জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : চট্টগ্রামের শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে এবার আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের ঘরে ঘরে আনন্দের রোল পড়েছে । ধানের মৌ মৌ গন্ধ ও সোনালী চাদরে আবৃত ধানের রং দেখে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের যান বাহনের যাত্রীদের ক্ষনিকের জন্য হলেও মন ভরিয়ে দেয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অকাল বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। কৃষকের ঘরে ঘরে চলছে নবান্নে প্রস্তুুতি । গত সপ্তাহ থেকে মনের আনন্দে গুমাই বিলের সোনালী ফসল কাটাঁ শুরু করেছে। চলছে পুরোদমে ধান মাড়াইযের কাজ। আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের মূল্য নিয়ে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে কৃষকের মাঝে। ধানের উচিত দাম না পাওয়াতে আমন চাষাবাদ করতে যে পরিমান খরচ হয়েছে তা পুষে না উঠার আশংকা করছে কৃষকরা।
উপজেলার চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউনিয়নের পাটান পাড়া গুমাই বিলের কৃষক আব্দুল কুদ্দুছ (৬০), নুরুল আবছার (৫৫), কদমতলীর মো. আজিম (৪০), রেজাউল করিম (৫০) জানান, এবছর অকাল বৃষ্টি ও বন্যা না হওয়ায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে। তারা ধানের বর্তমান মূল্য নিয়ে চরম হতাশায় ভূগছে বলে জানান।
উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কাজী রমিজ উদ্দিন জানান, এবছর হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪.৫ মেট্টিক টন আশা করা হচ্ছে। গুমাই বিলে আবাদকৃত ৩ হাজার হেক্টর চাষাবাদের মধ্যে ১১ হাজার ২৫০ মেট্রিকটঁন ধান উৎপাদন হবে বলে জানায়। বিগত বছরের সরকারী কেজি প্রতি ২৪ টাকা হিসেবে যার আনুমানিক মূল্য ২৭ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। সূত্রে আরও জানা গেছে, এবার গুমাই বিলসহ সমগ্র রাঙ্গুনিয়ায় আমন ধান উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। অনান্যবার কালবৈশাখী ঝড় ও অকাল বৃষ্টির কারনে গুমাই বিলের ফসল বিনষ্ট হয় । এবারে তা হওয়ার সম্ভানা না থাকায় কৃষকের ঘরে আমন ধান তুলতে কোন সমস্যা হবেনা।
চন্দ্রঘোনা পাঠান পাড়া গ্রামের কৃষক আবদুর কুদ্দুচ জানান, রাঙ্গুনিয়া কৃষি অফিসের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবারে আমি ৩ একর জমিতে আমন ধান চাষ করি । শুরু থেকে চাষাবাদে ভালভাবে যতœ নেওয়ায় পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। মধ্যখানে আবহাওয়ার পরিবেশ ভাল থাকায় এবারে চাষাবাদে অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুন ফলন হবে। শীতের আমেজে বিল থেকে সোনালী ধান কাঠতে নিজেকে উৎফুল্ল মনে হচ্ছে। দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদনকারী গুমাই বিলের দিগন্ত জুড়ে নাচছে সোনালী ধানের শীষ। তিনি অভিযোগ করেন, ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধানের দাম পাওয়া না গেলে কৃষকের পূনরায় ইরি চাষাবাদ করতে ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হবে। ধানের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানিযেছেন তিনি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলাউদ্দিন খোকন জানান, গত বছরের তুলনায় এবারে বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে কৃষকরা অনেকটা আতœবিশ্বাসী। আমরা সব সময় কৃষকদের সহযোগিতা করেছি। কৃষকরা আমাদের পরামর্শ কাজে লাগাতে আমন চাষে বাম্পার হযেছে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার জানান, এবারের বাম্পার ফলন অন্যান্যবারের চেয়ে রেকর্ড ছেড়ে যাবে। তিনি রাঙ্গুনিয়ার সব বিল ঘুরে দেখেছেন। তিনি সবখানেই সুপার বাম্পার ফলনে কৃষকের মূখে আনন্দ উল্লাস দেখতে পেয়েছেন বলে জানান। এ ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি মন্ত্রানালয়ের অবদানও যথেষ্ট বলে স্বীকার করেন তিনি।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, রাঙ্গুনিয়ায় আমন চাষাবাদে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা স্বস্তি প্রকাশ করছে। তারা যাতে ন্যায্য দামে ধান বিক্রি করতে পারে তার ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে।
ছবির ক্যাপশন- চট্টগ্রামের শষ্য ভান্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল থেকে আমন ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা।