নিজস্ব প্রতিবেদকঃ- ঢাকায় বড় দুই দলের কর্মসূচি ঘিরে নানা জল্পনা থাকলেও অবশেষে শান্তিপূর্ণভাবেই নিজ নিজ কর্মসূচি শেষ করেছে তারা। উভয় দলই রাজনৈতিক সংকট শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবারের শঙ্কার সমাবেশ অনেকটাই আশার দুয়ার খুলে দিল বড় দুই দলের সংলাপ বুঝি খুব শিগগিরই হতে যাচ্ছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশন সোমবার দুই দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। বিএনপিকে নয়া পল্টনে এবং আওয়ামী লীগকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। এ ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
কথা রেখেছে দুই দলই। কোনো প্রকার সহিংসতা, উত্তেজনা ছাড়াই দুই দল শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে মঙ্গলবার। শুধু তাই নয় দুই দলের নেতাকর্মীরা তাদের বক্তব্যে পরস্পরের প্রতি আহ্বান ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আসুন দেশকে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে নিয়ে যাই। দেশে নির্বাচন হবে, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচনে একটি জীবনও হত্যার প্রয়োজন হবে না।’
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম কেন্দ্রীয় মসজিদের দক্ষিণ গেইটে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আয়োজিত সমাবেশে মঙ্গলবার বিকেলে তিনি এ কথা বলেন।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আমরাও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, দেশকে আরো শক্তিশালী করব।’
খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৬৪ জন হত্যা ও ১৫ শ মানুষকে আহত করেছেন, ৭শ গাড়ি পুড়িয়েছেন, ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করেছেন কীসের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য! গণতন্ত্রের জন্য মানুষ হত্যা করতে হয় না।’
তিনি বলেন, ‘আপনি (খালেদা জিয়া) চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে অকার্যকর একটি রাষ্ট্রে পরিণত করতে। যাতে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারি। তাই আপনি রক্তের সেই হোলিখেলা খেলেছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের এই অপকর্ম কোনদিন ভুলবে না।’
অপরদিকে নয়া পল্টনে বিএনপি নেত্রী ক্ষমতাসীনদের প্রতি আলোচনা-সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন সংলাপে বসি। কোনো রাগ, ক্ষোভ, দুঃখ নেই আমার। আসুন দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে একসঙ্গে কাজ করি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বে বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ। আমরা সবাই মিলে মিশে থাকতে চাই। তাই আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চাই। গণতন্ত্রের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ দেশের জনগণ কখন জেগে ওঠে বলা যায় না। জনগণ জেগে উঠলে তাদের আর ঠেকানো যাবে না।’ যোগ করেন খালেদা।
দেশে বিভিন্ন স্বৈরশাসনের উদাহরণ টেনে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘ওরা পারেনি আপনারাও টিকতে পারবেন না। একদলীয় শাসনের পথ থেকে ফিরে এসে গণতন্ত্রের পথে আসুন।’
ক্ষমতাসীনদের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের এই বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাই। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম শক্তিশালী স্তম্ভ রাজনৈতিক সহাবস্থান।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর থেকেই দেশে আমরা তাদেরকে (সরকার) সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আজকের এমন বক্তব্য দেশের জন্য একটি সবুজ সংকেত বলা যায়। এর মাধ্যমে দেশে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে।’
এখন বিএনপির পক্ষ থেকে কী করা হবে বা পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাদের (আওয়ামী লীগ) পক্ষ থেকে যে কথা বলা হয়েছে এখন এখানে দুই দলকেই কী করণীয় তা নিয়ে টেবিলে বসতে হবে। সামনা-সামনি কথা বলতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন একটি গঠনমূলক সংলাপ। যা আমাদের নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান করে আসছেন।’
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আলোচনা-সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘তিনি (খালেদা) কী সংলাপ করতে চান, কী নিয়ে আলোচনা করতে চান আগে স্পষ্ট করতে হবে। তারপর আমরা সংলাপে বসব।’