শহিদুল ইসলাম;
‘অভিবাসনের ভবিষ্যৎ বদলে দাও, খাদ্য-নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াও’ প্রতিপাদ্য বিষয়ে আজ রাজশাহীর তানোরে বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০১৭ উপলক্ষ্যে বরেন্দ্র সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় উক্ত সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের নানা প্রান্ত থেকে কৃষকসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষের অংশগ্রহণে বরেন্দ্র অঞ্চলের খাদ্য নিরাপ্তা, নিরাপদ খাদ্য এবং খরা প্রবন বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিবাসন মোকাবেলায় বরেন্দ্র অঞ্চলের উন্নয়নে আলাদা বরাদ্দের দাবি করেন অংশগ্রহণকারীগণ।
বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্টান বারসিক ও বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির যৌথ আয়োজনে উক্ত সংলাপে অনুষ্ঠিত হয়। বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চল সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অংশগ্রহণকারিগণ বলেন- বরেন্দ্র অঞ্চলটি খাদ্য উৎপদনে স্বয়ংসম্পুর্ণ একটি এলাকা। এই এলাকার কৃষকগণ নিজেরা খাদ্যের যোগান দিয়ে দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখছে। কিন্তু দিনে দিনে নানা অপরিকল্পিত উন্নয়ন দুর্যোগে বরেন্দ্র অঞ্চলে খাদ্য উৎপাদন হুমকির মধ্যে ফেলছে । একই সাথে নিরাপদ খাবারের দিকগুলোও ভাবার সময় হয়েছে। বিলে পুকুর খনন করে প্রাণবৈচিত্র্য ধ্বংসহ স্থানীয় নানা পেশার মানুষ পেশাহীন হয়ে যাচ্ছে। আবার ভুগর্ভস্থ্য থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে বর্তমান কিছু কিছু এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার গুলো নষ্ট হওয়ায় সেগুলো থেকে পানি ব্যবহার করে আর শস্য ফসল চাষ করা যাচ্ছে না। আবাদি জমিগুলো পানির অভাবে ফসল চাষ করা যাচ্ছেনা। আবার বিলে পুকুর খনন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে জমিতে আর ধান চাষ করা যাচ্ছেনা। কাজের অভাবে , পেশার সংকটে মানুষ স্থানান্তর হচ্ছে । নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্য এলাকা বা শহরমূখী হচ্ছে। স্থানীয় অভিবাসনের পরিমান দিনে দিনে বেড়েই চলছে। মূলত খাদ্য এবং কাজের সন্ধানে প্রান্তিক মানুষরাই এর শিকার হচ্ছে বেশী। এর ফলে গ্রামসহ শহরেও দুর্যোগ বেড়েই চলেছে।

আবার দেখা যাচ্ছে ফসলে বা খাদ্যে অতিরিক্ত রাসায়নিক ও কীটনাশন ব্যবহার করার ফলে অনিরাপদ খাদ্যের যোগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্ষতিকর আগাছানাশক, কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবন যেমন সংকটাপন্ন হচ্ছে অন্যদিকে মৃত্যু ঘটে শৈবাল, অণুজীব থেকে শুরু করে নানা লতাগুল্ম, মাকড়সা, শামুক, কেঁচো, ব্যাঙ ও ছোট মাছের। এভাবে খাদ্য শৃংখল, পরিবেশ এবং বাস্তুসংস্থানের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে । যা এই অঞ্চলের স্থায়ীত্বশী উন্নয়নের একটি বড় অন্তরায় হয়ে দাড়াবে। আবার বাংলাদেশের জাতীয় বাজেটে দিনে দিনে কৃষি খাতে বরাদ্দ কম দেবার কারনে এই অঞ্চলের কৃষিও হুমকির মধ্যে পড়ার সম্ভাবনা আছে।
সংলাপে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকগণ দাবি করেন বাংলাদেশের খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যে অবদান রাখা অন্যতম একটির মধ্যে বরেন্দ্র অঞ্চল। দিনে দিনে জাতীয় বাজেটে কৃষিতে ভুর্তুকি কমে যাচ্ছে। যার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলের মতো বিশেষায়িত অঞ্চলের জন্যেও বরাদ্দ কমে গেছে। কৃষকগণ দাবি করেন এই অঞ্চলের কৃষি জমি, কৃষি এবং প্রান্তিক মানুষের অভিবাসন প্রতিরোধে অচিরেই জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ এবং এই অঞ্চলেরর উন্নয়নে জন্যে আলাদা বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্ত কৃষক ও বরেন্দ্র অঞ্চল জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির সভাপতি ইউসুফ আলী মোল্লা বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের পক্ষ্যে- উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানে পাশাপশি, কৃষকের জন্যে কৃষি বীমা, মৌসুম ভিত্তিক কৃষি রিন, সেচ, সার বীজসহ সকল ক্ষেত্রে প্রদেয় ভুতুকি বাড়ানোসহ সরাসরি কৃষকের নিকট পৌছানো, কৃষিতে জৈব প্রযুক্তি বাড়ানো ও সম্প্রসার, দুর্যোগ কালিন কৃষক ভাতার ব্যবস্থাসহ প্রবীণ কৃষকের জন্যে পেনশন স্কিম চালুর দাবি জানান।
বিশ্ব খাদ্য দিবস এবং বরেন্দ্র অঞ্চলের নিরাপদ খাদ্য, কৃষি জমি এবং নিরাপদ খাদ্যের দিকগুলো বিষয়ে মাঠ ভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ধারনা পত্র উপস্থাপন করেন। সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তানোর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্যাহ আল মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কতৃপক্ষের সহকারি প্রোকৌশলী মোঃ শরিফুল ইসলাম, তানোর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের প্রতিনিধি মোঃ আলতাফ হোসেন , তানোর উপজেলা পরিষেদের মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান বন্দনা রানী প্রামাণিক, তানোর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি অসীম কুমার সরকার, কৃষক মোঃ রফিুকুল ইসলাম, জীতেন্দ্র নাথ, মৎসজিবি মিজানুর রহমান, বারসিকের কর্মসূচী কর্মকর্তা জাহিদ আলী, অমৃত কুমার সরকার ।
উল্লেখ্য যে, উক্ত সংলাপ উপলক্ষ্যে বরেন্দ্র অঞ্চলের তানোর , গোদাগাড়ি এবং পবা উপজেরার কৃষক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ৬০ জন নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তাগণ তাঁদের সেবা এবং পরিসেবার দিকগুলো তুলে ধরেন। একই সাথে কৃষকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা রাখবেন বলে জানান।