জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া : রাঙ্গুনিয়ায় ফসলের ক্ষতিকর পোকা শনাক্তকরণে বিভিন্ন পদ্ধতির পরিবর্তে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে আলোর ফাঁদ। সহজে এ পদ্ধতি ফসলের মাঠে ব্যবহার করা যায় বলে কৃষকদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মাধ্যমে ফসলের মাঠে উপকারী ও অপকারী পোকা সনাক্ত করা যায়। আগে হাতজাল ব্যবহার করে পোকা শনাক্ত করা হতো। এটি সাধারণ কৃষকদের জন্য কিছুটা জটিল ছিল। কিন্তু এই পদ্ধতিতে কোন খরচ নেই বলে কৃষকদের মাঝে এটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
গত ২৪ অক্টোবর সন্ধায় রাঙ্গুনিয়া পৌরসভায় মধ্যম নোয়াগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা সড়কের পাশে তিন দিক থেকে তিনটি খুঁটিকে একসঙ্গে বেঁধে তাতে দুটি চার্জলাইট বেঁধে আলো জ্বালিয়ে দেন। বাতির নিচে একটি বড় গামলায় রয়েছে সাবানমিশ্রিত পানি। সেখানে কিছুক্ষণ পর পর ফসলের মাঠ থেকে পোকা এসে পড়ছিল। এভাবে আলোরফাঁদ স্থাপন করে পোকার উপস্থিতি নির্ণয় করে উপকারী ও অপকারী পোকা চিহ্নিত করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কারিমা আক্তার, পৌরসভা ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল আবছার জসিম, কৃষক এন্তাজুর রহমান, আবুল কদর, আব্দুল বারেক প্রমুখ। এর আগে ধানের জমিতে আলোর ফাঁদ স্থাপন করে পোকার উপস্থিতি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় চট্টগ্রাম জেলার ডিটিও (ডিএই) মো. গিয়াস উদ্দিন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কৃষিজমিকে বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। ব্লকগুলোতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পর্যায়ক্রমে আলোর ফাঁদের বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতন করছেন। এপর্যন্ত বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে কৃষি মাঠে তেমন ক্ষতিকারক পোকা ধরা পড়েনি বলেও জানান তারা। এসময় আরও জানা যায়, ধানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে বাদামি ঘাস ফড়িং। এ পোকার আক্রমণে ফসলের ২০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হয়। সেটি ধানগাছের গোড়া থেকে রস শুষে নেয়। এতে গাছ বাদামি হয়ে মরে যায়। এ পোকাটি আলোর প্রতি সংবেদনশীল। এটি এ ফাঁদে ধরা পড়ে বেশি।
পৌরসভার কৃষক এন্তাজুর রহমান জানায়, পূর্বে ক্ষতিকারক পোকা সনান্ত করতে হাতজাল ব্যবহার করতাম। কিন্তু এ পদ্ধতি অনেক সময় ক্ষতিকারক পোকাগুলো আড়ালে থেকে যেতো এছাড়াও বেশ জঠিল প্রক্রিয়া ছিল। কিন্তু আলোর ফাঁদ প্রক্রিয়ায় কম কষ্টে, বিনা খরচে ও সফলভাবে এটি পরীক্ষা করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন খোকন জানায়, আমন ধানের মাঠে ফসলের ক্ষতিকর পোকা নির্ণয় ও দমনে ‘আলোর ফাঁদ’ একটি সফল ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থাপনা। এ পদ্ধতি ব্যবহার করে চাষীরা কোনো খরচ ছাড়াই খুব সহজে ফসলের ক্ষতিকর পোকা শনাক্ত করে পোকার হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে পারবেন। এতে চাষীদের চাহিদা মাফিক ফসল উৎপাদনে পোকা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না এবং ফলনও ভালো হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মীরা ফাঁদে আটকা পড়া পোকা শনাক্ত করেন। পরে ধান রক্ষায় কোন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে, সে ব্যাপারে কৃষকদের পরামর্শ দেন। আলোর ফাঁদ স্থাপনের মাধ্যমে মূলত পোকামাকড়ের উপস্থিতি জরিপ করা হয়। মাঠ পর্যায়ে এটি কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
ছবির ক্যাপশন : রাঙ্গুনিয়ায় ধানের জমিতে আলোর ফাঁদ স্থাপন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন জেলার ডিটিও (ডিএই) মো. গিয়াস উদ্দিন ও কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার।