আ.হ.জুবেদঃ ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায়ে শোকরানা মাহফিল এর আয়োজন করেছে প্রবাসী সোনাগাজী জনকল্যাণ সংস্থা, কুয়েত।
শুক্রবার রাত ৯টায় কুয়েতের ফরওয়ানিয়া এলাকার এক রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত শোকরানা মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক শাহজান সবুজ।
সংগঠনের সদস্য সচিব নুরুল আলম রুবেলের পরিচালনায় এতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আজিজ উদ্দিন মিন্টু, তুহা মিলন,আব্দুল কাদের, মোস্তফা ফারুকি প্রমুখ।
বক্তব্য রাখেন, কুয়েত প্রবাসী নুসরাত এর ভাই নাহিয়ান আরমান, চাচা হারুনুর রশিদ হেলাল, হাসান কামাল, আনোয়ার হুসেন, মুমিন উল্লাহ্ পাটুয়ারীসহ অনেকে।
নুসরাতের কুয়েত প্রবাসী ভাই নাহিয়ান আরমান বক্তব্যে বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে আমরা খুশি, তবে এটি যতদিন না কার্যকর হবে; ততদিন পর্যন্ত আমি ও আমার পরিবার পুরোপুরি সন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারছি না।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তে পিবিআইয়ের ভূমিকার প্রশংসা করে নুসরাতের প্রবাসী ভাই নাহিয়ান বলেন, মামলা রায়ের পর থেকেই কয়েকজন প্রভাবশালী আসামির পক্ষের লোকজন বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পরিবারের জানমালের নিরাপত্তা চাই।
অন্যদিকে, প্রবাসী সোনাগাজী জনকল্যাণ সংস্থা, কুয়েতের নেতৃবৃন্দরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নুসরাত হত্যা মামলার রায় কার্যকরের জোর দাবি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে যৌন হয়রানি করেন।
এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে রাফির পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়।
৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যায় রাফি। এ সময় বোরকা পরিহিত কয়েকজন তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হলে রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় তারা।
এতে রাফির পুরো শরীর দগ্ধ হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
রাফি হত্যা মামলায় পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ২১ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করে। পরে ২৯ মে ১৬ জনকে আসামি করে ৮০৮ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।
চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
৩০ মে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ১০ জুন আদালত মামলাটি আমলে নিলে শুনানি শুরু হয়। ২০ জুন অভিযুক্ত ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারিক আদালত।
২৭ ও ৩০ জুন মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানকে জেরার মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হয়। এরপর ৯২ সাক্ষীর মধ্যে ৮৭ জন সাক্ষ্য দেন আদালতে।
অবশেষে ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাসহ ১৬ আসামিরই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এই টাকা আদায় করে নুসরাতের পরিবারকে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন আদালত।
২৪শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা, নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের, জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, হাফেজ আবদুল কাদের, আবছার উদ্দিন, কামরুন নাহার মনি, উম্মে সুলতানা ওরফে পপি ওরফে তুহিন ওরফে শম্পা ওরফে চম্পা, আবদুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন, মোহাম্মদ শামীম, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সহসভাপতি রুহুল আমীন ও মহিউদ্দিন শাকিল।