২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের ফাইনালে খেলার আশা পূরণ হলো না বাংলাদেশের।
দ্বিতীয় মিনিটেই সুবর্ণ সুযোগ কড়া নাড়ল দরজায়। সাড়া দিতে পারলেন না শেখ মোরসালিন। এরপর গোললাইন থেকে হেড ফিরিয়ে দলের ত্রাতা ইসা ফয়সাল। আনিসুর রহমান জিকোও পোস্ট আগলে রাখলেন দারুণ দৃঢ়তায়। দ্বিতীয়ার্ধে ভাগ্য সহায় হলো না, রাকিব হোসেনের শট ফিরল ক্রসবার কাঁপিয়ে। অতিরিক্ত সময়ে এসে গোল হজম করে বসল বাংলাদেশ। শক্তিশালী কুয়েতের চোখে চোখ রেখে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত সঙ্গী হলো হারের বিষাদ।
বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শনিবার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে প্রথম সেমি-ফাইনালে ১-০ গোলে হেরে যায় বাংলাদেশ। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া গোলটি করেন আব্দুল্লাহ আল বোলৌশি।
২০০৯ সালের পর সাফে সেমি-ফাইনালে প্রথম উঠেছিল বাংলাদেশ। হাভিয়ের কাবরেরার দলের সামনে হাতছানি ছিল ২০০৫ সালের পর প্রথম ফাইনালে ওঠার। কিন্তু দুর্দান্ত লড়াই করেও পারলেন না জামাল-জিকোরা। অতিথি দল হিসেবে সাফে প্রথম খেলতে এসেই ফাইনালের মঞ্চে উঠল কুয়েত।
থামল দারুণ পথচলা
ভারতীয় কিংবদন্তি সুনিল ছেত্রির চোখে এবারের সাফের সবচেয়ে কঠিন প্রতিপক্ষ কুয়েত। তাদের বিপক্ষে হেরে পথচলা থামল বাংলাদেশের। মধ্যপ্রাচ্যের দলটি অজেয় থাকল জামাল-জিকোদের কাছে। দুই দলের প্রথম দেখা ১৯৭৩ সালে, মারদেকা কাপের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। পরের মুখোমুখি ১৯৮৬ সালের এশিয়ান গেমসে, সেবার সঙ্গী হয়েছিল ৪-০ গোলের হারের বিষাদ।
সাফের আরেক অতিথি দল লেবাননের কাছে ২-০ গোলের হার দিয়ে আসর শুরু বাংলাদেশের। তবে পরের দুই ম্যাচে মালদ্বীপ ও ভুটানের বিপক্ষে চোখ জুড়ানো ফুটবলই উপহার দেয় দল। দুই ম্যাচের চিত্রনাট্য একই। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ৩-১ গোলের জয় তুলে নেওয়ার আনন্দ সঙ্গী দলের। ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ হয়ে উঠে আসা সেরা চারের মঞ্চে; ২০০৯ সালের পর প্রথমবার।
২০০৩ সালে সাফে নিজেদের একমাত্র শিরোপা জেতা বাংলাদেশ সবশেষ ফাইনাল খেলে পরের আসরে, ২০০৫ সালে। দেড় যুগ পর ফের ফাইনালের মঞ্চে ওঠার হাতছানি ছিল। কিন্তু কুয়েতকে কয়েক দফায় কাঁপিয়ে দিয়েও পারল না কাবরেরার দল।
শুরুর একাদশে ফিরলেন তারিক
মালদ্বীপ ম্যাচে দারুণ এক গোল করার পর চোট পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন কাজী তারিক রায়হান। ডান পায়ের হাঁটু ও গোড়ালির মাঝামাঝি পাওয়া ওই চোটে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে খেলতে পারেননি এই ডিফেন্ডার। কুয়েত ম্যাচের সেরা একাদশে ফিরেছেন তারিক। তাকে জায়গা দিয়ে বেঞ্চে ফিরেছেন রহমত মিয়া। অন্য দিকে সাত পরিবর্তন এনে বাংলাদেশ ম্যাচের একাদশ সাজান কুয়েত কোচ রুই বেন্তো।
সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট মোরসালিনের
দ্বিতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার আনন্দে ডানা মেলতে পারত বাংলাদেশ। ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা রাকিব হোসেনের নিখুঁত আড়াআড়ি ক্রসে বল এক ডিফেন্ডারের পায়ে ফাঁক গলে যায় ফাঁকায় থাকা শেখ মোরসালিনের পায়ে। এমন সুযোগ অবিশ্বাস্যভাবে তিনি নষ্ট করেন গোলরক্ষকের গায়ে মেরে! এরপর ফিরতি বল পেলেও তালগোল পাকিয়ে কাজে লাগাতে পারেননি মালদ্বীপ ও ভুটান ম্যাচে জালের দেখা পাওয়া মোরসালিন।
ইসার দুর্দান্ত সেভ
সপ্তম মিনিটে শক্তিশালী কুয়েত হানা দিয়েছিল বাংলাদেশের রক্ষণে। কর্নারের পর কয়েক পা ঘুরে যায় ইদ আল রশিদের পায়ে। তার ক্রসে বক্সের জটলার ভেতর থেকে সালমান মোহাম্মদের হেড গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করে দলের ত্রাতা ইসা ফয়সাল।
২০তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ট্যাকলে মাঠে শুয়ে পড়েন রাকিব। ছটফট করতে থাকেন। এদিকে ডাগআউটে গা গরম করতে শুরু করেন ফয়সাল আহমেদ ফাহিম। তবে চিকিৎসা নিয়ে রাকিব উঠে দাঁড়ালে স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। আট মিনিট পর দূরপাল্লার শচে চেষ্টা করেছিলেন তিনি, কিন্তু বল জমে যায় গোলরক্ষকের গ্লাভসে।
জিকো-ইসার দৃঢ়তা
সময় গড়ানোর সাথে সাথে কুয়েতের আক্রমণের ধার বাড়তে থাকে। তবে রক্ষণে দৃঢ়তা ধরে রাখে বাংলাদেশ। পোস্টের নিচে আনিসুর রহমান জিকোও ছিলেন বিশ্বস্ততা নিয়ে। ২৯ মিনিটে আল রশিদির শট জিকো অনেকটা লাফিয়ে এক হাতে ফিস্ট করার পর দ্রুত হেডে ক্লিয়ার করেন ইসা।
পরের মিনিটেই বাঁ দিক থেকে মোরসালিন ক্রস বাড়িয়েছিলেন বক্সে। রাকিব পাহারায় রাখা ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বল ছুটছিল জালের দিকে, তবে আটকান গোলরক্ষক আব্দুল রহমান মারজুক। এরপর আলি মুহাইসেনকে তুলে মাহাদি দাস্তিকে নামান কুয়েত কোচ।
৪০তম মিনিটে আল রশিদির শট ঝাঁপিয়ে কর্নার করে দেন জিকো। প্রথমার্ধে কুয়েতের এই ২৪ বছর বয়সী রাইট উইঙ্গার সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। বিরতির বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে বাইলাইনের একটু উপর থেকেই শট নিয়েছিলেন রাকিব, আটকান গোলরক্ষক।
রাকিবকে আটকাল ক্রসবার
সুযোগ পেলেই কুয়েতের রক্ষণে হানা দিচ্ছিলেন রাকিব। ৬০তম মিনিটে আবারও দারুণ সুযোগ পেলেন এই ফরোয়ার্ড। মাঝমাঠের একটুউপর থেকে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে জামাল বাড়ান মোরসালিনকে। তিনি পাস দেন রাকিবকে। কিছুটা এগিয়ে কোনাকুণি শট নেনে ২৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড, কিন্তু বল ক্রসবার কাঁপিয়ে ফিরে।
খানিক পর বক্সের একটু বাইরে থেকে আল দেফেরির ফ্রি কিক ফিস্ট করেন আটকান জিকো। ৬৩তম মিনিটে আল রশিদির শট জিকো আটকানোর পর দ্রুত ক্লিয়ার করেন তারিক।