ডেস্ক নিউজ : নরসিংদী জেলা মনোহরদী উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়ন হরিনায়ণপুর নিজ গ্রামে শহীদ মাহবুবুল হক বাবলুর ৩১তম স্মরণ-সভা অনুষ্ঠিত।নরসিংদী’র কৃতি সন্তান দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠণ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সংগঠক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শহীদ মাহাবুবুল হক বাবলু’র ৩১ তম মৃত্যুবার্ষিকী দিবস পালিত হয়েছে।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের অসম সাহসীকতা আর বীরত্ব গাঁথায় তৎকালীন ছাত্রনেতা শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু স্মৃতি সংসদ’র উদ্যোগে মনোহরদী উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের হরিনারায়ণপুর সমাধী স্থল ফাজিল মাদ্রাসা মাঠে দিন-ব্যাপী স্মরণ-সভা, দোয়া, মিলাদ-মাহফিলসহ ব্যাপক গণভোজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।৯ মার্চ একাত্তরের রণাঙ্গনের মৃত্যুঞ্জয়ী যোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’র প্রাণপ্রিয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন শ্রেষ্ঠ সংগঠক নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা মেধাবী ছাত্র নেতা মাহাবুবুল হক বাবলু’র ৩১তম শাহাদাৎ বার্ষিকী’র স্মরণ সভা ও গণভোজে দেশের সর্বস্তরের জনগনের অংশগ্রহণে এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়।তৎকালীন ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের অসীম সাহসী মেধাবী ছাত্রনেতা’র স্মরণ সভায় বক্তরা বলেন, ৯০ দশকের পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নেতা শহীদ মাহাবুবুল হক বাবলুসহ তার ছোট ভাই সানাউল হক নীরু’র দেশপ্রেম মেধা-মনে সৃজনশীলতা অসীম সাহসীকতা সততা আর পরিশ্রমে সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ এই দুই সহোদর ছাত্রনেতার নেতৃত্বে কখনো সহযোদ্ধাদের আমরণ অনশন, কখনো স্লোগান মুখর রাজপথ কাঁপানো মিছিল, কখনো বারুদের আগুনে জ্বলে ওঠে কেঁপেছে পুরো ক্যাম্পাস।নীরু-বাবলু’র নেতৃত্বে সেদিন কেঁপেছিল স্বৈরাচারের মসনদ, প্রতিপক্ষের হৃদস্পদন.সামরিক বাহিনীর গোলাবারুদ। ভবিষ্যত ছাত্র নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত এই দুই সহোদর ছাত্রনেতা নৈতিকতার দিক থেকে ছিলেন আপোষহীন।স্মরণ সভায় বক্তারা তাদের বক্তব্যে বলেন, দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী স্বৈরাচারী শাসকের ভীত কাঁপানো দুই সহোদর ছাত্রনেতা কখনো সামরিক জান্তার বন্দুকের নলের সম্মুখে. কখনো জেলখানায় থেকেছেন দিনের পর দিন। নীতি-আদর্শে আপোষহীণ মেধাবী ছাত্রনেতা শহীদ বাবলু’কে দমাতে না পেরে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে সেদিন তাকে নির্মমভাবে প্রাণ হারাতে হয়েছে। তৎকালীন ছাত্র নেতৃত্বের দৃষ্টান্তকারী নীরু-বাবলু দেশের এমন ছাত্রনেতা ছিলেন, যাদের নামের উপর সারা বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠাণের ছাত্র-ছাত্রীসহ তরুণ প্রজন্মের অন্যতম আলোচিত শ্লোগান ছিল “উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরু, সবায় বলে নীরু-নীরু”, “ জিয়ার সৈনিক বাবলু ভাই , আমরা তোমায় ভুলি নাই ”।১৯৯০ সালে দীর্ঘ ৩৬ বছর কারাভোগকারী দক্ষিণ আফ্রিকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদী নেলসন ম্যান্ডেলা’র মুক্তিকালীন স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দীর্ঘ ৩৭ মাস একনাগারে কারাভোগ শেষে ছাত্র নেতৃত্বের দৃষ্টান্তকারী শহীদ বাবলু’র ছোট ভাই সানাউল হক নীরু মুক্তি লাভ করে। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র রাজনীতির নেলসন ম্যান্ডেলা খ্যাত সানাউল হক নীরু-বাবলু ৮০’র দশকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল রাজনীতির এক কিংবদন্তী। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যারা ইতিহাস গড়েছেন নীরু-বাবলু তাদের অন্যতম।
১৯৮২ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের তেজোদীপ্ত ও আপসহীন ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম নেতা, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কিংবদন্তী ছাত্রনেতা, ঢাকা ইউনিভার্সিটির দর্শন বিভাগের মেধাবী ছাত্র শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু একই ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের মেধাবী ছাত্রী লুৎফুন নাহার নাজু’কে ভালবেসে বিয়ে করেন। ১৯৮৭ সালের ১০ মার্চের ধর্মঘট বানচাল করতে তৎকালীন স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা ও তার সৃষ্ট নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ থেকে ফিরে আসা ছাত্র নামধারী বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট ৯ মার্চ মহসিন হলে প্রবেশ করে অতি নিকট থেকে গুলি করে নির্মমভাবে তাকে হত্যা করেছিল। ছাত্রনেতা শহীদ মাহবুবুল হক বাবলু নিহতকালীন তার সহ-ধর্মিণী লুৎফুন নাহার নাজু অন্তুসত্যা ছিলেন। ১৯৮৭ সালের ১৫ অক্টোবর নাজু’র ঔরশে নাহিন হক নামে একটি ছেলে সন্তান জন্ম নিলেও পরবর্তীতে সেও মারা যায় বলে স্মরণ সভায় কান্নাজড়িত কন্ঠে বক্তারা শহীদ বাবলু’র নিহত হওয়ার বিবরণ তুলে ধরেন।