অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুরে পুত্রবধুর কাছে ভাত চাওয়াতে চরমভাবে লাঞ্ছিত ও মারধরে গুরুতর আহত হওয়া সেই বৃদ্ধা মায়ের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন গোলাম রাব্বানী। বাংলাদেশে ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদকের সাথে কথা বলে জানা যায় বিস্তারিত। বিস্তারিত বর্ণনায় তিনি যা বলেছেন তাই হুবুহু পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হলো-
৩ দিন আগে সকালে ফেসবুকে ঢুকেই এক মর্মান্তিক খবরে রীতিমতো শিউরে উঠি। ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের এর এক অশীতিপর বৃদ্ধা তাসলেমা খাতুন (৯৮) ক্ষুধার তাড়নায় বৌমা’র কাছে ভাত খেতে চাওয়ায় তাঁর নাড়ী ছেঁড়া (কু)সন্তান, বদরুদ্দীন (৬০) ও বউমার নির্যাতনে রক্তাক্ত হতে হয়। ছেলের লাঠির আঘাতে বাম চোখের নিচে থেতলে গিয়ে গুরুতর আহত হন শতবর্ষী মা!
বৃদ্ধা মায়ের রক্তাক্ত মুখের ছবি দেখে না চাইতেও চোখ ভিজে গেলো, গলা ধরে এলো।আর ঐ মুহুর্তে বদরুদ্দিন এর প্রতি কতটা ক্রোধ-আক্রোশ ছিলো, তা বলে বুঝানো যাবে না।
নিউজটা শেয়ার করে ফোন করলাম, সংশ্লিষ্ট হরিপুর থানার ওসি রুহুল ভাইকে। ঘটনা শুনেছেন বলে তিনি আশ্বস্ত করলেন ঐ অমানুষটাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। এরপর কথা হলো জেলা ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক, পুলকের সাথে। ছাত্রলীগ দায়িত্ব নিয়ে তাসলেমা খাতুন এর চিকিৎসা করতে ও পলাতক বদরুদ্দিনকে খুঁজে থানায় সোপর্দ করতে নীতিগত ভাবে প্রস্তুত ছিলো। ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগকে সে অনুযায়ী নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।
এর মাঝেই ঘটনাটি জেলায় ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়িত হলো। জানতে পারলাম, ঠাকুরগাঁও এর মহৎপ্রাণ জেলা প্রশাসক, আব্দুল আওয়াল সংবাদকর্মীদের নিয়ে চলে গেলেন বৃদ্ধার বাড়িতে, নিজে কোলে তুলে গাড়ীতে তুললেন আহত বৃদ্ধা মা কে, এখন সেই মা ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ডিসি ও সিভিল সার্জনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন।
ওদিকে সন্তানের গ্রেপ্তার এর খবর শুনে হাসপাতালের বিছানায় শুনেই, পুলিশ তাকে মারবে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেছেন মা। হায়রে মায়ের জাত!
একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কাল রাতে আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলেও তাদের সদয় সম্মতি পেলাম। কিছুক্ষণ আগে কথা বললাম ঠাকুরগাঁও জেলার ডিসি মহোদয় আব্দুল আওয়াল ভাই, জেলা ছাত্রলীগ এর সাধারণ সম্পাদক সানোয়ার পারভেজ পুলক, ইত্তেফাক এর ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানু ভাই ও আমাদের রা.বি ছাত্রলীগ এর সাবেক নেতা সাইফুর রহমান বাদশা ভাই এর সাথে। সবার সহযোগিতাপূর্ণ আশ্বাস পেলাম। এক মায়ের সন্তান হিসেবে আরেক মা তাসলেমা খাতুন এর চিকিৎসা পরবর্তী পুনর্বাসন ও ভরণপোষণ এ দায়িত্ব নিয়ে পাশে থাকতে চাই।
তাকে ঢাকা আসার প্রস্তাব দিলাম, আওয়াল ভাই জানালো, জীবনে কখনওই ঠাকুরগাঁও এর বাইরে না যাওয়া বৃদ্ধা মা ঢাকায় এভাবে থাকতে পারবে না। একটু সুস্থ হলে তাকে ডিসি মহোদয় নিজ দায়িত্বে তাকে ঠাকুরগাঁও এর একটি বৃদ্ধাশ্রমে পুনর্বাসন এর ব্যবস্থা করবেন।
বাদশা ভাই এর মাধ্যমে একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে প্রতি মাসে মা’এর ভরণপোষণ এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। বাদশা ভাই মাসের ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে সে অর্থ সরাসরি বৃদ্ধা মায়ের কাছে পৌছে দেবেন। আর বৃদ্ধাশ্রম এর দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে তার সুবিধা-অসুবিধার নিয়মিত খোঁজখবর রাখার প্রচেষ্টা থাকবে।
এক সন্তান অমানুষ হলে এমন হাজার মায়ের সন্তান আছে একজন ‘মা’ এর দায়িত্ব নেয়ার, দেখভাল করার।
প্লিজ, কেউ মা-কে কষ্ট দেবেন না !!!
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই