্যে কারা শারীরিকভাবে প্রস্তুত কিনা সেবিষয়ে তারা মতামত দেবেন।

কিন্তু এর মধ্যে ডুবুরিরা গুহার ভেতরে আরো কয়েকশো বাতাসের ট্যাঙ্ক নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তারা একটি বেহ ক্যাম্প তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

 

মানসিক অবস্থা

বাচ্চাদের কাছে হয়তো টর্চ, লাইট এবং মোবাইল ফোন ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা গত দুসপ্তাহ ধরে অন্ধকারে অবস্থান করছে।

ফলে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে আলো পৌঁছে দিচ্ছেন। সেখানে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন সংযোগ স্থাপনেরও চেষ্টা করছেন তারা যাতে বাচ্চারা তাদের বামা মায়ের সাথে কথা বলতে পারে।

“শিশুদের মানসিক অবস্থা ভালো আছে,” জানিয়েছেন বেলজিয়ান ডুবুরি বেন রেমেন্যান্টস, যিনি এই উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করছেন।

 

সূত্র, বিবিসি

Facebook Comments Box

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



সর্বশেষ আপডেট



» তারেক মনোয়ার একজন স্পষ্ট মিথ্যাবাদী

» কুয়েতে নতুন আইনে অবৈধ প্রবাসীদের কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে

» সোশ্যাল প্লাটফর্মে লন্ডনী মেয়েদের বেলেল্লাপনা,চাম্পাবাত সবার শীর্ষে

» ফারুকীর পদত্যাগের বিষয়টি সঠিক নয়

» পাকিস্তান থেকে সেই আলোচিত জাহাজে যা যা এল

» মিছিল করায় আট মাস ধরে সৌদি কারাগারে ৯৩ প্রবাসী, দুশ্চিন্তায় পরিবার

» কুয়েতে যুবলীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

» ক্ষমা না চাইলে নুরের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়

» বাকু থেকে ফিরলেন ড. মুহাম্মাদ ইউনূস

» শুক্রবার আহত ও শহীদদের স্মরণে কর্মসূচি দিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Desing & Developed BY PopularITLtd.Com
,

থাই গুহায় উদ্ধার অভিযান শুরু: ঝুঁকি কতোটা?

থাইল্যান্ডের যে গুহায় ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচ দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছে সেখানে উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গুহার ভেতর থেকে তাদেরকে বের করে আনতে চার থেকে পাঁচদিন সময় লেগে যেতে পারে।

এই গুহাটি সাপের মতো এমনভাবে পেঁচানো এবং এর ভেতরে এতো ফাটল আছে যা উদ্ধারকারীদের জন্যে যেকোন সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

থাম লুয়াং নামের এই গুহাটির কোথাও কোথাও ১০ মিটার পর্যন্ত উঁচু, কোথাও কোথাও অত্যন্ত সরু আবার কোথাও কোথাও সেটি পানিতে পূর্ণ হয়ে আছে।

গুহাটির ভেতর থেকে বাচ্চাদের বের করে আনার কাজটা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে সেটা অনেক বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে একজন উদ্ধারকারী ডুবুরির মৃত্যুর ঘটনায়।

থাই নৌবাহিনীর সাবেক একজন অভিজ্ঞ ডুবুরি তিন দিন আগে গুহার ভেতরে বাচ্চাদের কাছে অক্সিজেনের ট্যাঙ্ক পৌঁছে দিয়ে ফিরে আসার সময় মারা যান।

বাচ্চাদের এই দলটি তাদের কোচকে সাথে নিয়ে গুহার ভেতরে দেখতে গিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ এক ঝড়ের কবলে পড়ে বন্যার পানিতে তারা ভেতরে আটকা পড়ে যায়। এক সপ্তাহেরও বেশি তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু ন’দিন পর জানা যায় যে তারা জীবিত আছে।

তারপর থেকেই কাজ চলছে তাদেরকে কিভাবে সেখান থেকে বের করে আনা যায় সেটা নিয়ে।

শুরুর দিকে অনেকে বলেছেন, উদ্ধারকাজ শেষ হতে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যাতে পারে। কারণ হয় বাচ্চাদের ডাইভ করা শেখাতে হবে, অথবা গুহার ভেতরে পানি সরে যাওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে, কিম্বা ভেতর থেকে সব পানি বাইরে পাম্প করে ফেলে দিতে হবে।

ডাইভ করে আসতে পারবে?

গুহার ভেতরে অনেক জায়গা পানিতে ভরে আছে। এসব জায়গা পার হয়ে বাচ্চাদের কাছে গিয়ে পৌঁছাতে পেরেছেন উদ্ধারকারী ডুবুরিরা। এসময় তাদের সাথে ছিল নিশ্বাস নেওয়ার বিশেষ যন্ত্র। বাচ্চাদেরকে বের করে আনতে গেলে তাদেরকেও সেখান থেকে ঠিক একইভাবে বেরিয়ে আসতে হবে।

থাইল্যান্ডের উপ-প্রধানমন্ত্রী প্রাউত উংসোয়ান বলেছেন, উদ্ধারকারীরা বাচ্চাদেরকে এখন সাঁতার কাটা ও ডুব দেওয়া শেখাচ্ছেন।

উদ্ধারকারীরা আশা করছেন যে তারা বাচ্চাদের কাছে পুরো মুখ ঢেকে রাখার মাস্ক, ডুব দেওয়ার সময় ব্যবহার করার জন্যে অক্সিজেনের বোতল ইত্যাদি জিনিস পৌঁছে দিতে পারবেন। একই সঙ্গে গুহার ভেতরের অন্ধকার দূর করতে তারা ব্যাবহার করবেন গ্লো স্টিকের মতো জিনিস। ভেতরে ডাইভিং লাইন (দড়ি) ফেলতে হবে যা ধরে ধরে বাচ্চারা সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারবে।

তবে কোন কোন উদ্ধারকাজ বিশেষজ্ঞের মতে এই ডাইভিং অপশন বাচ্চাদের জন্যে খুব বিপদজনকও হতে পারে। কিন্তু ব্রিটেনে যারা ডাইভ বিশেষজ্ঞ আছেন তারা বলছেন, আরো বৃষ্টিপাতের আগেই বাচ্চাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনতে হবে। কেননা বৃষ্টি বেড়ে গেলে গুহার ভেতরে আরো পানি বেড়ে যাবে আর তখন বাচ্চাদেরকে সেখান থেকে বের করে আনা খুব কঠিন হয়ে পড়বে।

কেইভ ডাইভিং গ্রুপের চেয়ারম্যান মার্টিন গ্রাস বলেছেন, বাচ্চাদেরকে পুরো মুখের মাস্ক, সাঁতার কাটার জন্যে হাল্কা কাপড়চোপড় দিতে হবে। তাদেরকে শেখাতে হবে কিভাবে ডাইভিং ফ্লিপার বা ফিন্স ব্যবহার করতে হয়।

অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বাচ্চারা এতো ছোট তারা কি তাদের সাথে বাতাসের ডাইভিং বোতল বহন করতে পাারবে? মি. গ্রাস বলছেন, এটা নির্ভর করছে বাচ্চাদের শরীর কতোটা বড় তার উপর। তিনি বলছেন, বাচ্চারা না পারলে উদ্ধারকারী ডুবুরি তার পাশাপাশি সাঁতার কাটার সময় এটি বহন করতে পারে।

“প্রত্যেকটি বাচ্চার সাথে অন্তত একজন কি দুজন উদ্ধারকারী ডুবুরি থাকতে হবে। এসময় বাচ্চারা যাতে আতঙ্কিত হয়ে না পড়ে সেটা তারা নিশ্চিত করবেন,” বলেন তিনি।

এসময় বাচ্চাদেরকে ডুবুরিদের শরীরের সাথেও দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে যাতে তারা গুহার ভেতরে দ্রুত গতিতে বয়ে যাওয়া ঘোলা পানিতে হারিয়ে না যায়।

মি. গ্রাস বলেন, “এখানে একটা বাড়তি সুবিধা হচ্ছে যে বাচ্চারা খুব কম বয়সের। কেউ যখন ছোট থাকে তারা এধরনের জিনিসকে অ্যাডভেঞ্চার হিসেবে নেয়।”

 

বাচ্চারা হয়তো পানির নিচে একটানা দশ থেকে ১৫ মিনিট থাকতে পারবে। তাই দেখতে হবে গুহার কোথায়া কোথায় কতোটুকু রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে।

বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে সেখান থেকে আবার গুহার মুখে ফিরে আসতে বাচ্চাদের সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা। তার মধ্যে ৬ ঘণ্টা লেগেছে বাচ্চাদের কাছে যেতে আর পাঁচ ঘণ্টা ফিরে আসতে।

গুহার ভেতর থেকে যখন পানি পাম্প করে বের করে আনার কাজ চলছে তখন মি. গ্রাসের অভিমত হলো বাচ্চাদেরকে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে বের করে আনা।

“বর্ষাকাল যখন আসছে, তখন কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না যে আসলে পানির উচ্চতা আরো কতোটা বেড়ে যেতে পারে।”

অপেক্ষা করা

আরেকটা উপায় হচ্ছে বাচ্চাদের গুহার ভেতরে অপেক্ষা করা। কারণ পাম্প করে পানি গুহার বাইরে ফেলা হচ্ছে। পানির স্তর যখন নিচে নেমে যাবে তখন তারা নিজেরাই পায়ে হেঁটে নিরাপদে বের হয়ে আসতে হবে।

কিন্তু এই সময় ধরে তাদের কাছে নিয়মিত খাবার দাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দিতে হবে।

চব্বিশ ঘণ্টা ধরে পানি পাম্প করার কাজ চলছে। বের করে আনা হচ্ছে লাখ লাখ লিটার পানি। বলা হচ্ছে, এখনও পর্যন্ত ঘণ্টায় এক সেন্টিমিটার করে পানি কমছে।

 

কিন্তু পানি যতোই বের করে আনা হচ্ছে, ঠিক ততোই পানি পাহাড়ের বিভিন্ন নালা দিয়ে গুহার ভেতরে এসে পড়ছে। আর সবচেয়ে বড় ভয়ের ব্যাপার হচ্ছে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় তাহলে বাচ্চারা এখন যেখানে আছে সেই জায়গাটিও প্লাবিত হয়ে যেতে পারে।

গুহাটি যে প্রদেশের সেখানকার গভর্নর নারংসাক ওসোতানাকরণ বলেছেন, “তাদেরকে এখন পানির সাথে প্রতিযোগিতা করে লড়তে হচ্ছে।”

“আমাদের জন্যে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো আবহাওয়া। আমরা হিসেব করে দেখছি বৃষ্টির আগে আমাদের হাতে কতো দিন, আর কতো ঘণ্টা সময় আছে,” বলেন তিনি।

পাহাড়ে ছিদ্র করা

গুহার ভেতরে পাহাড়ের গায়ে ছিদ্র করে কর্তৃপক্ষ তার ভেতর থেকে পানি বের করে আনার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পাহাড়টি এতো কঠিন ও শক্ত পাথর দিয়ে তৈরি যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

কেউ কেউ বলেছেন, ছিদ্র করে সেখান থেকে বাচ্চাদেরকে হেলিকপ্টারে করে বের করে নিয়ে আসা যায় কিনা।

কিন্তু এটা করতে হলে তার আগে গুহার উপরে নতুন নতুন রাস্তা বানাতে হবে। ওই রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে ড্রিলিং করার যন্ত্রপাতি। কিন্তু তার জন্যে অনেক সময়ের প্রয়োজন।

 

এছাড়াও ওই পাহাড়ের গঠন জরিপ করে দেখতে হবে। তাছাড়া সেখানে গর্ত করা সম্ভব হবে না। তাছাড়াও দেখতে হবে কোথায় কতোটুকু গর্ত করলে বাচ্চাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব। সেখানে গর্ত করা যাবে কিনা সেটাও পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

গুহার ভেতরে কী বিপদ

আটকে পড়া বাচ্চাদের বয়স ১১ থেকে ১৬। তাদের কোচের বয়স ২৫। তারা সেখানে আছে পাথরের তৈরি সংকীর্ণ একটি জায়গায়। সেখানকার পরিবেশ ভেজা। হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে তাদেরকে শুষ্ক এবং উষ্ণ রাখতে হবে।

উপর থেকে পাথর পড়ার ঝুঁকিও আছে। তবে সবচেয়ে বড়ো উদ্বেগ হচ্ছে পানির স্তর বেড়ে যাওয়া। ঝড়বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যেতে পারে। প্রবেশ মুখের কাছে পানি বেড়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ভেতরে বাতাসের সরবরাহ।

বাচ্চারা যেখানে আছে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা নিয়েও আছে উদ্বেগ। কর্মকর্তারা বলছেন, সেখানকার বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা ২১% থেকে ১৫%-এ নেমে গেছে।

উদ্ধারকারীরা ইতোমধ্যে তাদের কাছে অক্সিজেনের ১০০টি ট্যাঙ্ক পৌঁছে দিয়েছেন।

 

তাদেরকে কী সাহায্য দেওয়া হচ্ছে

সবার আগে খাবার। তারপর ওষুধপত্র। নিরাপদ খাবার পানি এবং প্যারাসিটামল।

উদ্ধারকারীরা এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন শিশুদের শারীরিক পুষ্টির উপর। আগামী সাত দিন এই বাচ্চারা প্রতিদিন যা গ্রহণ করবে তার মধ্যে আছে:

  • ভিটামিন মেশানো মিনারেল ওয়াটার- একেকজন ১ হাজার মিলি করে
  • ওষুধ মিশ্রিত তরল খাবার- একেকজন ১ হাজার মিলি করে

কর্মকর্তারা বলছেন, এই দলের বেশিরভাগ শিশুই সুস্থ আছে। তবে তাদের কেউ কেউ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের সাথে একজন ডাক্তার এবং একজন নার্সও আছেন। তাদেরকে সরিয়ে আনার জন্যে কারা শারীরিকভাবে প্রস্তুত কিনা সেবিষয়ে তারা মতামত দেবেন।

কিন্তু এর মধ্যে ডুবুরিরা গুহার ভেতরে আরো কয়েকশো বাতাসের ট্যাঙ্ক নিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে তারা একটি বেহ ক্যাম্প তৈরি করার চেষ্টা করছেন।

 

মানসিক অবস্থা

বাচ্চাদের কাছে হয়তো টর্চ, লাইট এবং মোবাইল ফোন ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা গত দুসপ্তাহ ধরে অন্ধকারে অবস্থান করছে।

ফলে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে আলো পৌঁছে দিচ্ছেন। সেখানে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন সংযোগ স্থাপনেরও চেষ্টা করছেন তারা যাতে বাচ্চারা তাদের বামা মায়ের সাথে কথা বলতে পারে।

“শিশুদের মানসিক অবস্থা ভালো আছে,” জানিয়েছেন বেলজিয়ান ডুবুরি বেন রেমেন্যান্টস, যিনি এই উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করছেন।

 

সূত্র, বিবিসি

Facebook Comments Box


এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Exchange Rate

Exchange Rate EUR: Thu, 21 Nov.

সর্বশেষ খবর



Agrodristi Media Group

Advertising,Publishing & Distribution Co.

Editor in chief & Agrodristi Media Group’s Director. AH Jubed
Legal adviser. Advocate Musharrof Hussain Setu (Supreme Court,Dhaka)
Editor in chief Health Affairs Dr. Farhana Mobin (Square Hospital, Dhaka)
Social Welfare Editor: Rukshana Islam (Runa)

Head Office

UN Commercial Complex. 1st Floor
Office No.13, Hawally. KUWAIT
Phone. 00965 65535272
Email. agrodristi@gmail.com / agrodristitv@gmail.com

Bangladesh Office

Director. Rumi Begum
Adviser. Advocate Koyes Ahmed
Desk Editor (Dhaka) Saiyedul Islam
44, Probal Housing (4th floor), Ring Road, Mohammadpur,
Dhaka-1207. Bangladesh
Contact: +8801733966556 /+8801316861577

Email Address

agrodristi@gmail.com, agrodristitv@gmail.com

Licence No.

MC- 00158/07      MC- 00032/13

Design & Devaloped BY Popular-IT.Com
error: দুঃখিত! অনুলিপি অনুমোদিত নয়।