অগ্রদৃষ্টি ডেস্কঃ রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে সামরিক নয়, কূটনৈতিক সমাধানে বিশ্বাসী বাংলাদেশ।’
সোমবার সচিবালয়ের তথ্য অধিদফতরে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে সামরিক নয়, কূটনৈতিক তৎপরতায় বিশ্বাসী। দ্বিপক্ষীয় কূটনীতির সঙ্গে আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় তথা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সমাধানের পথেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে পাচ্ছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। যুদ্ধকে আমরা কোনো সমাধান মনে করি না। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক এবং প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ সমস্যার ফলে উদ্ভূত এই সমস্যাকে কূটনৈতিক মুন্সিয়ানার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সমস্যাটি জাতিগত, কোনো ধর্মীয় সমস্যা নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে ফেরত পাঠানো এবং মর্যাদার সঙ্গে তাদের নিজ দেশে পুনর্বাসনই এ সমস্যার একমাত্র সমাধান।’
সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংস ঘটনার সূত্রপাতের পর থেকেই বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কূটনীতির ফলে এরই মধ্যে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। এর সঙ্গে এ যাবৎ জাপান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাতার, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ভাটিক্যান, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ফ্রান্স, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, নরওয়ে, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা, ও আইসি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে যেখানে রোহিঙ্গা নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ; অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধ, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের প্রশংসা করা হয়েছে।’
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এখানেই শেষ নয়, গত ৯ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের ১৫ সদস্যবিশিষ্ট নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস মিয়ানমারের সহিংসতাকে ভয়াবহ বিপর্যয় এবং সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করে তাৎক্ষণিকভাবে সহিংসতা বন্ধ করে নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।’
রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেয়া মানবিক, কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক পদক্ষেপগুলো সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রী।
তিনি জানান, সরকার রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক তিন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। এই পদক্ষেপগুলো নিয়ে সরকার কাজ করছে। এগুলোর মধ্যে কিছু তাৎক্ষণিক, কিছু স্বল্প ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি বলে জানান ইনু।
‘সরকারের দুর্বল কূটনৈতিক তৎপরতার কারণেই রোহিঙ্গা সমস্যা শোচনীয়; ত্রাণ দিতে পারছে না সরকার’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার কথা শুনে মনে হয়, সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার কোনো কিছুই তিনি দেখতে পারছেন না বা দেখতে চাচ্ছেন না।’
জঙ্গিদমন আন্দোলনকে দুর্বল করার জন্য ‘রোহিঙ্গা সমস্যা’ ব্যবহার করাই তার চক্রান্ত। তাতে এটাই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে- কোনো সমাধান তার কাম্য নয়, বরং রোহিঙ্গা সমস্যাকে কেন্দ্র করে সরকারকে ঘায়েল করার এক চক্রান্তের জাল বোনার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন খালেদা জিয়া। সাম্প্রদায়িকতার জিকির তুলে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগ খুঁজছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কামরুন নাহার ছাড়াও তথ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।