অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ প্রাণঘাতী বিভিন্ন রোগজীবাণু দিনে দিনে শক্তিশালী হচ্ছে। অর্জন করছে ওষুধপ্রতিরোধী ক্ষমতা। এসব জীবাণু দমনে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। জাপানে অনুষ্ঠিত জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে গতকাল শুক্রবার এ বক্তব্য দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে একজন রোগীর শরীরে এমন একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে, যা সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেও দমন সম্ভব হচ্ছে না। সব ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধে সক্ষম জীবাণু শনাক্তকরণের বিষয়টি নিয়ে মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গত বৃহস্পতিবার যথেষ্ট উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ওই ৪৯ বছর বয়সী নারীর মূত্রনালিতে সংক্রমণ শনাক্ত করার মাধ্যমে ‘ওষুধপ্রতিরোধী শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়ার উত্থানের’ ইঙ্গিত মিলেছে। কারণ, কোলিস্টিন নামের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগেও ওই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অথচ এটি অত্যন্ত শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য সর্বশেষ ওষুধ হিসেবে পরিচিত।
চিকিৎসা ক্ষেত্রের এই সংকটময় ঘটনাটি এখন রাজনৈতিক গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্বনেতাদের কাছে। জাপানে জি-৭ সম্মেলনে ডেভিড ক্যামেরনের বক্তৃতাই তার প্রমাণ। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোগজীবাণুর ওষুধপ্রতিরোধী সামর্থ্য মোকাবিলার জন্য নেতৃস্থানীয় দেশগুলোকে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমাতে হবে এবং নতুন নতুন ওষুধ বানানোর জন্য ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত করতে হবে।
ক্যামেরন জাপানে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না। তার মানে যক্ষ্মা বা টিবি, ধনুষ্টংকার, পচনের মতো সাধারণ সংক্রমণেই লোকজনের মৃত্যু হচ্ছে। অথচ এসব সংক্রমণ মানেই মৃত্যু নয়। এ বিষয়ে আমরা যদি কোনো ব্যবস্থা না নিই, বিশ্ব অর্থনীতির ১ লাখ কোটি (১০০ ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলার ক্ষতি হবে। পাশাপাশি আমরা যাকে আধুনিক ওষুধ বলে জানি, সেটার কার্যকারিতারও অবসান ঘটবে।’
এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের একটি পর্যবেক্ষণ গত সপ্তাহে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, রোগজীবাণুরোধী নতুন ওষুধ তৈরি ও বাজারজাতকরণে যেকোনো সাফল্যের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি ডলার পুরস্কার দেওয়া উচিত। আর রোগজীবাণুর শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধির সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণ না করলে এদের ওষুধপ্রতিরোধী ক্ষমতার প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে বছরে বাড়তি ১ কোটি মানুষ প্রাণ হারাবে।
রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে কোলিস্টিনের অকার্যকারিতা ধরা পড়ার ঘটনা এবারই প্রথম না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তটি বিশ্ববাসীকে নতুন করে সচেতন করার উপলক্ষ মনে করছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাঁরা গত বছর চীনে একটি নতুন জিন শনাক্তকরণের পরও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ওই জিনটি ব্যাকটেরিয়াকে ওষুধপ্রতিরোধী সামর্থ্য অর্জনে সহায়তা করে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত ইউরোপ এবং কানাডায়ও এ ধরনের সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
কোলিস্টিনের বিরুদ্ধে রোগজীবাণুর প্রতিরোধ গড়ে ওঠার জন্য বিজ্ঞানীরা দায়ী করছেন গবাদিপশুর ওপর বিভিন্ন ওষুধের বহুল প্রয়োগের বিষয়টিকে। পশুপাখির খামারে ব্যবহৃত ওষুধপথ্যের ৬৫ শতাংশ কমানোর জন্য ইউরোপীয় ওষুধ সংস্থা গত বৃহস্পতিবার আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক টমাস ফ্রাইডেন বলেন, রোগজীবাণুর ওষুধপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা যত নজর দিচ্ছি, ততই উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকর ওষুধ পাওয়াই যাচ্ছে না। জরুরি ব্যবস্থা না নিলে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের দিন ফুরাবে।