গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অনিয়ামের অভিযোগ তুলে মাঝপথে সড়ে দাঁড়ায় বিএনপি। নবম সংসদের বিরোধী দল বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও দলীয়ভাবে প্রথমবারের মতো হতে যাওয়া স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপির গণমাধ্যমে দেওয়া প্রত্যেকটি অভিযোগের অনুসন্ধান করেছি, তার একটাও সত্যতা খুঁজে পাইনি। আজকেও খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
“যা-ই হোক তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন ঠিক আছে। কিন্তু এমন কিছু করবেন না- যে নির্বাচনের মাঝখানে বয়কট করবেন। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই।”
সোমবারই এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে ‘বাধা’ এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতের’ অভিযোগ তুলেও পৌর ভোটের লড়াইয়ে থাকার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ক্ষমতাসীনরা ভোটকেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে দাবি করে তা প্রতিরোধে জনগণের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “নির্বাচন শতভাগ শান্তিপূর্ণ হবে। আমি শঙ্কার কিছু দেখছি না। আশা করি, আপনারা (বিএনপি) শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। নির্বাচন যাতে উৎসবমুখর হয় সেইভাবে নির্বাচন হবে। সুতরাং আসুন সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করি।”
মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন যে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া এ নির্বাচনের সাথে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে প্রশ্ন এনেছেন। এটা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার জন্য।
“আসলে উনি দেশকে ভালোবাসেন না। মুক্তিযুদ্ধকে কোনোদিনই ওনার অংশ মনে করে না। নিশ্চয়ই ওনার কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে।” গত ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, “আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।”
পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে খালেদা জিয়ার দাবি প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কখনও সেনা মোতায়েন হয়নি। “নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েন না করলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কয়েকজন কমিশনার পদত্যাগ করার হুমকি দিলেও সেনা মোতায়েন করা হয়নি। ওই নির্বাচন নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি। বর্তমান নির্বাচন ঠিক তেমনিভাবেই হবে।”
‘বিভিন্ন ইস্যু তুলে’ নির্বাচনকে বিতর্কিত করলে খালেদা জিয়ার লাভ কী- এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “নির্বাচনকে বিতর্কিত করলে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। তাই আসুন উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করি।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর বুধবারের এই নির্বাচন সরকারের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না দাবি করে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রতিটি পৌরসভায় জয়লাভ করলে বা ফেল করলেও সরকারের কিছু আসে-যায় না। এই নির্বাচনে সরকারকে হটানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকার পরিবর্তন হবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে।”
এসময় দেশবাসীর কাছে পৌর নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।