অগ্রদৃষ্টি ডেস্ক: বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন জোট সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ ঢাকায় একটি সমাবেশ করেছে।
সমাবেশে জোটের নেতারা এসব অপরাধের জন্য বিরোধী কয়েকটি দলকে দায়ী করেছেন।
ইসলাম ধর্মের অজুহাতে ঘটানো এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং সরকার যথেষ্ট সরব নয় — বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের সন্দেহ- অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ১৪ দলীয় জোট এই প্রতিবাদ জমায়েতের আয়োজন করে।
ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলের এই গণ-সমাবেশ ছিল মূলত বাংলাদেশে সাম্প্রতিক অব্যাহত গুপ্তহত্যার প্রতিবাদে।
ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ মিছিল করে এসে জড়ো হয় এই সমাবেশে।
তাদের কয়েকজনের কাছে জানতে চেয়েছিলাম এসব গুপ্তহত্যা কারা ঘটিয়েছে বলে তারা মনে করেন।
একজন বলছিলেন, “জামাত শিবির যারা আছে তারাই এসব হত্যা করছে।” আরেকজন বলেন, “বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা করে জঙ্গি সংগঠনগুলো। জামাতা-শিবির-বিএনপি এরা মিলে।”
সমাবেশ শুরুর আগেই অনুমান করা গিয়েছিল, এই সমাবেশের বক্তারা মূলত বাংলাদেশে সম্প্রতি একের পর এক যে টার্গেট কিলিং হচ্ছে তার জন্য বিরোধী বিএনপি এবং তাদের শরিক জামায়াতে ইসলামকে দায়ী করবেন। কারণ সমাবেশ স্থলের মূল ব্যানারটিতেই লেখা ছিল, বিএনপি জামায়াত জোটের অব্যাহত গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস নৈরাজ্য, জঙ্গিবাদী তৎপরতা এবং গণতন্ত্র স্থিতিশীলতা ও দেশ-বিরোধী চক্রান্তের প্রতিবাদে গণ-সমাবেশ।
বাস্তবেও তাই ঘটলো, জোটের অধিকাংশ নেতাই বক্তব্য দিলেন কমবেশি একই ভাষায়, যেমনটি বিএনপি ও জামায়াত ইসলামীর দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, “যারা এই সরকারকে পতন ঘটানোর জন্য বারবার নানা রকম ষড়যন্ত্র নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে ব্যর্থ হয়, এদেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে, ব্যর্থ হবার পরে তারা আজকে বিদেশী নাগরিক হত্যা করার পরে ভেবেছিল এই সরকারকে পতন ঘটানো যাবে, সেই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবার পরে এখন গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।”

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশে কয়েকজন ব্লগারকে একই কায়দায় হত্যা করা হয়েছে
তবে বিএনপি বলছে, গুপ্তহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে সরকারী দল বিরোধীদের উপর এভাবে দায় চাপাচ্ছে।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভি বলেন, “এই সব জঙ্গিকে, এই সমস্ত গুপ্তহত্যাকে তারা রোধ করতে পারছে না। রোধ করতে না পেরে তাদের মনের ক্ষোভটা মেটানোর চেষ্টা করছেন হত্যাকাণ্ডের দায় দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের উপর চাপিয়ে দিয়ে।”
“গুপ্তহত্যা এবং গুপ্ত রাজনীতির সাথে যারা জড়িত ছিলেন তারা এখন এই ১৪ দলের সাথেই আছেন। তারা ৭২ থেকে ৭৫ সালে কিভাবে গুপ্তহত্যা করেছেন, অন্ধকারের মধ্যে রাজনীতি করেছেন, গণবাহিনী করেছেন, তাদের নিয়েই তো ১৪ দল। সুতরাং এটা দেশবাসী জানে কারা প্রকাশ্যে রাজনীতি করে আর কারা গুপ্ত রাজনীতি করে, গুপ্তহত্যার সাথে জড়িত আছে।”
বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে ব্লগার, প্রকাশক, অধ্যাপক, বিদেশী নাগরিক, ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষজনকে পরিকল্পিতভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে।
হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে একই পদ্ধতিতে এবং বেশীরভাগ ঘটনার পরেই কথিত ইসলামিক স্টেট বা আল কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখাকে এর দায় স্বীকার করতে দেখা যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের সরকার প্রথম থেকেই এই সংগঠন দুটির উপস্থিতি অস্বীকার করে আসছে। বরাবরই একটি অভিযোগ ছিল এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে দেশটির সরকার গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না।
গতমাসের শেষভাগে জুলহাজ মান্নান নামে একজন সমকামী অধিকার কর্মীকে হত্যার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব হত্যাকাণ্ডের জন্য বিরোধী বিএনপি-জামাত জোটকে দায়ী করেন।