চান মিয়া ছাতক (সুনামগঞ্জ):সুনামগঞ্জের ছাতকের সিংচাপইড় একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যাপক জালিয়াতি প্রতারণা, ঘুষ গ্রহন, জেএসসি পরীক্ষার রেজিষ্ট্রেশনে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের অপসারন দাবিতে এলাকাবাসী সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারও ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে গত ১৮জুলাই একটি লিখিত আবেদন করেন। কিন্তু একমাস অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারনে এর কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি। আবেদনে বলা হয়, গত ১৪জুন ২০১৬ইং দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায় প্রকাশিত একতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতি মোর্শেদ আহমদ চৌধুরীর নাম ব্যবহার করে তার মোবাইল নাম্বারের স্থলে ব্যাপক জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু হেনার মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। এতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে অনেক প্রার্থী মোবাইলে যোগাযোগ করলে আবু হেনা নিজেকে সভাপতি পরিচয় দেন এবং তাদের প্রার্থী মনোনীত আছেন বলে জানান। এভাবে প্রতারক আবু হেনা অন্যান্য প্রার্থীদেরকে এখানে আবেদন করার সুয়োগ থেকে বঞ্চিত করেন। পরে তিনি নিজেই প্রধান শিক্ষক পদে আবেদন করেন। এমনকি সভাপতি মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী মোটা অংকের টাকা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে আরো অভিযোগ করা হয়, প্রতারক আবু হেনা গত ইউপি নির্বাচনে “আনারস” প্রতিকে ধর্মপাশা উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছেন। কিন্তু কাউকে কোনো লিখিত দায়িত্ব না দিয়ে এবং নিয়ম মোতাবেক কোনো ছুটি না নিয়েই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন। এতে দীর্ঘদিন স্কুল থেকে অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পরিচালনা কমিটির সদস্যরা জানান, গত ৬জুন ২০১৬ইং স্কুলের জেনারেল কমিটিও এলাকাবাসীর সমন্বয়ে একটি সভা হয়। এতে সভাপতির কাছে বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাইলে তিনি দিতে রাজি হননি। তবে পরবর্তিতে হিসাব দিবেন বলে আশ্বস্থ করলেও অদ্যাবধি কোনো সভার ব্যবস্থা করে হিসাব দেয়া হয়নি। সভায় সিংচাপইড় ইউপি চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মোহাম্মদ সাহেল উপস্থিত ছিলেন।
তারা আরো জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি ২০১৫সালের নভেম্বরে ২০১৪সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন। আয়-ব্যয়ের হিসাবে ৯৫হাজার টাকার গড়মিল দেখা দেয়। সেই সময়ে প্রধান শিক্ষক ছিলেন দিলোয়ার উদ্দিন জাহিদও সহকারী ছিলেন আবু হেনা। এসময় আবু হেনা ২০১৪সালের অডিট কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসূযোগে তিনি ব্যাপক জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রওয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া আবু হেনা স্কুলে বিলম্বে আসা, অনুপস্থিতি, রাজনীতি, দলাদলি ও কোন্দলসহ এলাকাবাসীকে বিভক্তি করে নিজের স্বার্থ হাসিলে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। সে সভাপতিকে কৌশলে ম্যানেজ করে হাতিয়ে নিচ্ছে স্কুলের লক্ষ লক্ষ টাকা। জানা গেছে, প্রতারক আবু হেনা আজমত আলী, মল্লিকপুরও হাজি কমর আলী হাইস্কুলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্টানে থাকাকালিন এলাকায় গ্রুপিং সৃষ্টি, টাকা আত্মসাত, জালিয়াতি প্রতারনা, প্রশ্নপত্র বিক্রিসহ তার বিরুদ্ধে দূর্নীতি অপকর্মের ব্যাপক ছিল। হাজি কমর আলী হাইস্কুলে ১৫দিনের প্রধান শিক্ষক সেজে জেনারেল ফান্ড থেকে সে হাতিয়ে নেয় দেড় লক্ষাধিক টাকা। এখানে প্রশ্নপত্র বিক্রির ঘটনা নিয়ে করছখালী তালুকদার বাড়ির জনৈক শিক্ষার্থী আবু হেনাকে জুতা পেটা করে। এভাবে অন্যান্য প্রতিষ্টানে প্রশ্নপত্র বিক্রি ও টাকা আত্মসাতের বিষয় নিয়ে তাকে ব্যাপকভাবে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। অবশেষে ছৈলা-আফজালাবাদ ইউপির বাংলাবাজার স্কুলে যাবার অপচেষ্টা করলে সুচতুর এলাকাবাসীর তীব্র আন্দোলনের মূখে তার সে আশা দূরাশায় পরিনত হয়। তবে সভাপতি নিজেও টাকা আত্মসাতে জড়িত নন একথা কেউ বিশ্বাস করতে পারছেনা। তিনি আবু হেনাকে প্রধান শিক্ষক করে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সভাপতি মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয় হিসাব সূযোগ করে অবশ্যই দেয়া হবে। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এপদে প্রার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে জানার থাকতে পারে বলেই তার নামের নীচে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে আবু হেনার নিয়োগে টাকা নেয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। তবে আবু হেনার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মৌলুদুর রহমান জানান, এলাকাবাসীর প্রথম অভিযোগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতির নামের নীচে আবু হেনার মোবাইল নাম্বার থাকার এটি বাািতল করে পূনরায় নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন ব্যস্ততার জন্যে আরেকটি অভিযোগের সরেজমিন তদন্ত করা হয়নি। শীঘ্রই স্কুলে গিয়ে এটিও তদন্ত করে আসবেন বলে জানান।