
পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে যুগোপযোগী পরিবর্তন আনতে কুয়েতের ফ্যামিলি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড পার্সোনাল স্ট্যাটাস ল’জ রিভিউ কমিটি ১৯৮৪ সালের ৫১ নম্বর পার্সোনাল স্ট্যাটাস আইনের খসড়া সংশোধনী তৈরি করেছে। কমিটি শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে।
নতুন খসড়াটি বর্তমানে ১৩টি সরকারি সংস্থার মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এই খসড়ায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে খোরপোষ ও এর নিয়ন্ত্রণ, বিয়ের সম্মতি, দেনমোহর, খুলা তালাক, সন্তানের অভিভাবকত্ব (কাস্টডি), এবং দেখা-সাক্ষাৎ (ভিজিটেশন) ও রাতে থাকার অধিকার (ওভারনাইট স্টে)।
বিয়ে ও সম্মতি: খসড়া আইন অনুযায়ী, কোনো নারীর অনুমতি ছাড়া তার বিয়ে অবৈধ বলে গণ্য হবে। বিয়ের জন্য নারীর সুস্পষ্ট সম্মতি আবশ্যক। যদি তিনি সম্মতি দেন, তাহলে তিনি বিয়ের চুক্তিতে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত যুক্ত করতে পারবেন।
খোরপোষ: খোরপোষের বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে এবং তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রয়োজন, জীবনযাত্রার ব্যয়, অর্থ প্রদানকারীর আর্থিক অবস্থা, সময়, স্থান, সামাজিক প্রথা, রাষ্ট্রীয় সেবা এবং অন্যান্য সহায়তা। এ বিষয়ে বিস্তারিত নিয়মাবলী নির্বাহী প্রবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
খুলা তালাক: স্ত্রীর পক্ষ থেকে শুরু হওয়া ‘খুলা’ (খুলা তালাক) কে এখন আর তালাক হিসেবে গণ্য না করে বিবাহবিচ্ছেদ (ডিসসোলিউশন) হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এটি মোট তালাকের সংখ্যা কমাবে না। খসড়া অনুযায়ী, কোনো স্ত্রী যদি দেনমোহর ও বিয়ের খরচ ফেরত দেন এবং বোঝাপড়া অসম্ভব হয়, তাহলে তিনি বিয়ের আগে বা সহবাসের আগে বিবাহ বাতিলের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও, যদি স্বামী সহবাসের আগে দেনমোহর দিতে ব্যর্থ হন, তাহলেও স্ত্রী বিবাহ বাতিল করার অনুমতি পাবেন।
ইদ্দতকালীন ভরণপোষণ: ইদ্দতকালীন (অপেক্ষা período) সময়ে ভরণপোষণ কেবল সেই নারীরা পাবেন, যাদের সাথে স্বামী-স্ত্রীর পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনযোগ্য তালাক হয়েছে, অথবা যেসব গর্ভবতী নারী অপরিবর্তনীয় তালাক, বিবাহ বাতিল, বা অবৈধ বিয়ের কারণে ইদ্দতকালীন অবস্থায় আছেন। বিধবারা এই সময়ের মধ্যে দাম্পত্য বাড়িতে থাকার অধিকার পাবেন।
সন্তানের অভিভাবকত্ব (কাস্টডি): নতুন খসড়ায় ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুদের অভিভাবকত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা লিঙ্গ বা মানসিক সক্ষমতা নির্বিশেষে সবার জন্য প্রযোজ্য। যখন বাবা-মা বিবাহিত থাকবেন, তখন উভয়েরই যৌথ অভিভাবকত্ব থাকবে। বিচ্ছেদের পর অভিভাবকত্বের অগ্রাধিকার প্রথমে মায়ের, তারপর বাবার, এরপর বাবার মায়ের, তারপর মায়ের মায়ের এবং সবশেষে আদালতের বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে। আদালত চাইলে ১২ বছর বয়স হলে সন্তানের অভিভাবকত্ব বাবাকে হস্তান্তর করতে পারেন।
আইন অনুযায়ী, দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের অভিভাবকত্ব মায়ের কাছেই থাকবে, এমনকি যদি তিনি এমন কাউকে বিয়ে করেন যিনি সন্তানের জন্য মাহরাম (রক্তের সম্পর্কের বাইরের পুরুষ অভিভাবক) নন অথবা ধর্ম ভিন্ন।
দেখা-সাক্ষাৎ ও রাতে থাকার অধিকার: সন্তানের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের অধিকার, যার মধ্যে রাতে থাকা অন্তর্ভুক্ত, শুধুমাত্র বাবা-মা, দাদা-দাদি/নানা-নানি এবং সন্তানের ছেলে-মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। যদি কোনো একজন অভিভাবক মারা যান বা অনুপস্থিত থাকেন, অথবা শিশু যদি বাবা-মা ছাড়া অন্য কারো কাছে থাকে, তাহলে আদালত নিকটাত্মীয়দের জন্য দেখা-সাক্ষাতের অধিকার নির্ধারণ করতে পারেন।
প্রয়োজনিয় তথ্য:
- নতুন খসড়া অনুযায়ী: বিচ্ছেদের পর সন্তানের অভিভাবকত্বের ক্রম হলো: মা, বাবা, বাবার মা, তারপর মায়ের মা।
- পুরোনো আইন অনুযায়ী: বাবার স্থান ছিল সপ্তম, এবং অভিভাবকত্বের ক্রম ছিল: মা, মায়ের মা, মায়ের বোন, বাবার মা, বাবা, ভাই-বোন, বাবার বোন, ভাতিজি এবং অন্যান্য।
এই সংশোধনীগুলো বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পর্যালোচনার অধীনে আছে এবং এরপর তা পার্লামেন্টে পেশ করা হবে।

আ হ জুবেদ (সম্পাদক,অগ্রদৃষ্টি)