
কুয়েতে এখন থেকে বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের জন্য সরাসরি জেল নয়, বরং দেওয়া হবে সমাজের সেবা করার সুযোগ। নতুন একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে, কুয়েতের বিচারকরা এখন থেকে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারীদের জন্য কারাদণ্ডের পরিবর্তে কমিউনিটি সার্ভিস ও পুনর্বাসন কর্মসূচির রায় দিতে পারবেন। এর মূল লক্ষ্য হলো, অপরাধীদের আচরণ পরিবর্তন করা, সমাজকে সুরক্ষিত রাখা এবং দায়িত্বশীলতার একটি সংস্কৃতি তৈরি করা।
প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ ফাহাদ আল-ইউসুফের স্বাক্ষরিত এই সিদ্ধান্তটি রোববার অফিসিয়াল গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। এতে ট্রাফিক অপরাধের জন্য কারাদণ্ডের বিকল্প হিসেবে ৪৬ ধরনের কমিউনিটি সার্ভিসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আইনের মূল ভাবনাটি খুবই সহজ: যারা সড়কে মানুষের জীবন বিপন্ন করে, তাদের উচিত সমাজের প্রতি কিছু ফিরিয়ে দেওয়া এবং যে ক্ষতি তারা করেছে, তা মেরামত করা।
নতুন আইন অনুযায়ী, অপরাধীরা সমুদ্র সৈকত পরিষ্কার করা, গাছ লাগানো, বা জনসমাগমের স্থান থেকে আবর্জনা সরানোর মতো কাজে অংশ নিতে পারে। এছাড়া কবরস্থান ও শেষকৃত্যের কাজে সাহায্য করা, ফুটপাত ও রাস্তার সাইন রক্ষণাবেক্ষণ করা, বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা কাজে সহায়তার মতো দায়িত্বও তাদের দেওয়া হতে পারে।
ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোও এই উদ্যোগের মাধ্যমে উপকৃত হবে। অনেক অপরাধীকে মসজিদ পরিষ্কার করা, কোরআন সাজিয়ে রাখা, স্কুলের লাইব্রেরিতে সহায়তা করা বা শিক্ষার্থীদের সচেতনতা প্রচারে সাহায্য করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
এছাড়াও, কিছু অপরাধী সামাজিক উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোতে কাজ করতে পারে, সমবায় সমিতির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করতে পারে, অথবা দাতব্য ও মানবিক প্রকল্পগুলোতে অবদান রাখতে পারে। এমনকি পেট্রোল পাম্পে কাজ করার কথাও এই তালিকায় রয়েছে।
শুধু শারীরিক শ্রম নয়, অনেক অপরাধীকে সচেতনতা ও পুনর্বাসন কর্মসূচিতেও অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসা, মনস্তাত্ত্বিক, সামাজিক বা ধর্মীয় বিষয়ক বক্তৃতা, কর্মশালা বা কাউন্সেলিং সেশন। এই সেশনগুলোর উদ্দেশ্য হলো বেপরোয়া গাড়ি চালানোর পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা, যেমন: হঠকারিতা, অবহেলা বা বিপদের বিষয়ে সঠিক জ্ঞানের অভাব।
নতুন আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জবাবদিহিতা। ট্রাফিক অপরাধের কারণে যারা ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাদের তা মেরামত করতে হবে। এতে করে এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন কোনো বিমূর্ত অপরাধ নয়, বরং এটি মানুষ, সম্পত্তি ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
এই ব্যবস্থার লক্ষ্য সংশোধন হলেও, এর কিছু কঠোর শর্তও রয়েছে। যে সংস্থাগুলো কমিউনিটি সার্ভিসের আয়োজন করবে, তাদের প্রতিটি অপরাধীর কাজ সম্পর্কে রিপোর্ট করতে হবে। যারা নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা করবে, তাদের আবারও আদালতে পাঠানো হবে এবং মূল কারাদণ্ড কার্যকর করা হবে।
এক কথায়, এই আইনটি একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: ইতিবাচক অবদান রাখা অথবা কারাবাস ভোগ করা। ১৬টি সরকারি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, যেমন স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গণপূর্ত ও সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়, এই উদ্যোগে অংশ নেবে।
কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য শুধু শাস্তি দেওয়া নয়, বরং পরিবর্তন আনা। এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার আশা করছে যে সমাজে দায়িত্ববোধ ও আইনের প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি কারাগারের ওপর চাপও কমবে।
বার্তাটি স্পষ্ট: বেপরোয়া গাড়ি চালানো এখন থেকে আর বন্ধ সেলের দিকে নিয়ে যাবে না, বরং সেবা, শিক্ষা এবং মেরামতের একটি খোলা আহ্বানে পরিণত হবে।

আ হ জুবেদ (সম্পাদক,অগ্রদৃষ্টি)