ডাক্তার ফারহানা মোবিন: রূচিবর্ধক খাবারগুলোর মধ্যে শুঁটকি মাছ অন্যতম। কাঁচা মাছে লবণ
মাখিয়ে কড়া রোদে শুকানো হয় (বড় ও অধিকাংশ মাছের বর্জ্য
অংশগুলো ফেলে দেওয়া হয়)। তাই মাছের দেহের পানি বা তরল
অংশ শুকিয়ে যায়। ফলে এই মাছে কোনো জীবাণু জন্মাতে পারে না।
তবে শুঁটকি মাছ কৌটায় বন্দী বা স্যাঁতসেঁতে স্থানে রাখলে ফাঙাশ
পড়ে যায়। প্রচুর পরিমাণে রৌদ্রে শুকানো হয় এই মাছ। তাই এতে
ভিটামিন ‘ডি’-এর (সূর্যের আলোতে থাকে ভিটামিন ‘ডি’) পরিমাণ
রয়েছে পর্যাপ্ত অনুপাতে। ভিটামিন ‘ডি’ হাড়, দাঁত, নখের গঠন
মজবুত করার জন্য যথেষ্ট জরূরি।
শরীরে ভিটামিন ‘ডি’-এর অভাবে ছোটদের রিকেটস নামের হাড়ের
অসুখ হয়। রিকেটস হলে শিশুদের লম্বা হাড়ের গঠনে দুর্বলতা ও
সমস্যা থাকে। হাড় হয়ে যায় ভঙ্গুর। এই একই সমস্যা বড়দেরও
হয়। বড়দের ক্ষেত্রে একে আমরা বলি অস্টিওম্যালাসিয়া।
এই অসুখগুলো দূর করতে শুঁটকি মাছের ভূমিকা বেশ গুরূত্বপূর্ণ।
শরীরের জন্য উপকারী অনেক রকম খনিজ লবণ রয়েছে এই মাছে।
খনিজ লবণ আমাদের রক্তশূন্যতা দূর করে, দাঁতের মাড়িকে করে
দৃঢ়। এতে রয়েছে উ‛চমাত্রার আমিষ বা প্রোটিন ও কোলেস্টেরল।
যাঁরা কঠোর দৈহিক পরিশ্রম করেন, তাঁদের জন্য এটি যোগ্য খাবার।
আর যাঁরা বয়স অনুযায়ী অতিরিক্ত মোটা, রক্তে নিপিড বা
কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি, তাঁরা শুঁটকি
মাছ খাবেন না। বাড়ন্ত শিশুদের জন্য ভীষণ উপকারী। তবে সবাই
হজম করতে পারে না। আপনার শিশুর হজমশক্তি বুঝে, প্রথমে অল্প
করে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে পারেন। সম্প্রতি গবেষণায় জানা
গেছে, নিয়মিত শুঁটকি মাছ খায় এমন ব্যক্তিদের ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর, যক্ষ্মা
এই অসুখগুলো সহজে হয় না। তবে অতিরিক্ত ধূমপান বা যেকোনো
প্রকার মাদকদ্রব্য যক্ষ্মার জন্য সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
কিডনি, পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর, ইনফেকশনসহ যেকোনো
জটিলতার জন্য শুঁটকি মাছ বাদ দিন। কারণ, এতে রয়েছে উ‛চমাত্রার
প্রোটিন। লিভার, কিডনি, পিত্তথলিতে সমস্যা থাকলে শুঁটকি মাছের
উ‛চমাত্রার প্রোটিন হয়ে যাবে দেহের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ এই
অঙ্গগুলো দুর্বল হলে এরা উ‛চমাত্রার প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে না।
জন্ডিস, লিভার সিরোসিস, ফ্যাটি লিভারের রোগীরাও এই মাছ বাদ
দিন। গর্ভস্থ ও মাতৃদুগ্ধদানকারী মা, বাড়ন্ত শিশু, খেলোয়াড়,
নৃত্যশিল্পী, ব্যায়ামবিদ, সাঁতারূ এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য শুঁটকি মাছ
যথেষ্ট উপকারী।
এতে আয়রন, আয়োডিনের মাত্রা বেশি থাকার জন্য দেহে রক্ত বাড়ায়,
দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে শক্তিশালী, শরীরের
হরমোনজনিত সমস্যাকে রাখে দূরে।
শুঁটকি মাছ দেহে লবণের ঘাটতিও পূরণ করে। তাই দূর হয় দুর্বলতা।
কিন্তু এই মাছ উ‛চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ হওয়ার জন্য হূদেরাগী,
ডায়াবেটিস ও উ‛চরক্তচাপের রোগীদের জন্য বর্জনীয়।
ডাক্তার ফারহানা মোবিন
স্কয়ার হাসপাতাল
ঢাকা, বাংলাদেশ